বিবর্তন ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তার সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামী জীবনের ধারাবাহিকতায় কত কষ্টই না করেছেন! শত দুর্ভোগের পাশাপাশি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গ্রেফতার এড়াতে তিনি আজ এখানে তো কাল সেখানে-অর্থাৎ বিভিন্নস্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তেমনি একাধিক ঘটনার মধ্যে একটির সাক্ষী কক্সবাজারের বৌদ্ধ বিহার। ঐতিহাসিক আগরতলা ‘ষড়যন্ত্র’ মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে যখন ওয়ারেন্ট বের হয়, তখন তিনি একবার আত্মগোপনে এসে কক্সবাজারে তিন রজনী অবস্থান করেছিলেন। তার সেই অবস্থানস্থল ছিল স্থানীয় বাহারছড়া বৌদ্ধ বিহার।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য অঞ্চল হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর যে আগমন ঘটেছিল, তা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং স্বনির্ভর জাতি গঠনের উদ্যোগ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতিবার তার আগমন ছিল দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ব্যাপক উন্নয়নে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে সমুদ্ররানী কক্সবাজার আরও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে বিদেশী ভ্রমণপিপাসুদের আগমন বৃদ্ধি পেত। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট খুনীরা নির্মমভাবে সপরিবারে তাকে হত্যা করায় উন্নয়নের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে কক্সবাজার। ১৫ আগস্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ইতিহাস বিকৃত করতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বঙালী জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সেইভাবে স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতি জাদুঘর বা স্মৃতি সংরক্ষণমূলক কোন কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কক্সবাজারে আত্মগোপনে এসে প্রথমে তিন রজনী অবস্থান করেছিলেন বাহারছড়া বৌদ্ধ বিহারে। ওই ক্যাংটিও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ পর্যন্ত। তৎকালীন ওই ক্যাংয়ের সেবক হিসেবে দায়িত্বে থাকা অংছলা রাখাইন জনকণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।
শহরের বড় বাজার পশ্চিম রাখাইন পাড়ার তুয়াইং মং রাখাইনের পুত্র অংছলা রাখাইন (৬৭) বলেন, ১৯৬৮ সনে রাত আনুমান ১১টায় তিনজন লোক বাহারছড়া ক্যাংয়ে (মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ রাখাইন মন্দির) আসেন। ওই ক্যাংয়ের প্রধান ভান্তে ওছেন ভিমা রাখাইনের সঙ্গে আলোচনা করে দুইজন চলে গেলেও তারা ভান্তের কাছে রেখে যান একজনকে। ভান্তে ওছেন ভিমা রাখাইনের পাশে একটি আলাদা কক্ষে অবস্থান করেন তিনি। অংছলা রাখাইন আরও বলেন, একদিন পর রাতে ভান্তে আমাকে ডেকে হাতে পাঁচ টাকার নোটসহ একটি স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে দিতে বলেন। আমি বাজারের ভেতর শফিক ফার্মেসিতে যাই। তৎকালীন বড় বাজার শফিক ফার্মেসি থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সার ওষুধ কিনে ভান্তের কাছে দিলে তিনি অবস্থানকৃত মেহমানকে পৌঁছে দেন। আহমদিয়া হোটেল থেকে বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে যাওয়া দুইব্যক্তির মধ্যে শুধু আহমদ কবির সওদাগর (প্রয়াত) ব্যতীত তখনও কেউ জানতেন না যে- তিনিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অংছলা বলেন, ভান্তেকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, একজন লোক বিপদে পড়ে এখানে এসেছেন, পরে চলে যাবেন। তিন রাত অবস্থানের পর ঠিকই তিনি (বঙ্গবন্ধু) চলে যান অন্যত্র। নিরাপত্তার খাতিরে আহমদ সওদাগরের পরামর্শে ইনানী চেংছড়ি গ্রামে ফেলোরাম চাকমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।
সম্প্রতি ফেলোরাম চাকমার বাড়িটি সংরক্ষিত স্থান হিসেবে ঘোষণা ও ফলক উন্মোচন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট বীরেন শিকদার। বঙ্গবন্ধুকে সেদিন যে দু’জন ইনানীর ছেংছড়ির ফেলোরাম চাকমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তেল গ্যাস অনুসন্ধানকারী বিদেশী কোম্পানির ড্রাইভার আব্দুর রহমান ড্রাইভার, আহমদ কবির সওদাগর এবং যে বৃদ্ধা রান্না করে খাওয়াতেন সেই ছখিনা বেগম মারা গেছেন।