1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন

সুস্থ জীবন-যাপনে বৌদ্ধধর্মের ধ্যানের গুরুত্বঃ একটি পর্যালোচনা

প্রতিবেদক
  • সময় রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৭৯০৪ পঠিত

রোমানা পাপড়ি:

ভূমিকাঃ
বৌদ্ধধর্ম হলো পরম শান্তির ধর্ম। মানবতার মূর্ত প্রতিক ভগবান গৌতম বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। যুগে যুগে মানব জাতিকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে পরিচালিত করার জন্য বরেণ্য মানুষের আর্বিভাব হয়, তেমনি আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে কপিলাবস্তুর নিকটবর্তী লুম্বিনী উদ্যানে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গৌতমবুদ্ধের জন্ম গ্রহণ করেন। মহামানব বুদ্ধ একজন এমন সংগঠক ছিলেন যিনি মানবের দুঃখমুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি জ্ঞানের আলো নিয়ে মানুষের মঙ্গলের জন্য এবং সংসার জীবন সুখময় ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে উপদেশ প্রদান করেছেন।

ধ্যান শব্দের ব্যুপত্তিগত অর্থ ও প্রামাণ্য সংঙ্গাঃ
‘ধ্যৈ চিন্তায়াম’ ‘ধ্যৈ’ ধাতুর অর্থ চিন্তা করা। এই ‘দ্যৈ’ ধাতু বা করণে অনট প্রত্যয় যোগ করে ধ্যান শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে।‘ধ্যায়েতে ইতি ধ্যানম’ অর্থাৎ ধ্যান মানে চিন্তন বা চিন্তা। এর ব্যুপত্তিগত অর্থ হলো চিন্তা, গুন, রূঢ় অর্থাৎ প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে গূঢ় চিন্তা বা চিত্ত প্রসিদ্ধ। প্রাচীন সাহিত্যে ‘দ্যা ও ধ্যান’ একই জিনিস। পরবর্তীসময়ে সংস্কৃত ও বৌদ্ধ সাহিত্যে ‘ধ্যা’ শব্দটি লোপ পেয়ে ‘ধ্যান’ শব্দটি ব্যবহার হয়। ধ্যান, সমাধি, সাধনা, ভাবনা, সমাধি, আরাধনা একই পারিভাষিক শব্দ। সংস্কৃতে বলে ‘ধ্যান’, পালিতে বলে ‘ঝান’, জাপানিতে বলে ‘জেন’ ও ইংরেজীতে বলে Meditation বলা হয়। সাধারণ অর্থে ধ্যান বলতে বোঝায় মন:সংযোগ বা মানসিক চর্চাকে বুজায়। কোনো নির্দিষ্ট বস্তু বা র্কাপনিক কিছুকে অবলম্বন করে মনে মনে ভাবনা করা বা চিন্তা করাকে সাধারণত ধ্যান বলে। আত্মদর্শনের নামই ধ্যান। সহজ ভাষায়, নিজেকে চেনা, নিজের ভিতরের শক্তিকে সাধনার মাধ্যমে বোঝার যে প্রয়াস তাকেই ধ্যান বলে। বৌদ্ধরা ধ্যানকে বলে সাধনা।
Of Buddhist wisdom গ্রন্থে why Meditation প্রবন্ধে Bhikkhu Piyanada e‡j‡Qb “Meditation is very simply concentreated awarness of ind fulness.” What Buddhists Beleive গ্রন্থে বলেছেন, “ Meditation is the psychological approach to mental culture, training, and purification.
বৌদ্ধধর্মে ধ্যানের প্রকারভেদঃ
বৌদ্ধ ধর্মে আমরা দু প্রকার প্রধান ধ্যান সাধনা পদ্ধতি দেখতে পাই।
১. সমথ ধ্যান বা ভাবনা- সমথ বা শমথ একটি পালি শব্দ। এর অর্থ সমাধি বা প্রশান্তি। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মন সম্পূর্ণ শান্ত থাকে, একস্থানে কেন্দ্রিত থাকে। এ ধ্যান শীল, সমাধির পরিপূরক। এটি লৌকিক সাধনা। সমথ ধ্যান অনুশীলনে তিন প্রকার সুখ আসে। যথাঃ ১. বর্তমান জীবনকে সুখ-শান্তি, আনন্দ উৎফুল্ল করে তোলে। ২. অনুকুল পুনজন্ম হয়। ৩. মনের সমস্ত হিংসা-দ্বেষ, মোহ, লোভ ও তৃষ্ণা চলে যায়। ব্রহ্মবিহার অর্থাৎ মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা চর্যা করার মাধ্যমে এ ধ্যান লাভ করা সম্ভব।

