1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

বিরলে বৌদ্ধ-হিন্দু মন্দিরের স্থাপনা

প্রতিবেদক
  • সময় মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৬৯৩ পঠিত

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে খুঁজে পাওয়া গেছে তিনটি বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরের একটি অনন্য স্থাপনা। গত শনিবারের ছবি l

দিনাজপুরের বিরলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে খুঁজে পাওয়া গেছে তিনটি বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরের একটি অনন্য স্থাপনা (কমপ্লেক্স)। এই মন্দিরের আবিষ্কারক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি গবেষক দলের পরিচালক অধ্যাপক স্বাধীন সেন গত শনিবার বলেছেন, এই বৌদ্ধ মন্দির দুটোর স্থাপত্য পরিকল্পনার সদৃশ কোনো স্থাপনা এখনো বাংলা অঞ্চলসহ পূর্ব ভারতে পাওয়া যায়নি। সেখানে পাওয়া অলংকারসহ হাঁস ও তিরন্দাজের চিত্রফলকও বাংলাদেশে প্রথম পাওয়া গেল।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরল উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর
গ্রামে বিষ্ণুপুর বুড়ির থান ঢিবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি গবেষক দল এই মন্দির তিনটি খনন করছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে আর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ছয় মাস ধরে এই খননকাজ পরিচালিত হয়েছে। মন্দিরগুলো নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।

স্বাধীন সেন জানান, আবিষ্কৃত প্রথম মন্দিরটি সপ্তরথ অভিক্ষেপবিশিষ্ট বেষ্টনী প্রাচীরবিশিষ্ট। এটির পরিমাপ ৩৫ মিটার (পূর্ব-পশ্চিমে) আর ২৬ মিটার (উত্তর-দক্ষিণে)। এই মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথের সিঁড়ি পূর্বদিকে। এই সিঁড়ির ঠিক সামনেই রয়েছে একটি নিবেদন/শারীরিক স্তূপের ভিত্তি। এই মন্দিরটির বেষ্টনী প্রাচীরের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের বাহুর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে তিনটি করে মোট ছয়টি ইটের তৈরি নিরেট বেদি। এই বেদিগুলোর মধ্যে মাঝখানের বেদিগুলোতে কমপক্ষে দুটি নির্মাণপর্ব রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের বেদি দুটোর ওপরে সিঁড়ি রয়েছে। কেন্দ্রে একটি স্থাপনা ছিল বলে অনুমান করা যায়।

স্বাধীন সেন আরও জানান, প্রথম দিকের আদি মন্দিরটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বেষ্টনীপ্রাচীরের বাইরে আরেকটি ইটের তৈরি নিরেট কাঠামো রয়েছে। অভিক্ষেপবিশিষ্ট এই কাঠামোর মাপ ৮ মিটার (উত্তর-দক্ষিণে) আর ৬ মিটার (পূর্ব-পশ্চিমে)। এটি আরেকটি মন্দির যেটা প্রথম মন্দিরের সমসাময়িক। তবে এই মন্দিরটি সম্ভবত কোনো উপরিকাঠামোবিহীন খোলা মন্দির ছিল। তিনি জানান, প্রথম এই মন্দির দুটো বৌদ্ধ মন্দির ছিল। স্থাপত্যশৈলীগতভাবে এই মন্দির দুটো দশম খ্রিষ্টাব্দ থেকে একাদশ শতকের বা তারও আগের হতে পারে।

কেন্দ্রীয় মন্দির বা স্তূপটির অস্তিত্ব বর্তমানে না থাকলেও, এটি প্রধান উপাসনাস্থল ছিল বলে অনুমান করা যায় বলে জানিয়েছেন সহযোগী খনন পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান। ক্রশাকৃতি মন্দির স্থাপনার একটি পরিবর্ধিত ও রূপান্তরিত রূপ হিসেবেও এই মন্দিরের স্থাপত্য পরিকল্পনাকে চিহ্নিত করা যায় বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক ও অধ্যাপক সীমা হক। তাঁরা মনে করেন, এই মন্দিরের বেদিগুলো সমবেত হওয়ার স্থান হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে, যেখানে খাওয়া-দাওয়াসহ অন্যান্য কাজ হতো। দৈনন্দিন ব্যবহার্য মৃৎপাত্র পাওয়া যাওয়ার একটা কারণ এটা হতে পারে যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ভোজন ও অন্যান্য কাজে মন্দিরের অভ্যন্তর ও বাইরের স্থান ব্যবহৃত হতো। মন্দির-সংলগ্ন তৎকালীন মানববসতি থেকেও এই মৃৎপাত্রগুলো সংগৃহীত হতে পারে। বিরলের এই বৌদ্ধ মন্দির দুটির গঠন, শৈলী ও ব্যাখ্যার জন্য ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির স্থাপত্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

মূল বৌদ্ধ মন্দিরটির জায়গায় পরবর্তী সময়ে নির্মিত হিন্দু সপ্তরথ মন্দিরটি কলিঙ্গ রীতির অনুকরণে নির্মিত আর পূর্বতম মন্দিরের তুলনায় ক্ষুদ্রাকৃতির। এই মন্দিরটির সময়কাল দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক হতে পারে। এই মন্দিরের গর্ভগৃহে ৬ মিটার একটি পাথরের বেদি পাওয়া গেছে, যেটিতে প্রতিমা রাখা হতো। এই সময়ের প্রচুর মৃৎপাত্র, মেঝে, গর্তসহ বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই কালপর্বটি সম্ভবত চতুর্দশ শতক-পরবর্তী সময়ের। এই সময়ে মন্দিরগুলো পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়েছিল। খননে মৃৎপাত্রের পাশাপাশি বেশ কিছু পোড়ামাটির চিত্রফলক, ধাতব বস্তু, অলংকৃত ইট, পাথরের ভাস্কর্যের ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। খননে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৫ জন শিক্ষার্থী, মহাস্থান থেকে আসা ১৫ জন দক্ষ শ্রমিক ও স্থানীয় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম রওশন কবির প্রথম আলোকে জানান, পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে যোগাযোগের কার্যক্রম চলছে।
সুত্র: প্রথম আলো

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!