1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১৮ অপরাহ্ন

ললিতবিস্তর গ্রন্থের আলোকে মহামতি গৌতমবুদ্ধের জীবনীঃ একটি ঐতিহাসিক সমীক্ষা

প্রতিবেদক
  • সময় শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৩৪০৮ পঠিত

রোমানা পাপড়ি:

(শেষ পর্ব)

ড. বিনয়েন্দ্রনাথ চৌধুরী তাঁর বৌদ্ধসাহিত্য গ্রন্থে বলেছেন, “ললিতবিস্তর হচ্ছে বুদ্ধলীলার বিস্তৃত বর্ণনা। ভগবান গৌতম বুদ্ধ জন্ম থেকে মহাপরিনির্বান লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত যে সমস্ত বিষয়াদি উপস্থাপন করেছেন তাকেই ললিতবিস্তর বলা হয়।”

ড. জগন্নাথ বড়ুয়া তাঁর মহাকাব্য ও মহাকবি অশ্বঘোষের কাব্যদর্শন গ্রন্থে বলেছেন, “ললিতবিস্তর অর্থ লীলাখেলা বা লীলা সংগ্রহ। অর্থ্যাৎ বুদ্ধ পৃথিবীতে যে সমস্ত ক্রীড়া প্রদর্শন করেছেন তারই বিস্তৃত বর্ননা বর্ণিত হয়েছে ললিতবিস্তরে।”
Wikipedia- তে বলা হয়েছে, ‘The Lalitavistara sutra is a Buddhist Sutra of the Mahayana tradition that tells the story of the Buddha from the time of his decent from the Tushita heaven untill his first sermon in the deer park near Benares.’

Dr. Radha Banerice বলেছেন, “Lalitavistara is a Sanskrit Buddhist text of great importance. The name Lalitavistara is the detailed narrati of the sports or lila of Guatam the Buddha, indicating his divinity.”

৫. ললিতবিস্তর গ্রন্থের রচয়িতাঃ
ললিতবিস্তর গ্রন্থটি একটি প্রাচীন গ্রন্থ। বৌদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থটি কে বা কার দ্বারা লিখিত হয়েছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু তথ্য আজও জানা যায়নি। এছাড়াও রচয়িতা কখন কোন জায়গা থেকে গ্রন্থটি প্রকাশ করেন তাও জানা যায়নি। তবে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভাষায় যে সকল পন্ডিতগন গ্রন্থের অনুবাদ কার্য করেছেন তাদের সম্পর্কে জানা যায়।

৬. ললিতবিস্তর গ্রন্থের রচনাকালঃ
গ্রন্থটি খুব সুপ্রাচীন হওয়াতে কখন রচিত হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে পন্ডিতরা অনুমান করেছেন এর মূল গ্রন্থ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর রচনা। তবে মিসেস উইন্টারনীচ এর মতে, সম্ভবত গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী। প্রথম দিকে গ্রন্থটি আকার ছোট ছিল । পরে খ্রিষ্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে এর বর্তমান রূপ ধারণ করে। তবে গ্রন্থের আন্তরিক পর্যবেক্ষণে পন্ডিতেরা অনুমান করেছেন যে, এর মূলরূপ খৃ.পূ দ্বিতীয় শতাব্দীর। আবার গান্ধার শিল্পকলার ললিত বিস্তরের সাদৃশ্য দেখে অনুমান করা হয় খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পূর্বে এটি সংকলিত হয়েছে।

৭. ললিতবিস্তর গ্রন্থের অনুবাদ সংকলনঃ
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনূদিত গ্রন্থসমূহের পরিচয় ও গ্রন্থ রচনার সময়কাল তুলে ধরা হলো।
খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীঃ সর্বপ্রথম চীনারা চৈনিক ভাষায় গ্রন্থটির অনুবাদ করেন। কিন্তু নানজিওর এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন এটা সত্য নয়।
খৃস্টীয় ৬৮ অব্দেঃ ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী র মতে, পো-পেন, হিং-কিং ললিতবিস্তর অনুবাদ করেন। ড. উইন্টারনীচ এ অনুবাদকর্ম কে সত্য বলে মনে করেন না।
খৃষ্টীয় ৩০৮ শতাব্দীঃ এ শতাব্দীতেই ললিতবিস্তরের সঠিক অনুবাদ পাওয়া যায়। জানা যায় এ সময়ে ভারতীয় প-িত ধর্মরক্ষকই ইহার সর্বপ্রথম অনুবাদ পাওয়া যায়।
খৃষ্টীয় ২৮৪-৩১৩ শতকঃ ঐতিহাসিক তথ্যমতে জানা যায় ২য়বার ভারতীয় প-িত ধর্মরক্ষক চৈনিক ভাষায় অনুবাদ করেন।
খৃষ্টীয় পঞ্চম শতকঃ এ শতকে ড. ল্যাকম্যান ফ্রেঞ্চ ভাষায় কয়েক অধ্যায় পরে জার্মান ভাষায় ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানের বার্লিন তেকে প্রকাশ করা হয়।
খৃষ্টীয় সপ্তম শতকঃ দিবাকর ললিতবিস্তর গ্রন্থ গ্রন্থটি অনুবাদ করেন।
১৮৮১-১৮৮৬ খৃষ্টাব্দঃ বিবইলওথিকা ই-িকা নামক গ্রন্থমারার জন্য ড. রাজেন্দ্রলাল মিত্র ললিতবিস্তররের ইংরেজী অনুবাদ করেছিরেন মাত্র ১৫ অধ্যায়।
১৯৬৩ খৃষ্টাব্দঃ মিথিলা সংস্কৃত বিদ্যাপীঠ দ্বারভাঙ্গা হতে দেবনগরী অক্ষরে সম্পূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তবে হরপ্রসাদশাস্ত্রী বলেছেন, ললিতবিস্তর কোন সময়ে বর্তমান রূপ পেয়েছে জানা যায়নি।
১৯৯৬ সালঃ জয়দেব গঙ্গোপাধ্যায় সর্ব প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন।

