কামরুন নাহার সানজিদা :
অস্তিত্ব, সংস্কৃতি, উৎসব বিষয়ে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো এসোসিয়েশন অব বুদ্ধিস্ট স্টুডেন্ট অব বাংলাদেশ। ‘ফাইন্ডিং দ্যা বুদ্ধিজম ইন বাংলাদেশ’ ভলিউম-১ শিরোনামে এই প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাগোডার একটি ছবি জিতে নেয় চ্যাম্পিয়নের পুরষ্কার। ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে জেতা এ ছবির আলোকচিত্রী নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ধর্মরাজ তঞ্চঙ্গ্যা।
গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে অনুষ্ঠিত হয় প্রদর্শনীটি। ধর্মরাজের তোলা ‘ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে স্ব আসনে বিদ্যমান গৌতম বুদ্ধের’ ছবিটি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলোকচিত্রীদের পাঠানো নির্বাচিত প্রায় দুইশ ছবিকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়নের পুরষ্কার জেতে। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন আলোকচিত্রী অনিন্দ্য কবির অভিক।
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার আমছড়া পাড়া গ্রামে জন্ম ধর্মরাজের। ঢাকা নটরডেম কলেজে পড়াশোনার সময় খরচ জোগাতে একটা রেস্টরেন্টে পার্টটাইম কাজ করতো সে। দেড় বছরে জমানো টাকায় ফটোগ্রাফির নেশায় ক্যাননের ৭০০ডি মডেলের একটি ক্যামেরা কিনে ফেলে। বিলাসিতা বা সখ মেটানোর সামর্থ্য না থাকায় এখনো ১৮-৫৫ কিট লেন্সেই ছবি তুলতে হয়েছে তাকে।
এখনো শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা গ্রামে যখন পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছিলো না, ধর্মরাজ তখন এক বন্ধুর কাছে ঢাকার ধর্মরাজিক অনাথালয়ের খোঁজ পায়। সেখান থেকে পড়াশোনা করেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সে। নটরডেম কলেজে পড়ার সময়ই অভি নামে এক বড় ভাইয়ের কাছে ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি তার। যিনি এখন বিনোদন জগতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন আলোকচিত্রী।
শুধুমাত্র ফটোগ্রাফিই নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রিয় মুখ ধর্মরাজ তঞ্চঙ্গ্যা। গান ও থিয়েটারের অভিনয়ে ইতিমধ্যে বেশ নামডাক রয়েছে তার। গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের পরিচালনায় স্বাধীনতা পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পথনাটক ‘যায় দিন, আসে ফাগুন’, ‘তিনি আসছেন’, ‘কমলা সুন্দরীর কিসসা’ নাটকে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছে সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে তার অভিনীত নাটকের মধ্যে আছে রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’, ‘তাসের দেশ’। এছাড়া চাঁদপুর, সিলেট সহ বেশ কিছু জায়গায় থিয়েটারের নাটকে অভিনয় করেছে সে। এখন সে প্রখ্যাত নাট্যকার জিয়া হায়দারের ‘তাইরে নাইরে না’ নাটকে অভিনয় করছে।
এর আগে ২০১২ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘শোভনের স্বাধীনতা’ নামে একটি চলচ্চিত্রে সহ অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেছে ধর্মরাজ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোর পূর্বক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো চলচ্চিত্রটি। ২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলার হয়ে এটিএন বাংলা চ্যানেলের ‘নাট্যযুদ্ধ’ রিয়েলিটি শো’তে নিজ দলের সাথে অংশ নিয়েছিলো ধর্ম। মাত্র ১২ বছর বয়সে গ্রামে একটি যাত্রার দলের হয়ে বসন্ত কুমার নামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলো সে। বর্তমানে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক পদেও দায়িত্ব পালন করছে সে।
সুত্র: সুপ্রভাত বাংলাদেশ
শেয়ার করুন