বিবর্তন ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনও অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে মাঠ বা বাসাবাড়ির ছাদ থেকে ফানুস ওড়ানো। সর্বশেষ থার্টি ফার্স্ট নাইটেও রাজধানীর আকাশে উড়তে দেখা গেছে বিপুল পরিমাণ ফানুস। তবে এই ফানুস ওড়ানোয় এবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ বলছে, অনেক সময় আগুন নিভে যাওয়ার আগেই ফানুস নিচে পড়ে যায়। রাজধানী শহর ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এবং এই শহরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় ফানুস থেকে অগ্নিকাণ্ড ও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সে কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাজধানী ঢাকায় ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফানুসে থাকা কেরোসিন বাতি না নিভেই মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় পড়ছে। এতে আগুন লাগাসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তাজনিত হুমকি তৈরি হচ্ছে। ফানুস ওড়ানো অব্যাহত রাখলে যেকোনও সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। সে কারণে ফানুস ওড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।
শনিবার ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি বিষয়ে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা বলছেন, ফানুস ওড়ানোর সংস্কৃতি খোলা জায়গা ও পাহাড়ি এলাকার। সেখানে এগুলো ওড়ানো যায়। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার জন্য ফানুস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম কে বলেন, ‘এ বছর রাজধানীতে অনেক ফানুস আকাশে ওড়ানো হয়েছে। এর অনেকগুলো না নিভেই জ্বলন্ত অবস্থায় বাসাবাড়ির ওপরে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সড়ক ও বৈদ্যুতিক লাইনে পড়েছে। এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এসব ফানুস থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারত। তাই ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া, মহানগরীর নিম্ন আয়ের মানুষেরা বস্তিতে বসবাস করেন। বহুতল ভবন থেকে ফানুস ওড়ানো হলে এসব ফানুস জ্বলন্ত অবস্থায় বস্তিতে পড়লে তা থেকে বস্তিতে আগুন ধরে যেতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এর আগে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় এসব জ্বলন্ত ফানুস পড়েছে। ফলে ফানুস এই শহরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’
এদিকে রাজধানীর ফানুস বিক্রেতাদেরও ফানুস বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্মকমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, ‘ফানুস ওড়ানোর পাশাপাশি বিক্রি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। বিক্রেতারা ডিএমপির অনুরোধে সাড়া না দিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফানুস ওড়ানো বন্ধের পেছনে নাশকতার কোনও আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘নাশকতার কোনও পরিকল্পনার কথা আমাদের জানা নেই। তবে কেউ যদি এমন পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে তাদের প্রতিহত করা হবে।’
এদিকে, ফানুস ওড়ানোর সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের আচার সম্পৃক্ত বলে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বৌদ্ধদের ধর্মীয় এই আচারের বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক হয়নি। যদিও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধারণা করছেন,তারা পুলিশের অনুমতি নিয়েই ফানুস উড়িয়ে থাকেন বলে তারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত সংবাদমাধ্যম কে বলেন,‘আকাশে ফানুস ওড়ানো বৌদ্ধদের ধর্মীয় একটি রীতি। আমাদের সংবিধানে সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জুজুর ভয়ে যদি ফানুস ওড়ানোসহ সব ধরনের অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেই, তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তি আরও সুযোগ পাবে।’ ফানুসে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনান্দ প্রিয় সংবাদমাধ্যম কে কে বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ গৃহত্যাগের সময় তার নিজের সুন্দর চুল কেটে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমরা মনে করি, তার চুল স্বর্গে রয়েছে। এজন্য প্রবারণা পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমার দিন ফানুস ওড়ানো হয়। তবে অনেক বিধি-বিধান মেনে ফানুস ওড়াতে হয়, এটা যখন-তখন মনের আনন্দে ওড়ানোর বিষয় নয়।’
এই বৌদ্ধ নেতা বলেন, ‘আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় ফানুস উড়িয়ে থাকি। সে সময় পুলিশের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়। আজকের নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য নয়। এটা যাদের নিষেধ করেছে তাদের বিষয়। আমরা এ বিষয়ে কোনও কথা বলবো না।’
তবে বৌদ্ধরা এটাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। কারো ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। আবার অনেকে ভোটের রাজনীতি হিসেবে দেখছেন।
আসল ঘটনা যাই হোক এরকম হতকারী সিদ্ধান্তে বৌদ্ধরা হতবাক।