৮. ললিতবিস্তর গ্রন্থের রচনাশৈলীঃ
ললিতবিস্তর গ্রন্থটি পদ্যে রচিত। রচনারীতি সহজ, সাবলীল কিন্তু বৈচিত্র্যহীন ও গতানুগতিক। সুসংলগ্ন ও সুসংসবদ্ধ নয়। গতি-গাম্ভির্যে মহিমান্বিত। এর রচনাশৈলী ও বিষয়বিন্যাস পালি নিকায় ও জাতক নিদান অংশের মত। পুঁথির ভাষা বিচারে গদ্য অংশ সংস্কৃতিতে এবং গাথা অংশ মিশ্র সংস্কৃতিতে লেখা। মূলত ললিতবিস্তরের ভাষা মিশ্র সংস্কৃত। সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ শব্দের প্রয়োগে গ্রথিত এই গ্রন্থ। তাছাড়া তিব্বতি, চৈনিক, মঙ্গোলিয়া, মধ্য এশিয়া, চীন, কোরিয়া, ও জাপানে গ্রন্থের অনুবাদ পাওযা যায়। তাছাড়্ওা পরবর্তী সময়ে বাংলা ও ইংরেজীতেও কিছু গ্রন্থ পাওয়া যায়।
৯. ললিতবিস্তর গ্রন্থ রচনার প্রেক্ষাপটঃ
মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম থেকে মহাপরিনির্বান পর্যন্ত সমস্ত বিষয়াদিই ললিতবিস্তর গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য। ললিতবিস্তরে বর্ণিত বুদ্ধ-জীবনের কাহিনীগুলি এলোমেলো সাজানো হলেও সিদ্ধার্থের শিক্ষা, দেবমন্দির পরিদর্শন, যশোধারার সঙ্গে বিবাহ, মার পরাভব, কৃষিগ্রামে ধ্যান, যুদ্ধবিদ্যা প্রদর্শন, বিম্বিসারের দৗক্ষা প্রভৃতি ঘটনাগুলির বিস্তারিত বর্ননা অন্য কোথাও আর পাওয়া যায়নি। এ গ্রন্থের এক জায়গায় বোধিসত্ত্ব চৌষট্টি প্রকারের বর্ণমালা জানতেন। এর মধ্যে চীনা ও হুন বর্ণমালাও বাদ যায়নি। সর্বাস্তিবাদী সম্প্রদায়ের রচিত তথাপি এতে বুদ্ধ-জীবনের কাহিনীগুলো গদ্য-পদ্যে বর্ণিত হয়েছে। নেপালে রক্ষিত ৯টি বৌদ্ধ আগমগ্রন্থের অন্যতম একটি বহুশ্রুত গ্রন্থ ললিতবিস্তর। বুদ্ধের জীবনী উক্ত গ্রন্তের উপাদান। সহজভাবে বলা যায়, ভগবান গৌতম বুদ্ধের দার্শনিকতা পাঠকের সামনে তুলে ধরাই ললিতবিস্তর গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য। পাঠক যাতে সহজে বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভের ইতিহাস জানতে পারে বিশেষত এ কারনে গ্রন্থ রচনা।
১০. ললিতবিস্তর গ্রন্থের বিষয়বস্তুর সমীক্ষাঃ
গ্রন্থটি মূলত মহাসাংঘিক লোকত্তরবাদীদের অমূল্য গ্রন্থ। একে অভিনিষ্ক্রমণ সূত্র তথা মহাব্যুও বলা হয়। এ গ্রন্থের মাধ্যমে ভগবান গৌতমবুদ্ধের অতিলৌকিক জীবন কাহিনী স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। গ্রন্থে ২৭টি অধ্যায় বা পরিবর্তে বিভক্ত। প্রায় ১৫০৪টি গাথা বা শ্লোকের সমন্বয়ে গঠিত। নিয়ে অধ্যায় গুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলঃ

অধ্যায় বিষয়বস্তু
প্রথম নিদান পরিবর্ত্ত
দ্বিতীয় সমুৎসাহ পরিবর্ত্ত
তৃতীয় কুলশুদ্ধি পরিবর্ত্ত
চতুর্থ ধর্মালোকমুখ পরিবর্ত্ত
পঞ্চম প্রচল পরিবর্ত্ত
ষষ্ঠ গর্ভাবক্রান্তি পরিবর্ত্ত
সপ্তম জন্ম পরিবর্ত্ত
অষ্টম দেবকুলোপনয়ন পরিবর্ত্ত
নবম আভরণ পরিবর্ত্ত
দশম লিপিমালা সন্দর্শন পরিবর্ত্ত
একাদশ কৃষিগ্রাম পরিবর্ত্ত
দ্বাদশ শিল্প সন্দর্শন পরিবর্ত্ত
ত্রয়োদশ সঞ্চোদনা পরিবর্ত্ত
চর্তুদশ স্বপ্ন পরিবর্ত্ত
পঞ্চদশ অভিনিষ্ক্রমণ পরিবর্ত্ত
ষোড়শ বিম্বিসারোপসংক্রমন পরিবর্ত্ত
সপ্তদশ দুষ্করচর্যা পরিবর্ত্ত
অষ্টদশ নৈরঞ্জনা পরিবর্ত্ত
ঊনবিংশ বোধিমণ্ডগমন পরিবর্ত্ত
বিংশ বোধিমণ্ডব্যুহ পরিবর্ত্ত
একবিংশ মারধর্ষন পরিবর্ত্ত
দ্বাবিংশ অভিসম্বোধন পরিবর্ত্ত
ত্রয়োবিংশ সংস্তব পরিবর্ত্ত
চতুবিংশ ত্রপুষভল্লিক পরিবর্ত্ত
পঞ্চবিংশ অধ্যেষণা পরিবর্ত্ত
ষড়বিংশ ধর্মচক্রপ্রবর্ত্তন পরিবর্ত্ত
সপ্তবিংশ নিগম পরিবর্ত্ত
নীচে বিস্তারিত বর্ননা করা হলোঃ
১০.১ নিদান বা উৎপত্তিসূচক পরিবর্ত্তঃ
গ্রন্থের শুরুতেই পালি সুত্রের ন্যায় , স্তূতি জানিয়ে শুরূ হয়েছে ,“আমি এরূপ শুনেছি এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর উপকন্ঠে জেতবনে অনাথপিন্ডকদের আরামে অবস্থান করছিলেন।” অন্যদিকে পালি গ্রন্থে উল্লেখ থাকে শাস্তা কতিপয় শিষ্যসহ অথবা পাচঁশত শিষ্যসহ সেথানে উপস্থিত ছিলেন এরূপ ললিতবিস্তরে উল্লেখ আছে, শাস্তা কতিপয় শিষ্যসহ তথায় উপস্থিত, সেইস্থলে ললিতবিস্তরে অন্যান্য মহাযান সুত্রের ন্যায় বর্ণনা আচে, “১২০০ ভিক্ষু এবং ৩২০০০ বোধিসত্ত্ব পরিবৃত বুদ্ধ দিব্যজ্যোতি বিস্ফোরিত করে বসে আছেন।”তিনি উপস্থিত সকল ভিক্ষু ও বোধিসত্ত্বহকে বহুজনের হিতের জন্য এবং বহুজনের সুখের জন্য একসাথে কাজ করার আহক্ষান জানান। এক সময় ঈশ্বর এবং দেবতাগণ বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে ললিতবিস্তর সম্পর্কে দেশনা করার জন্য অনুরোধ করলে ভগবান ললিত বিস্তর সম্পর্কে দেশনা করেছেন। এরূপ বর্ননার পর বুদ্ধের তূষিত দেবলোকে অবস্থান, চারি মহাবিলোকন, মায়াদেবীর স্বপ্ন, গর্ভে অবস্থান, মায়াদেবীর পিত্রালয়ে গমন, লুম্বিনী উদ্যানে জন্ম, নন্দ-উপনন্দ কর্তৃক স্নান সমাপন, সপ্তপদ করে ছয় দিকে গমন ও ঐ সকল স্থানে পদ্মের পাদুর্ভাব। দশ দিকে অবলোকন এবং ঘোষনা, “আমি জ্যেষ্ঠ, আমি শ্রেষ্ঠ, ইহা আমার শেষ জন্ম”, অসিতকথা, বাল্য শিক্ষা, ত্রুীড়া প্রদর্শন, বিবাহ, চারি নিমিত্ত দর্শন, অভিনিষ্ক্রমন, কেশকর্তন, প্রবজ্যাগ্রহণ, রাজা বিম্বিসারের সাথে সাক্ষাৎ, তপশ্চর্যা, মারবিজয়, অভিসম্বোধি লাভ, বারাণনীতে ধর্মচক্র প্রবর্তন ইত্যাদি ঘটনা বণিৃত হয়েছে।
১০.২ সমুৎসাহ পরিবর্ত্তঃ
এখানে ভগবান বুদ্ধ বোধিসত্ত্বরূপে তুষিত স্বর্গলোকে অবস্থান করেছিলেন। দেবগণ জগতের কল্যান সাধিত করার জন্য মর্ত্ত্যলোকে জন্মগ্রহন করার সমুৎসাহ করেছিলেন। এরকম বিষয়াদি এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
১০.৩ কুলশুদ্ধি পরিবর্ত্তঃ
দেবগনের প্রার্থনায় বোধিসত্ত্ব কোথায়, কোন বংশে জন্মগ্রহন করবেন, সে বিষয়ে সমগ্র জগৎ অবলোকন করে স্থির করলেন, তিনি জম্বুদ্বীপে কপিলাবস্তু নগরে, শাক্যবংশের ক্ষত্রিয় গোত্রে জন্মগ্রহন করবেন। এখানে বর্ণাশ্রম প্রথার অবলুপ্ততা দেখা যায় পাশাপাশি প্রাচীন ভারতবর্ষের ষোড়শ জনপদের উল্লেখ্যযোগ্য স্থানের নাম ও রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়।
১০.৪ ধর্মালোকমুখ পরিবর্ত্তঃ
এ পরিবর্ত্তে বোধিসত্ত্ব তাঁর পূর্বপূর্ব জন্মে যে তপশ্চরণ করেছিলেন যে ধর্মালোকমুখের (ধর্মের প্রকাশক আচারাদির) অনুশীলন করেছিলেন যার ফলে অন্তিম জন্মে তাঁর বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি ঘটে সেই ১০৮ প্রকার ধর্মালোকমুখের বিবরণ আছে।

১০.৫ প্রচল পরিবর্ত্তঃ
তথাগতের জন্মগ্রহনের উপযুক্ত ব্যবস্থার অবলম্বণের কথা বলা হয়েছে। তারপর মাতৃকুক্ষিতে অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে। তাছাড়াও বোধিসত্ত্ব মৈত্রেয়কে তথাগতের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে রাজা শুদ্ধেধনের গৃহে আটপ্রকার শুভসূচনা পাঠানো হলে এবং মায়াদেবী (শুদ্ধোধনের পতœী) ও কায়মনোবাক্যে অতি মানব সন্তানের মাতা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। মায়াদেবী একদিন স্বপ্নে দেখলেন,
“The Queen saw beautiful white elephant coming towards her. As he neared the place where she was, he plucked a white lotus flower with his silvery trunk and entered the golden house in which the queen by sleeping. She then thought the elephant had become her son.”
১০.৬ গর্ভাবক্রান্তি পরিবর্ত্তঃ
মাতৃকুক্ষিতে ভগবান বুদ্ধ কিভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন তা সম্পকে বর্ণনা পাওয়া যায় এই অধ্যায়ে। মায়াদেবীর স্বপ্নদর্শন এখানে পাওয়া যায়। রাজা শুদ্ধোধনও অলৌকিক বৃত্তান্ত জেনে তথাগতের উদ্দেশ্যে অঞ্জলিবদ্ধ করলেন এবং তথাগত মাতৃকুক্ষিতে দশমাসকাল থেকে অলৌকিক উপায়ে তাঁর মহিমা প্রকাশ করলেন।
১০.৭ জন্ম পরিবর্ত্তঃ
তথাগতের জন্ম ও এর সাথে ঘটে যাওয়া বত্রিশ প্রকার অলৌকিক ঘটনার সমাপতন। জন্মের পর রাজপ্রাসাদে যাওয়া, নবজাতকের নামকরণ, বোধিসত্ত্বের জন্মগ্রহনের সাত দিন পর মায়াদেবীর মৃত্যু, মহাপ্রজাপতি গৌতমী কর্তৃক তথাগতের লালন-পালন করা সবশেষে মহর্ষি কর্তৃক শিশুটি সম্যকসংবুদ্ধ হবেন এ্ররূপ ভবিষ্যদ্বাণী করা এ অধ্যায়ে আলোচিত বিষয়।
১০.৮ দেবকুলোপনয়ন পরিবর্ত্তঃ
এখানে বোধিসত্ত্ব তাঁর বিমাতা মহাপ্রজাপতিগৌতমী সাথে মন্দির দর্শনের ফলে মন্দিরের সব দেবপ্রতিমা আসন থেকে উঠে শিশু বোধিসত্ত্বের চরণে পতিত হয়।
১০.৯ আভরণ পরিবর্ত্তঃ
বোধিসত্ত্ব এর জন্য নির্মিত আভরণসমূহের বিবরণ পাওয়া যায়। একদিন সকালে রাজউদ্যানে বোধিসত্ত্বকে তাঁর অলঙ্কারগুলো যখন পরানো হয় ঠিক তখন্ই দেবতা আবিভূত হয়ে বললেন, “যিনি জগতের অলঙ্কার, স্বয়ং অলঙ্কৃত, তাঁর আর অন্য অলঙ্কারের প্রয়োজন নেই। বরং অলঙ্কারগুলি বোধিসাত্ত্বর সঙ্গে জাত ছন্দক নামক দাসকেই দান করুন।”
১০.১০ লিপিমালা সন্দর্শন পরিবর্ত্তেঃ
বোধিসত্ত্বের প্রথম বিদ্যালয় গমন, বিদ্যা শিক্ষার কথা ও পারদর্শীতার কথা বলা হয়েছে। এর সাথে প্রাচীন ভারতবর্ষের ৬৪ প্রকার লিপির কথা জানা যায়। যেমন, ব্রাহ্মী লিপি, খরোষ্ঠী, পুষ্করসারী, অঙ্গলিপি, বঙ্গলিপি, মগধলিপি, দ্রাবিড়লিপি, কিরাতলিপি, দরদলিপি, খাষ্যলিপি, চীনলিপি, হূণলিপি, উত্তরকুরূরিপি, অপরগোদানীয়রিপি, পূর্ববিদেহলিপি ইত্যাদি।
১০.১১ কৃষিগ্রাম পরিবর্ত্তঃ
এ পরিবর্ত্তে কুমার সিদ্ধার্থের নিজ ভূমিও সম্পত্তি নিরীক্ষণে রত ছিলেন।
১০.১২ শিল্পসন্দর্শন পরিবর্ত্তঃ
