বিবর্তন ডেস্ক: মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ জন্ম নিলেও দেশের বর্তমান অবস্থায় অন্যায়-অবিচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মানুষ এখন নগণ্য। তাই এখন সময় এসেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশের তারুণ্যই পারবে বোধের জাগরণ ঘটিয়ে দেশ সঠিক পথে পরিচালিত করতে।গতকাল চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বীর চট্টগ্রামে বুকের রুদ্ধ দুয়ার ভেঙে তারুণ্যের বোধের জাগরণ’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একদল তরুণের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ বাঙালি মূলনিবাসী ইউনিয়ন নামে একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. একে আবদুল মোমেন। প্রধান বক্তা ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শ্যামল দত্ত। বাংলাদেশ বাঙালি মূলনিবাসী ইউনিয়নের আহ্বায়ক প্রকৌশলী পুলককান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব সরিৎ চৌধুরী সাজু। তারুণ্যের জাগরণের প্রস্তাবনা পাঠ করেন অনুপম বড়ুয়া পারু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তারুণ্যের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আলোকিত দেশ গড়ে তুলতে হবে, অসাম্প্রদায়িক-মানবিক সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। আমি আশাবাদী। বাঙালি বীরের জাতি। তারুণ্যের সম্মিলিত জাগরণের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব। বাঙালি জাতিসত্তায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বর্তমান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধে তারুণ্যের বোধের জাগরণ করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট চলছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হয় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের এত বছর পরও আমাদের আত্মপরিচয়ের সংকট নিয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আমরা অসাম্প্রাদায়িক দেশ গড়ে তুলতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় অর্জিত ’৭২-এর সংবিধান থেকে ধীরে ধীরে সরে এসেছে এই দলটি। সংবিধান কাঁটাছেড়া হয়েছে অনেকবার। সেখানে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই বোধের জাগরণের সংগ্রামটি অনেক কঠিন। পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল লেখা বাদ দেয়া হচ্ছে। এখন বাঙালি জাতিসত্তা মুখ্য নয়, মানুষের ধর্ম-পরিচয় মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হচ্ছে। ’৪৭-এ দেশ ভাগের সময় এ অঞ্চলে প্রায় ২৯ শতাংশ সংখ্যালঘুর বসবাস ছিল আর এখন মাত্র ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তথাকথিত সুশীল সমাজ শুধু প্রগতিশীলতার মুখোশ ধরে বসে রয়েছে। অন্যায়-অবিচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মানুষ এখন নগণ্য। তাই এখন সময় এসেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশের তারুণ্যই পারবে বোধের জাগরণ ঘটিয়ে দেশ সঠিক পথে পরিচালিত করতে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশ বাঙালি মূলনিবাসী ইউনিয়ন সংগঠনটি শতভাগ বাঙালিয়ানা বিপ্লবী চেতনায় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জাগরণের একটি প্রতিষ্ঠান। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আর এর মূল চালিকা শক্তি ছিল তরুণরা। তাই সেই তারুণ্যকেই আবার মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আলোচনা সভার আগে মুসলিম ইনস্টিটিউট চত্বরে বেলুন ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ড. একে আবদুল মোমেন, প্রধান বক্তা শ্যামল দত্তসহ সংগঠনের নেতা সংগঠকরা। এরপর ধলঘাট বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টকে মাস্টারদা সূর্যসেন স্বর্ণপদক প্রদান করা হয় এবং মূলনিবাসী স্মারক উন্মোচন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল জাগরণের গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনা।