ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রোকেয়া পদক নিচ্ছেন লেখিকা শোভারানী ত্রিপুরা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা সদরের বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শোভারানী ত্রিপুরা এবছর বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত হয়েছেন। শনিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাত খেকে লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন অসংখ্য ছোট গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, গান, উপন্যাস। ১৯৮৪ সালে লেখক ও গবেষক মংছেনচীং রাখাইন (মংছিন) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ।
বাংলাদেশ বেতার-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি কেন্দ্রের কথিকা লেখক ও পাঠক শোভা ত্রিপুরা ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলার বরকলে জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী মংছেনচীং (মংছিন) পেশায় মুক্ত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি সাহিত্য রচনা ছাড়াও গবেষণামূলক কাজ করেন। মংছেনচীং রাখাইন (মংছিন সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
পেশায় শিক্ষিকা শোভা ত্রিপুরার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ঝরাপাতা (কবিতা) ১৯৯৬, ত্রিপুরা জাতির ইতিকথা ২০০১, ত্রিপুরা জাতির রূপকথা ২০০২, জাতক (বুদ্ধ) ২০০৪, ত্রিপুরা জাতি ২০০৭, ত্রিপুরা জাতির ইতিবৃত্ত, আলোময়ীমা ত্রিপুরেশ্বরী, শুভ বাংলা নববর্ষ ২০১২, স্বপ্নের ধূসর ছায়া (গল্প) ২০১৩, রাখাইন ও ত্রিপুরা জাতিসত্তা ২০১৪, ধূসর পাহাড়ে সবুজ তারুণ্য (গল্প) ২০১৪, ত্রিপুরা জাতির কিংবদন্তী ২০১৪, একুশের অপরাজিত কথামালা (নাটক) ২০১৪, গিরিনন্দিনী (কবিতা) ২০১৪ ও আলোক নবগ্রহ ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহার ও ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাথেরো। শোভা ত্রিপুরার সাহিত্যকর্মের প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে নিজ জাতি-ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও ইতিহাস। তাছাড়া বৌদ্ধধর্ম ও জাতক, রাখাইন জীবনধারা ইত্যাদি নিয়েও কাজ রয়েছে তাঁর।
শোভা ত্রিপুরা ১৯৭৩ সালে বঙ্গভবনে কৃতী যুব সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার লেখিকা হিসেবেও সংবর্ধিত হন। শিক্ষকতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ‘বনভূমি সাহিত্য পুরস্কার’, ১৯৮০ ও ১৯৮৫ সালে রাঙামাটি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হতে রূপকথা পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী কবি পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর পক্ষ হতে কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘সম্মাননা সনদ’, ঢাকায় ‘ছায়ানীড় স্মারক সম্মাননা’, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে সাহিত্য-সংস্কৃতি উৎসবে তাকে ‘রাহিলা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘর কর্তৃক আঞ্চলিক ভাষা ও কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘কবি নজরুল স্মারক সম্মাননা ২০১৪’ প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ হিসেবে পুরস্কৃত হন।
শেয়ার করুন