এখানকার মূল বিষয় হলো বোধিসত্ত্বের বিয়ে গোপার সাথে। সিদ্ধার্থের ধনুর্বিদ্যা, অসিবিদ্যা, মল্লযুদ্ধবিদ্যা, গণনাবিদ্যা, পরমানুরজঃ ও বিভিন্ন পারদর্শীতার কথা বলা হয়েছে। সিদ্ধার্থ ৯৬ প্রকার শিল্পবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন অন্য কোন শাক্যকুমার তাঁর সমান না হওয়ায় তিনি দ-পাণি কণ্যা যশোধরাকে পত্মী রূপে লাভ করেন।
১০.১৩ সঞ্চোদনা পরিবর্ত্তঃ
উপভোগপূর্ণ জীবনের অসারতা ও অন্যান্য দোষ নিরুপণ করে দেবগণ সিদ্ধার্থকে প্রবজ্যাগ্রহনের জন্য নানাপ্রকার প্রেরণা ও প্রার্থনা করেন, উৎসাহ দেন। মূলত সিদ্ধার্থের প্রবজ্যাগ্রহণই এ অধ্যায়ের বিষয়বস্তু।
১০.১৪ স্বপ্ন পরিবর্ত্ত:
শুদ্ধোধন স্বপ্নে দেখলেন যে, তাঁর পুত্র সন্ন্যাস গ্রহনের জন্য গৃহত্যাগ করবেন। এজন্য রাজা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন যাতে পুত্র সংসার ত্যাগ না করেন। এর মধ্যে রাজপ্রসাধ উপভোগপূর্ণ করে গড়ে তুলেন। কিন্তু যৌবনের প্রারম্ভে নগর পরিভ্রমণ করলে সিদ্ধার্থ জরা, ব্যাধি, সন্ন্যাসী ও মৃত্যু দেখেন। তারপর থেকে সংসার ত্যাগী হওয়ার জন্য মন উদগ্রীব হয়ে পরে।
১০.১৫ অভিনিষ্ক্রমণ পরিবর্ত্তঃ
পুত্র যাতে কোনভাবে গৃহত্যাগ না করতে পারে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দেবতা, দেবপুত্র, ও বোধিসত্ত্বদের সাহায্যে কুমার সিদ্ধার্থ গভীর রাতে গৃহত্যাহ করেন। তখন নগরীর সবাই গভীর নিদ্রায় মগ্ন। এদিকে যশোধরা ক্রমাগত ক্রন্দনরত। সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ আলোচ্য অধ্যায়ের মূল উপজীব্য বিষয়।
১০.১৬ বিম্বিসারোপসংক্রমণ পরিবর্ত্তঃ
সিদ্ধার্থ তত্ত্বীয় জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ করতে করতে রাজা বিম্বিসারের রাজ্য পৌঁছালে বিম্বিসার সাদরে গ্রহণ করেন। পরে তথাগতের বাণী, ব্যাবহারে সন্তুষ্টি অর্জন করলে রাজা বিম্বিসার নিজের রাজ্যটি সিদ্ধার্থকে দিয়ে দিতে চাইলে তিনি আর নেন নি পরে নিজের গন্তব্যে চলতে থাকে।
১০.১৭ দুষ্করচর্যা পরিবর্ত্তঃ
দুষ্করচর্যা কথাটি দিয়ে বোঝা যায় যে, সিদ্ধার্থ অনেক কষ্ট করে প্রকৃত তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। রামপুত্র রুদ্রক সহ আরো অনেকের সাথে যোগাভ্যাস ও ধর্মাচরণ করে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি মানবের দুঃখ মোচনার্থে প্রচুর ত্যাগ-তিতীক্ষা করতে থাকেন। তিনি ভ্রমণ করতে করতে গয়ার নিকট নৈরঞ্জনা নদীতীরে উরুবিল্ব নামক গ্রামে বোধিসত্ত্ব উপস্থিত হন। তপস্যারত, জীর্ণ-শীর্ণ সিদ্ধার্থকে দেখে অনেকেই মনে করেন প্রেত। তিনি এভাবে ছয় বৎসর কঠোর ধ্যান-তপস্যা করে মনে সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারে নাই।
১০.১৮ নৈরঞ্জনা পরিবর্ত্তঃ