২.বিদর্শন ধ্যান- বিদর্শন শব্দের অর্থ হল ‘বিপস্ন’। বি+দর্শন=বিদর্শন। বিশেষভাবে বা যর্থাথভাবে দর্শনই বিদর্শন। এটা সত্যের সাধনা। সত্যকে ভ্রান্ত দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করার দর্শন, যার অপর নাম মিথ্যাদৃষ্টি। জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ জীবনকে যিনি অহংবোধ নিয়ে চিন্তা করেন তার দৃষ্টি সঠিক নয়। বিদর্শন হচ্ছে সম্যক জ্ঞান, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিমুক্তি। যাবতীয় সংস্কার ( সত্ত্ব ও বস্তু) অনিত্য; এতএব জগৎ-জীবন দুঃখময়। এ সত্য যিনি উপলদ্ধি করবেন তিনিই বিদর্শন সাধক। বিদর্শন লোকত্তর সাধনা।

বৌদ্ধধর্মে ধ্যানের বিষয়বস্তুঃ
বৌদ্ধধর্মে ধ্যান করতে হলে কতগুলো বিষয় স্মরণ করতে হয়। এককথায় অনুস্মৃতি বলা হয়। যথাঃ ১. বুদ্ধের স্মরণ, (বুদ্ধের নয় প্রকার গুণ গভীর মনোযোগের সাথে পুনঃপুনঃ স্মরণ করা) ২. ধর্মের স্মরণ, (ধর্মের ছয় গুণ স্মরণ করা) ৩. সংঘের স্মরণ, (সংঘের নয় গুণ ভাবনা করা) ৪. শীল বা সদাচার, ৫. উদারতার স্মরণ, ৬. মৃত্যুর স্মরণ ৭. দেহ সম্বন্ধে সজাগতা, ৮. নিশ্বাস প্রশ্বাস সম্বন্ধে সজাগতা ও ৯.শান্তির স্মরণ। এভাবে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর ভিত্তি করে স্মৃতি উপস্থাপন করে যে ধ্যান হয় তাকে আনাপানা স্মৃতি বলা হয়। তাই ধম্মপদে বলা হয়েছেঃ

“ ফন্দনং চপলং চিত্তং দুরকখং দুন্নিবারয়ং
উজুং করোতি মেধাবী উষুকারো’ব তেজনং।”

অর্থাৎ, ইষুকার যেমন তীরকে সোজা করে প্রস্তুত করে, জ্ঞানী ব্যক্তিরাও ঠিক তেমনি নিজের স্পন্দিত, চঞ্চল, দুরক্ষ্য এবং দুর্ণিবার চিত্তকে সরল করেন।

বৌদ্ধধর্মে ধ্যানের ইতিহাসঃ
বৌদ্ধ ধর্মমতে ধ্যান বা মেডিটেশন হলো নির্বান প্রাপ্তির উপায়।‘ধ্যান’ কথাটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব রয়েছে। ভগবান গৌতম বুদ্ধ রাজকীয় পরিবেশে জন্মগ্রহণ করলে রাজ্যের সুখ-আহ্লাদ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন। রাজপ্রাসাদে নানা জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়নি। দেখা যেত তিনি রাজ উদ্যানে গিয়ে সেই সময় নদী কিংবা গাছের নীচে বসে ধ্যান করতেন। এভাবেই বাল্যকাল অতিক্রান্ত হলে যৌবনের প্রারম্ভে নগর পরিভ্রমণে বের হলে তিনি দেখেন মানব জীবন দুঃখময়। মানবের এই দুঃখমুক্তির জন্য তিনি কঠোর ধ্যান-সাধনা করেন টানা ছয় বছর। অবশেষে তিনি দুঃখমুক্তির উপায় বের করে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। তিনি বলেছেন, জীবনে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির মার্গ বা পথও আছে। এটাই চতুরার্য সত্য। বুদ্ধ দুঃখ মুক্তির জন্য মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার কথা বলেন অর্থাৎ জীবনের অতি সুখ-বিলাস-ব্যসন যেমন পরিতাজ্য, তেমনি অতি সংযম ও কৃচ্ছসাধনও অপ্রয়োজনীয়। আরেকটি কথাও বলেছেন, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ আটটি সৎ পথের কথা বলেন। যেমনঃ সৎ দৃষ্টি, সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য ,সৎ কর্ম, সৎ জিবিকা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সৎ সমাধি। আর এর যর্থাথ উপলদ্ধির জন্য একজন মানুষকে মেডিটেশন বা ধ্যানে আত্মমগ্ন হতে হয়। বুদ্ধের মতে মেডিটেশন প্রাপ্তি হলো দুটি- এক, সমাধি বা স্থিরতা যা মনকে কেন্দ্রীভূত করে, দুই-বিপাসন বা প্রজ্ঞা যা পঞ্চ ইন্দ্রয়ের বাইরেও উপলদ্ধির চেতনাকে জাগ্রত করে। ফলে একজন মানুষ এভাবেই ত্রিকাল দর্শন লাভ করেন। বুদ্ধ ভাষ্য মতে, প্রত্যেকের জীবনে দুঃখ আছে, আর দুঃখ থেকে মুক্তির পথ নির্বান আছে। অশান্ত, চঞ্চল, লোভ, দ্বেষ, হিংসা, জটিলতা, কুটিলতা, ভালবাসা, আবেগ, ভয়, শংকা, ঘৃণায় আক্রান্ত মনটাকে যদি কৌশলে বশ করা যায় তাহরে দুঃখ মুক্তি করা সম্ভব। আর এই প্রক্রিয়ার নাম ভাবনা বা ধ্যান। ধম্মপদের ২ নং গাথায় বলা হয়েছেঃ

