সুলেখা বড়ুয়া:
মানুষের শরীরের প্রাণবায়ু হচ্ছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যেটার অনুপস্থিতিতে শরীর জড় পদার্থে পরিণত হয় এবং যথা সময়ে শবদাহ না করলে প্রাণী তথা কীট পতঙ্গের আহারে পরিণত হয়, অবশেষে পচে গলে মাটির দেহ মাটিতেই মিশে যায় ।
সুতরাং, আজকের করণীয় কাজ আজকেই সম্পাদন করা আবশ্যক, আগামীকাল যে মৃত্যু হবে না তাই বা কে জানে, মহাশক্তিশালী মৃত্যুরাজের সঙ্গে পেরে উঠা সম্ভব নয় ।
জ্ঞানীলোকের পক্ষে এরুপ চিন্তা করা উচিত নয়, এ বৎসর এ কাজ করবো, আগামী বছর ঐ কাজ সম্পাদন করবো, প্রতি মুহূর্তেই জীবনের অন্তরায় সম্বন্ধে চিন্তা করা একান্ত কর্তব্য, মৃত্যু কখনো সময়ের অপেক্ষা করে না এবং করে না কাউকে অনুগ্রহ, শিশু, যুব, বৃদ্ধ, পণ্ডিত, মূর্খ, ধনী-দ্ররিদ্র নির্বিশেষে সকলকেই নির্বিচারে অবলীলাক্রমে গ্রাস করে ।
সকালে কি বিকালে, দিবসে কি রাত্রে, অদ্য কি কল্য, এখন কি তখন, স্বগৃহে কি পরগৃহে, স্বদেশে কি বিদেশে, পথে ঘাটে মাঠে, কখন যে কোথায়, কি অবস্থায় বা কিভাবে, কৃতান্তের কবলিত হতে হবে, এর তো নিশ্চয়তা নেই, মোহান্ধ মূর্খজনই আপন জীবনের অন্তরায় সম্বন্ধে চিন্তা করে না, অজ্ঞ ব্যক্তিই আপন মৃত্যুর কথা ভুলে থাকে, তাদের পক্ষেই পাপকর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ ।
ইহজীবনের ভবিষৎ নিরাপত্তার জন্য মানুষ কত কিছুই করে, যেমন – জীবন বীমা সঞ্চয়পত্র (Bank money deposit) স্থায়ী সুখের জন্য একটি বাড়ি বা একটি গাড়ি, এটা অবশ্য করা দরকার ইহ জীবনের সুখের জন্য, এতো কষ্ট করে সবকিছু আয়ত্বে আসার পর দেখা যায়, অনেকে তা ভোগবিলাস করতে পারে না একমাত্র মহাশক্তিশালী মৃত্যুরাজের জন্য, এখানেও অনেকের ভাগ্য অনিশ্চিত ।
কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি মৃত্যুর পর জীবনের ভবিষ্যতের কথা, ঐ ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের কিছু deposit করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যেমন – প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা বুদ্ধকে বন্দনা করা, বন্দনা শেষে সম্ভব হলে ১০/২০ মিনিট বিদর্শন ভাবনা করা ।
আমরা মাঝে মধ্যে অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করি, যেমন – সুত্র পাঠ ও বিভিন্ন বন্দনাদি, মন কিন্তু সবসময় ঐ দীর্ঘ প্রার্থনাতে থাকে না, সুতারাং দীর্ঘ প্রার্থনা না করে ১০/২০ মিনিট বিদর্শন ভাবনা করাই উত্তম বিদর্শনাচার্য্যদের মতে ।
বুদ্ধের নির্দেশিত গৃহীশীল (পঞ্চশীল) সঠিকভাবে পালন করা, বর্ষাবাসে উপসথ (অষ্টশীল) পালন করা, সম্ভব হলে বর্ষাবাস ব্যতিত প্রতিমাসে একদিন কিংবা, প্রতিপক্ষে একদিন অথবা প্রতি সপ্তাহে একদিন অষ্টশীল পালন করা যায়, নিজেকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য শীলের কোন বিকল্প নেই ।
দান হচ্ছে সামর্থ অনুযায়ী, তবে শ্রদ্ধার সহিত দান করা অতি উত্তম । মার্গ লাভের জন্য বিদর্শন ভাবনার কোন বিকল্প নেই, ১০ দিনের একটি সঠিকভাবে বিদর্শন ভাবনার কোর্স করলে নির্বাণের বীজ বপন হয় এবং মৃত্যুর পর চারি অপায় দ্বার রোধ হয়, এই চারি অপায় দ্বার হচ্ছে যেমন –
১/ তীর্যক ভূমি
২/প্রেত ভূমি
৩/অসুর ভূমি এবং
৪/ নরক ভূমি
একবার যদি নির্বাণের বীজ বপন করা যায়, তাহলে কোন না কোন জন্মে এই বিদর্শনের মাধ্যমে নির্বাণ লাভ সম্ভব, আর মৃত্যুর পর জীবনের জন্য সঞ্চিত পুণ্যরাশি কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার বা চুরি হওয়ার ভয় থাকে না, এটা দ্বারা সব সময়ই সুফল লাভ করা যায়, কারণ বুদ্ধের ধর্ম অকালিক ।
চক্রবালবাসী সুখী হউক।
শেয়ার করুন।