এ অধ্যায়ে দেখা যায় যে, মার বোধিসত্ত্ব নানা ভাবে বাধা দিলে তা বিফলে যায়। নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অবস্থান নিলে । নদীর অপর পারের সেনানী গ্রামের কূলবধু সুজাতা তাঁর বহু কাক্সিক্ষত প্রথম পুত্রসন্তান লাভে বনদেবতাকে পূজা দিতে এসে দেখেন, সর্বসৌন্দর্যমন্ডিত এক অপরূপ সন্ন্যাসী বৃক্ষতলে আসীন।তাঁর কল্পিত দেবতা পূজা নেয়ার জন্য যেন সশরীরে হাজির। পরম ভক্তিভরে ষোড়শ উপাচারে তাঁর পূজা সন্ন্যাসীর করকমলে তুলে দিলেন। তখন ধ্যানরত সন্ন্যাসী বলেন, “ভদ্রে, আমি দেবতা নই, তোমার মতই মানুষ, মুক্তিপথের সন্ধানে রাজ্যসুখ ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়েছি। জীবন রক্ষার জন্য তোমার এ দান আমি গ্রহণ করছি। তোমার বাসনা যেমন পূর্ণ হয়েছে, তেমনি তোমার এ পরমান্ন গ্রহণ করে আমার মনস্কামনাও যেন সিদ্ধ হয়।” সুজাতার পায়েস গ্রহণ করে গৌতমের দীর্ঘদিনের অনাহারে ক্লান্তি দূর হল, মনে নতুন প্রেরণার সঞ্চার হল। এতে বোঝা যায়, অনাহারে থাকলে ধর্মাচরণ হয় না।
১০.১৯ বোধিম-গমন পরিবর্ত্ত ও বোধিসত্ত্বব্যুহ পরিবর্ত্তঃ
নৈরঞ্জনা নদীর তীরস্থ বনের ভিতর একটি প্রকান্ড অশ্বত্থ (পিপলু) গাছের নীচে পাতা দিয়ে আসন বানিয়ে তাতে পূর্বমুখী হয়ে বসে পড়লেন। এ অধ্যায়ে সিদ্ধার্থের বোধিসত্ত্ব লাভের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সাথে সিদ্ধার্থের সে জায়গা কিভাবে গেলেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
১০.২০ মারধর্ষণ পরিবর্ত্তঃ
সিদ্ধার্থ যখন বোধিদ্রুম বৃক্ষের নীচে ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন তখন মার একে একে নানা প্রলোভন দেখালেন । মার তাঁর লাস্যময়ী তিন কণ্যা রতি, আরতি ও তৃষ্ণাকে নানা ছলা-কলায় সিদ্ধার্থের ধ্যান ভঙ্গে নিয়োজিত করে। কিন্তু এসব চেস্টা ব্যর্থ হলে সসৈন্যে আক্রমন করে। ঝড়-ঝঞ্চা, বজ্র, সমুদ্র-গর্জন ইত্যাদি নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। কিন্তু বোধিসত্ত্ব অবিচল অটল থেকে মারের সব কলাকৌশল ব্যর্থ করে সসৈন্য মারকে পরাভূত করেন। বোধিসত্ত্ব আগেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, “ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং,
ত্বগাস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু,
অপ্রাপ্যবোধিং বহুকল্প দুর্লভাং,
নৈবাসনাৎ কায়মতশ্চলিষ্যতে।” (১৯/৫৭)
যার অর্থ-
এ আসনে দেহ মম যাক্ শুকাইয়া,
চর্ম অস্থি মাংস থাক্ প্রলয়ে ডুবিয়া,
না লভিয়া বোধিজ্ঞান দুর্লভ জগতে,
টলিবে না দেহ মোর এ আসন হতে।
এ আসনে আমার শরীর শুকিয়ে যাক, ত্বক অস্থি মাংস ধক্ষংসপ্রাপ্ত হোক, তথাপি অপ্রাপ্ত বহুকল্প দুর্লভ বোধি রাভ না করে আমার দেহ আসন ত্যাগ করে উঠবে না। এরূপ মহাসংকল্প নিয়ে বৃক্ষতরুমূলে ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বললেন, “হিমালয় পর্বত স্থানচ্যুত হতে পারে, ত্রিভুবন শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে, আকাশের সমস্ত নক্ষত্র ধুলায় লুটাতে পারে, মহাসমুদ্রের জলরাশি শুকিয়ে যেতে পারে-তথাপি আমি আমার সংকল্প থেকে তিলমাত্র বিচলিত হব না।” বোধিসত্ত্বের অপার মহিমায় পরাস্ত হয়ে মার পলায়ন করল।
১০.২১ অভিসম্বোধন পরিবর্ত্তঃ