মনো পুব্বংগমা ধম্মা মনোসেট্ঠা মনোমায়া
মনসা যে পসন্নেন ভাসাতি বা করোতি বা
ততো নং সুখ মন্বেতি ছায়া’ব অনপায়িনী।

অর্থাৎ, মন হলো সকল ধর্মের অগ্রগামী। সব ধর্ম মন গঠিত এবং মনের উপর নির্ভরশীল। প্রসন্ন মনে যদি কেউ কিছু বলে বা করে তাহলে সুখ অনুক্ষণ ছায়ার মতো তাকে অনুসরণ করে।
ভগবান বুদ্ধ বুদ্ধগয়ার বোধিদ্রুম মূলে বুদ্ধত্ব লাভ করার পর সাত সপ্তাহ বোধিদ্রুম বৃক্ষ মূলে ধ্যান করেন।
প্রথম সপ্তাহঃ তিনি বোধিমূলে সমাপত্তি সুখ ( ধ্যান সুখ ) ভোগ করে অতিবাহিত করেন।
দ্বিতীয় সপ্তাহঃ তিনি বুদ্ধত্ব লাভের আসন এবং বোধিবৃক্ষকে পূজা করে কাটান।
তৃতীয় সপ্তাহঃ দেবগণ নির্মিত মহার্ঘ মণিচংক্রামনে পয়চারি করেন।
চতুর্থ সপ্তাহঃ বোধিবৃক্ষের নীচে বসে কার্যকারণতত্ত্ব বা প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি সম্পর্কে ধ্যান করলেন।
পঞ্চম সপ্তাহঃ অজপাল নিগ্রোধ বৃক্ষের নীচে ধ্যানে বসে অতিবাহিত করেন।
ষষ্ঠ সপ্তাহঃ তিনি মুচলিন্দ বটবৃক্ষের নীচে ধ্যানে বসে অতিবাহিত করেন।
সপ্তম সপ্তাহঃ তথাগত রাজায়তনে ধ্যান করে কাটান।
এভাবেই ধ্যান কথাটি বৌদ্ধ ধর্মে চলে এসেছে। তাছাড়া বুদ্ধ অনাগত দশ বুদ্ধের কথা বলেছেন তাঁরাও ধ্যানের মাধ্যমেই বুদ্ধত্ব লাভ করবেন। এরকম দেশনা প্রদান করেছেন। তাঁরা হলেনঃ
১. আর্যমিত্র বুদ্ধ-নাগেশ্বর বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
২. রাম বুদ্ধ- তিনি শাল বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৩. ধর্মরাজ বুদ্ধ-নাগ বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৪. ধর্ম সামি বুদ্ধ-তিনি শাল বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৫. রংসীমুনি বুদ্ধ-পিপফলি বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৬. নারদ বুদ্ধ-চন্দন বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৭. দেবদেব বুদ্ধ-চম্পক বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
৮. নরসীহ বুদ্ধ-পাটলি বৃক্ষমূলে ধ্যান করে তিনি বুদ্ধ হবেন।
৯. তিসস বুদ্ধ-নিগ্রোধ বৃক্ষমূলে ধ্যান করে বুদ্ধ হবেন।
১০. সুমঙ্গল বুদ্ধ-নাগ বৃক্ষমূলে ধ্যান করে তিনি বুদ্ধ হবেন।
বৌদ্ধ দর্শনে এই ধ্যানের ধারণা অনেক আগে থেকেই এসেছে। তখনকার সময়ে বুদ্ধ, শিষ্য ও ভিক্ষুদের মধ্যে ধ্যান-সমাধি সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে ধ্যান সর্বজন বিধিত। বৌদ্ধ সমাজে সুখ-শান্তির জন্য সবাই ধ্যানানুশীলন করে।
বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ধ্যানচর্চা কেন্দ্রঃ
একসময় ধ্যানচর্চা করা হতো গভীর অরণ্যে, হিমালয়ে,পাহাড়ে, নির্জন জায়গায়, বট বৃক্ষের নীচে এমনকি নিঃস্তব্ধ জায়গা। এককথায় কোলাহল মুক্ত জায়গায়। দেখা যেত এ সময় শুধু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এ ধ্যান করতেন। এখন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ধ্যান করেন। এমনকি ধ্যানের জন্য কোর্স করেন নানা বিহার ও প্রতিষ্ঠান থেকে। নিম্নে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধ্যানকেন্দ্রের নামগুলো দেয়া হলোঃ
১.বাংলাদেশ ভিক্ষু প্রশিক্ষণ এবং ধ্যান কেন্দ্র, রাউজান, চট্টগ্রাম, ২. মহাশ্মশান ও বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্র, হলদিয়া পালং, উখিয়া কক্সবাজার, ৩. বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, ৪. কদলপুর সুধর্মানন্দ বৌদ্ধবিহার: বাংলাদেশ ভিক্ষু ট্রেনিং এবং ধ্যান কেন্দ্র, রাউজান, চট্টগ্রাম, ৫. বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্র, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা, ৬. ড. শাসনরক্ষিত ধ্যান কেন্দ্র, ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ, ৭. আন্তজার্তিক শান্তিকুঞ্জ ভাবনা কেন্দ্র, বাংলাবাজার, ঢাকা, ৮. বুদ্ধাঙ্কুর বিহার ও বিদর্শন কেন্দ্র, ৯. নির্বান ধ্যান কেন্দ্র, চট্টগ্রাম, ১০. বোধিপাল আন্তজার্তিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম, ১১.ভাবনা কেন্দ্র ( বিদর্শনাগার), রাউজান, চট্টগ্রাম, ১২. আন্তজার্তিক অরণ্য বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, পাহারতলী, রাউজান, ১৩. পূর্ব বিনাজুরী সার্বজনীন মৈত্রী নিকেতন বিহার ও সাধনা কেন্দ্র, বিনাজুরী, রাউজান, চট্টগ্রাম, ১৪. পদুয়া হরিহর বনাশ্রম বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, পদুয়া, রাঙ্গুনীয়া, ১৫.পশ্চিম শিলক বিদর্শন কেন্দ্র, শিলক, রাঙ্গুনীয়া, ১৬. প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন সাধনা কেন্দ্র (বিহার), বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম, ১৭. বাকরআলী বিল অরণ্য বিহার ও বিদর্শন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম, ১৮. বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র, রাঙ্গামাটি, ১৯. তারাবন ভাবনা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি, ২০. দ্বিগেন্দ্র পাহাড় বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি, ২১. প্রজ্ঞামিত্র অরণ্য বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র , নাইক্ষ্যংছড়ি, ২২. যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র , রাঙ্গাামাটি। এসব বিহার ছাড়াও সাধারণ বৌদ্ধ বিহার গুলোতে নিয়োমিত ধ্যানানুশীলন হয়ে থাকে।
ধ্যানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োগঃ
মন এমন এক বিষয় যা চোখে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না এমনকি মনকে পরিমাপও করা যায় না শুধু অনুভব করা যায়। আর এ মন দেহের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভাল না থাকলে কিছুই করতে ভাল লাগে না। অনেক কারনে মন খারাপ হয়ে যায়। তখনই মন ভাল করার জন্য নানা উপায় একেকজন করে থাকে। কেউবা গান শুনে, কেউবা বেড়াতে যায়, কেউ খেলাধুলা করতে। আর মনকে সর্বদা বশে রাখার জন্য প্রয়োজন ধ্যানানুশীলন।
১.সুখী জীবন বিনির্মানেঃ সবাইতো সুখী হতে চায়। হ্যাঁ, জামেলা মুক্ত, দৈহিক মানসিক প্রশান্তির জন্য ধ্যানের বিকল্প নেই।
২.মন ও দেহের ভারসাম্য রক্ষায়ঃ মন ও দেহ এ দুটির সমন্বয়ে আমাদের দেহ। তাই সুস্থভাবে বাচঁতে হলে এ দুয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে ধ্যান করার মাধ্যমে।।
