ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী:
আজ নতুন দিন, নতুন বছর, পহেলা জানুয়ারী ২০১৮ইং এবং আজ শুভ পূর্ণিমা তিথি। ২৫৬১ বুদ্ধবর্ষের শুভ পৌষ পূর্ণিমা। উপোসথ তিথির পূণ্যবার্তায় আগমন হল নতুন বছর। সে প্রেক্ষিতে এ নতুন বছর, নতুন দিন খুবই অর্থবহ। শুরুতে তাই সকলের প্রতি এ মহান পূণ্যময় পূর্ণিমা তিথি ও নতুন বছরের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা-পূণ্যাভিনন্দন এবং শুভ প্রার্থনা, পূর্ণিমা ও নতুন বছরের পূণ্যালোকে উদ্ভাসিত হোক সকলের জীবন; দূর হোক সকল অন্ধকার-অজ্ঞানতা।
পৌষ পূর্ণিমা বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ শ্রীলংকার জন্য বড়ই গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণিমা তিথি। বুদ্ধের প্রথম শ্রীলংকা গমণ এবং শান্তি পুনঃস্থাপন এ পূর্ণিমার বিশেষত্ব। পৌষ পূর্ণিমা শ্রীলংকায় “দুরুথু পয়া ডে” নামে আখ্যায়িত।
মহামানব গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্বলাভের নয়মাস পর শুভ পৌষ পূর্ণিমা তিথিতে প্রথমবারের ন্যায় শ্রীলংকার উভা প্রদেশের “মাহিয়ঙ্গণা” নামক গ্রামে গমণ করেন। বুদ্ধের এই গমণ বা ধর্মযাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সেদেশে যুদ্ধ-সহিংসতা দমন পূর্বক শান্তি পুনঃস্থাপন করা। সেসময় মহাকারুণিক বুদ্ধ লঙ্কা দ্বীপের গুণ দর্শনে যক্ষগণকে (যক্ষরূপী মনুষ্য বলেও কোথাও কোথাও উল্লেখ রয়েছে) বিতাড়িত করে শান্তি পুনঃস্থাপন করেছিলেন।
শ্রীলংকার ইতিহাস সমৃদ্ধ “মহাবংশ” গ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে। এমনকি নিম্নোক্ত “মাহিযঙ্গণ চৈত্য বন্দনা” ও বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ ও জার্নালে আমরা বুদ্ধের প্রথম লঙ্কা দ্বীপে গমণ ও ধর্ম শাসন প্রতিষ্ঠা কল্পে যক্ষদিগকে দমনের ইতিহাস দেখতে পায়।
লঙ্কায যত্থা পঠমং সুগতো নিসজ্জ যক্খে দমেসে নিজ সাসন পালনায়,
ঠানে তহিং নিহিত কুন্তল গীব ধাতুং, বন্দামি সাধু মহিঙ্গযঙ্গণ থুপরাজং।
বঙ্গার্থঃ ভগবান বুদ্ধ প্রথমে লঙ্কায় গমণ করে যে স্থানে উপবেশন করেছিলেন এবং স্বীয় ধর্ম শাসন প্রতিষ্ঠা মানসে যক্ষদিগকে দমন করেছিলেন, সেই মাহিয়ঙ্গণা স্থানে স্তুপ নির্মাণ করে ভগবানের মনোহর অক্ষধাতু নিধান করা হয়েছিল। আমি সেই মাহিয়ঙ্গণা স্তুপরাজকে কায়-মন-বাক্যে বন্দনা করছি।
এছাড়াও, সেসময় বুদ্ধের ধর্মাভিযান প্রত্যক্ষ করতে উপস্থিত থাকা “সুমনা সামান দেবতা” বুদ্ধগুণে মুগ্ধ হয়ে ভক্তিযুত চিত্তে করজোরে প্রণাম নিবেদন পূর্বক বুদ্ধের অবর্তমানে পূজা-বন্দনা কল্পে পূজার্ঘ কোন সামগ্রী প্রার্থনা করলে বুদ্ধ স্বীয় মস্তক হতে একগুচ্ছ কেশ ধাতু প্রদান করেন। পরবর্তীতে সেই কেশ ধাতুও মাহিয়ঙ্গণা চৈত্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উল্লেখ্য, মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ লঙ্কা দ্বীপের (শ্রীলংকা) প্রতি অনুকম্পা পরবশতঃ হয়ে এবং ভবিষ্যতে বুদ্ধের ধর্ম প্রতিস্থাপিত ও ভিক্ষু সংঘের নিরাপদ স্থান হবে দেখে তিন বার গমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথমবার, যক্ষদিগকে বিতাড়িত করেন। দ্বিতীয়বার, নাগদের অনুকম্পা পরায়ন হয়ে যুদ্ধ নিবারনার্থে গমন করেছেন এবং তৃতীয়বার, সুবর্ণময় পল্লঙ্কের জন্য লঙ্কা দ্বীপে পার্বত্য নাগ ও সমুদ্র নাগ সহোদর ও চুলোদর যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন দেখে যুদ্ধ নিবারনার্থে গমণ করেছিলেন।
পরিশেষে বলব, আজ যেহেতু পূর্ণিমা তিথি। তাই নতুন বছরের এ নব দিনে উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালন পূর্বক নব সূচনা করতে পারেন। এতে নিজের শীল পারমিতা পূর্ণতা লাভের পাশাপাশি প্রশান্তি ও উৎকর্ষতায় জীবন হয়ে উঠবে মঙ্গলময়।
_()_সাধু সাধু সাধু _()_
বুদ্ধ শাসনের জয় হোক।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।