মারকে বিতারিত করে বোধিসত্ত্ব বুদ্ধত্ব লাভ করেন। সর্বপ্রথমে তিনি বিবেকজনিত প্রীতিময় ও সুখময় দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করেন। এরপর স্মৃতিময় ধ্যান লাভ করেন। এরপর উপেক্ষা ধ্যান লাভ করেন। এবাবে প্রথম প্রহরে চিত্তের প্রতি প্রতি মনোনিবেশ করলেন মনুষ্যদৃষ্টিতে। তারপর দিব্যচক্ষুতে প্রাণিদের দেখলেন অজ্ঞান দূরীভূত হল। পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করলেন পরে প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব নীতি পর্যালোচনা করে জন্ম, জরা, ব্যাধী, মৃতুর দুঃখের নিরোধ সংক্রান্ত যাবতীয় কিছু আত্মস্থ করলেন। এভাবে রাত্রির শেষভাগে প্রজ্ঞার দ্বারা সম্যকসম্বোধি লাভ করিলেন। সর্ব আসবের ক্ষয় সাধন করে তিনি হয়েছেন অনাসব। তাঁর কাছে পরম শান্তিময় নির্বাণের দরজা হল উন্মুক্ত। তাই তিনি সুগত বা তথাগত।
১০.২২ সংস্তব পরিবর্ত্তঃ
বোধিসত্ত্ব লাভ করার পর দেবগণ ও দেবপুত্রগণ তাকে স্তুতি ও বন্দনা করেন এবং তাঁর অর্জিত জ্ঞান সর্বস্তরের মানুষদের কাছ পৌঁছানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁর এই তত্ত্ব জনসাধারন কিভাবে নিবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, “ আমি যে এত কষ্ট করে যে মহান জ্ঞান লাভ করেছি তা অত্যন্ত দুরনুবোধ্য, তর্কাতীত, শান্ত ও উন্নত। জ্ঞানী লোক ব্যাতীত সাধারনের পক্ষে এই নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝে ওঠা কঠিন। কেননা তারা সংসারে কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ বশে অন্ধ।”
১০.২৩ ত্রপুষভল্লিক পরিবর্ত্তঃ
তপস্সু ও ভল্লিক নামের দুই বণিকের সাথে সিদ্ধার্থের সাক্ষাৎ হয় পরে তাঁরা বুদ্ধকে প্রণাম করেন। তাদের দেয়া মধু ও পিঠা তিনি গ্রহণ করেন। বণিক প্রবর তপস্সু ও ভল্লিকের দান অনুমোদন উপলক্ষে বুদ্ধ তাদেরকে ধর্মকথায় পরিতৃপ্ত করেন। পরে তাঁরা কৃতার্থ হয়ে চলে যায়।
১০.২৪ অধ্যেষণা পরিবর্ত্তঃ
ভগবান গৌতম বুদ্দের দেষিত ধর্ম সর্বসাধারণের জন্য বারবার ব্রহ্মা প্রার্থনা করেন। পরে বুদ্ধ ধর্মপ্রচারের জন্য স্বীকার করেন।
১০.২৫ ধর্মচক্রপ্রবর্ত্তন পরিবর্ত্তঃ
এ অধ্যায়ে বুদ্ধদেব তাঁর পূর্বপরিচিত রামপুত্র রুদ্রক, আরাড় কালামের মৃত্যু হওয়াতে পঞ্চবর্গীয়কে (কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম, অশ্বজিত) বারাণসীর ঋষিপতনে প্রথম ধর্মদেশনা দেন। তাঁরা বুদ্ধকে মস্তক অবনত করে বুদ্ধকে অভিবাদনপূর্বক যথাযোগ্য আসন প্রদান করলেন। তখন তাঁদেরকে বললেন, “হে ভিক্ষুগণ, আমি যে অমৃতের সন্ধান পেয়েছি, সে অমৃতের বাণী তোমাদেরকে শুনাতে এসেছি, তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর।”তিনি আরো বললেন, “ভক্তবৃন্দ, দুটি বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। এক. কাম সুখে লিপ্ত হয়ো না, দুই. অনাহারে থেকে নিজেদের কষ্ট দিও না। এর মধ্য দিয়ে কখনও কাম্য ফল লাভ করা যায় না। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এই মধ্যম পন্থাই উত্তম।” তিনি আরো বলেন,
চরথ ভিকখবে চারিকং বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়
লোকানুকম্পায় অত্থায হিতায, সুখায় দেব মনুস্সানং
… দেসেথ ভিক্খবে ধম্মং আদি কল্লানং মজঝে কল্লানং,
পরিযোসান কল্লানং…পকাসেথ।”

