২০১৫ সালে সন্তোষকে পিপিএম ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
চৌকস এই কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের (পিপিএম) জন্য মনোনীত হয়েছেন সন্তোষ কুমার চাকমা।সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটে উপ-পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালেও তিনি পিপিএম পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এবং ২০১৭ সালে পেয়েছেন আইজিপি ব্যাচ
দ্বিতীয়বার পিপিএম প্রাপ্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, যে কোন স্বীকৃতিই কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই পিপিএম আমার জীবনের সেরা অর্জনগুলোর বড় স্বীকৃতি। চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে আমি মানুষের সেবা করে যেতে চাই।চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে জেলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম- যে কোন স্থানে চাঞ্চল্যকর সূত্রবিহীন কোন অপরাধ হলেই ডাক পড়ে যে পুলিশ কর্মকর্তার তিনি সন্তোষ কুমার চাকমা। যতবড় ঘটনাই হোক, ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই কর্মকর্তা।
সদ্যসমাপ্ত বছরে সন্তোষ কুমার চাকমা বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্পর্শকাতর একটি পরিস্থিতিরও সামাল দিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলায় গত বছরের জুনে এক যুবলীগ নেতা খুন হওয়ার পর হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাঙামাটির লংগদুসহ আশপাশের এলাকা। হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্নমুখী সংঘাতের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, এসময় খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ শরণাপন্ন হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। দায়িত্ব পড়ে পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক সন্তোষ চাকমার উপর।
টানা সাতদিন চট্টগ্রাম নগরী, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্তোষ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়। হত্যকাণ্ডে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করে সন্তোষ জানান, সামান্য একটি মোটর সাইকেলের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। শান্তি ফিরে আসে পাহাড়ে।
২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শান্তিনিকেতন বাজারে নৈশপ্রহরী তপন বিশ্বাস নৃশংসভাবে খুন হন। কয়েকটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবসহ মূল্যবান মালামাল লুট হয়। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নগরী এবং জেলা ও রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেন সন্তোষ কুমার চাকমা। ডাকাতরা খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
বছর শেষে গত নভেম্বরে নগরীর একটি বাসা থেকে নির্মম খুনের শিকার আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সহকর্মী খুনের ঘটনায় রাজপথে নামেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা। আদালতও বর্জন শুরু করেন। কিন্তু দুইদিনের মধ্যে বাপ্পীর স্ত্রী রাশেদাসহ হত্যায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতারের মাধ্যমে খুনের নেপথ্য কাহিনী উন্মোচন করে পরিস্থিতি সামাল দেন সন্তোস কুমার চাকমা।
এরপর সম্প্রতি কর্ণফুলী থানা এলাকায় চার নারী ধর্ষণের পর যে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তিন আসামি গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতিও সামাল দিয়েছে পিবিআই।
২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর নগরীর বন্দর থানা এলাকায় এক প্রবাসীকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে ছিনতাইয়ের চার ডাকাতকে গ্রেফতার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায়ে সক্ষম হয় পিবিআই।
ওই বছরের ১৪ অক্টোবর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে অসুস্থ মাকে দেখতে এসে খুন হন প্রবাসী নাছির উদ্দিন। খুনীর কোন হদিস ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষীও ছিল না। শুধুমাত্র তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করতে সক্ষম হয় পিবিআই।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সুলতান আহম্মদ চৌধুরীর বড় ছেলে জালাল উদ্দিন সুলতানের মরদেহ উদ্ধার হয় ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর নগরীর আগ্রাবাদে। সূত্রবিহীন এই ঘটনার মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই জানায়, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন জালাল।
২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি নগরীর বাকলিয়ায় খাল থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে উদ্ধারের ঘটনার নেপথ্য কাহিনীও উদঘাটন করেছে পিবিআই।
চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনার মধ্যে অধিকাংশের তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম মেট্রো) মো. মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, যে কোন মামলা যেগুলো একেবারে ক্লু-লেস সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সন্তোষের উপর নির্ভর করি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্তোষ দ্রুত মামলাগুলো সমাধান করতে পারে। সন্তোষ একজন চৌকস এবং পেশাদার কর্মকর্তা। তার পিপিএম প্রাপ্তি পিবিআই পুরো টিমের জন্যই সম্মানজনক।
এর আগে গত বছরের আগস্টে পিবিআইয়ের ৪৩ টি ইউনিটের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রো সেরা ইউনিট হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সন্তোষ কুমার চাকমা ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। দেড় বছর আগে সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিট থেকে পিবিআইয়ে যোগ দেন সন্তোষ।
সিএমপিতে কর্মরত থাকার সময় জঙ্গিবিরোধী একাধিক অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় এসেছিলেন সন্তোষ।