৩.মনের আবর্জনা দূরীকরনেঃ রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, দে¦ষ, অহংকার আমাদের মনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় এসব থেকে দূরে থাকতেই ধ্যান প্রয়োজন।
৪.জ্ঞান বৃদ্ধিতেঃ ধ্যানে জ্ঞান বাড়ে তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থীর এবং গবেষকগনের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে এ চর্চার বিকল্প নেই।
৫.দুঃখ কষ্ট নিবৃত্তিতেঃ হতাশা, প্রিয় বিয়োগ, জন্ম, জরা, ব্যাধি, না পাওয়ার বেদনা, রোগ-শোক বিলাপ তেকে দূর করার জন্য ধ্যান করতে হবে।
৬.দূরদর্শীতা সৃষ্টিতেঃ একজন মানুষকে আত্মপ্রত্যয়ী, বিশ্বাসী, সাহসী, নির্ভরশীল হতে হলে ধ্যানের বিকল্প নেই
৭.নীতিবান তৈরীতেঃ একজন সৎ, নির্ভীক, বিজ্ঞ, নীতিবান, পরিশ্রমী হতে হলে অবশ্যই ধ্যান করতে হবে।
৮.রোগমুক্ত হতে হলেঃ আলস্যতা, হতাশা, ক্লান্তিতা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রুগ্নতা, দুশ্চিন্তা, অস্বস্তিতা, আরামদায়ক ঘুমের জন্য ধ্যান বেশ প্রয়োজন।
৯.কর্মযোগী বানাতেঃ প্রফুল্ল মন, কর্মে মন বসানো, একঘেয়ামি দূর করতে এর বিকল্প নেই।
১০. অজ্ঞতা দূরীকরনেঃ ধ্যানের ফলে নতুন জ্ঞানের উৎপত্তি হয়। যদি কোন অজ্ঞ ব্যক্তি এ চর্চা কেেরন তাহলে তিনি পরিবার, সমাজের লোকদের কল্যাণের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায়- Meditation is said to be a direct way for the perfection of biengs, for the over coming of sorrow and lamentation. For reaching the right path and for the attainment of Nibbana.
ধ্যানের পূর্বপ্রস্তুতিঃ
অবশ্যই ধ্যান করার পূর্বে প্রস্তুতি নিতে হবে। মনকে স্থির রেখে শীলাব্রত হতে হবে। একজন অনুশীলনকারীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সে একা করবে নাকি কিংবা দলীয়ভাবে করবে। তাহলে একজন দক্ষ প্রশিক্ষক দরকার। আজকাল ইন্টারনেট, ইউটিউবে অনেক ভিডিও থাকে এ থেকেও শেখা যায়। ধ্যান করার সময় ঠিলেঠালা পোষাক পরিধান করা অবশ্যই ভাল। নিঃস্তবদ্ধ পরিবেশ নিশ্চিত করে চার প্রকার আসনে-পদ্মাসন, ভদ্রাসন, সুখাসন, ও উৎকুটিক আসনে ধ্যান করতে পারে।

উপসংহারঃ
অধিক ধন-সম্পদে একজন মানুষকে কখনোই সুস্থ জীবন দান করতে পারে না। ধ্যানী এবং জ্ঞানী ব্যাক্তিই চিরসুখী হতে পারে একমাত্র Know thyself অর্থাৎ নিজেকে জেনে। পাশাপাশি শীলাচার পালন, সবর্দা হাসিমুখে থাকা, পরিমিত খাদ্যাভাস, পরিশ্রম করে, নির্দিষ্ট সময় করে ঘুমানো আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা, ব্যায়াম করা ধৈর্য সহকারে পালন করতে হবে। এসব যদি কেউ নিত্য-নৈমিত্তিকভাবে পালন করে তাহলে সে সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারবে। ভগবান গৌতম বুদ্ধ নিজের অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান সকল প্রানীর সুখের জন্য প্রদান করেছেন। তাঁর অনন্য একটি উৎঘাটন হলো ধ্যান। আসুন আজ থেকেই এই সুস্থ ধারার চর্চা শুরু করি। ধ্যান শুধু যে, বৌদ্ধরা পালন করবে তা নয় জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য ধ্যান করা অত্যাবশ্যক।

রোমানা পাপড়ি
এম. ফিল গবেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!