অর্থাৎ- হে ভিক্ষুগণ, বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন দেব মনুষ্যের কল্যাণার্থ্যে তোমরা দিকে দিকে ছড়িয়ে যাও। আর এরকম ধর্মদেশনা করবে যেখানে আদি কল্যাণ, মধ্য কল্যাণ এবং অন্তে কল্যাণ রয়েছে।
যে শুভ লগ্নে ভগবান বুদ্ধ ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র দেশনা করেছেন, তা মানব জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত এবং পৃথিবীর ধর্ম ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত এবং পৃথিবীর ধর্ম-দর্শনে এরকম বৈপ্লবিক ইতিহাসে বিরল।
১০.২৬ নিগম পরিবর্ত্তঃ
সমগ্র গ্রন্থের বিষয়বস্তু এ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে গ্রন্থ সমাপ্তি হলো, গ্রন্থপাঠের ধরণ, পূজার ফল যেমনটা, পৌরানিক গ্রন্থের শেষে গ্রন্থমাহাত্ম্য, তার পাঠের ফল, পূজার ফল ইত্যাদি থাকে এখানেও তা করা হয়েছে। তাই ললিতবিস্তরকে একটি পৌরানিক গ্রন্থ বলে বিবেচিত করা যেতে পারে।
১১. উপসংহারঃ
গৌতম বুদ্ধের জীবনচরিত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে অবশ্যই তিনটি গ্রন্থ সম্পর্কে জানতে হয়। সেই গ্রন্থসমূহগুলো হলো-অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত, ললিতবিস্তর এবং জাতকের নিদানকথা। ললিতবিস্তর গ্রন্থটি শুধু বুদ্ধের জীবনী নিয়ে লেখা হয়নি শুধু তৎকালীন সময়ে প্রাচীন ভারতবর্ষের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, শিষ্য-প্রশিষ্য, অনুসারী, বুদ্ধের বুদ্ধের সময়কাল থেকে সম্রাট অশোকের রাজা, মন্ত্রী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ভারতবর্ষের রাজ্য, শহর, নগর, বন্দর, গ্রাম, নদ-নদী, বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম পাওয়া যায়। গ্রন্থটি যেহেতু গদ্যপদ্যময় একটি চম্পূজাতীয় রচনা এবং এর নামকরণে বুঝিয়ে দেয় যে, এটি একটি মনোরম সুললিত রচনা বলে তৎকালীন সমাজে গৃহীত হয়েছিল। সহজ-সরল ভাষায় গৌতম বুদ্ধের অলৌকিকতা সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে পন্ডিতেরা গ্রন্থটিকে নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অধ্যাপক উইন্টানিচ বলেছেন, , The work is of immense value from the point of view of history of Religion. From the point of view of history of Literature too, Lalitavistara is one of the most important work of Buddhist Scriptures. Though it is not yet and actual Buddha epic: and it is the Ballads and episodes as preserved in the earliest portions of the Lalitavistara, though probably not from the Lalitavistara itself, that Asvaghosa, the greatest poet of the Buddhists created his Magnificient epic Buddhacharita, “Life of the Buddha”

লেখক: রোমানা পাপড়ি
এম. ফিল গবেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন। 

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!