উথোয়াই মারমা জয়:
বান্দরবান প্রতিনিধি: ইতিমধ্যেই পাহাড়ে শীত পড়েছে, সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা বাড়তে থাকবে। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সৎ চেষ্টা করা। প্রবাদ আছে কারো পৌষ মাস আবার কারও সর্বনাশ। তবে এই পৌষ মাসেই হাড় কাঁপানো শীতে পাহাড়ে সর্বনাশের ছায়া নেমে আসে অসংখ্য গরীব পরিবারে মাঝে। এখানকার গরীব পাহাড়ি মানুষেরা এ মৌসুমে কঠিন এক সময় পার করে। যা শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সেখানে অবস্থান করলে বুঝা মিলে। তখন তাদের কাছে এক বেলা খাবার থেকেও একখ- শীতের কাপড় অনেক বেশি জরুরি হয়ে পরে। তীব্র শীতে ঘর থেকে যখন বের হই,তখন শীতের ঝাঁকুনিটা খেলে উপলব্ধি করি কি প্রবল শীত পরছে। পাহাড়ে কত মানুষ কষ্টে আছে। কিন্তু ব্যস্ত দিনশেষে বাসায় ফিওে কম্বলের ভিতরে ঢুকে গেলে ভুলে যাচ্ছি সকালের উপলব্ধিটা
দেশের ভূমি অনুপাতে প্রয়োজনীয় সবুজ বনভূমি না থাকায় ঋতু বৈচিত্র্যের আচরণের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে অনেক গড়মিল দেখা দিয়েছে। দেশের ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীর কাছে গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও শীতের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয় পাহাড়ে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে। গরম মৌসুমে তীব্র দাবদাহ দেখা দিলেও ততোটা কষ্ট হয়না কেননা প্রকৃতিতেই এমন অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে যা তীব্রদহন থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তবে গরীব দেশের মানুষ বিশেষ করে বাংলাদেশের পাহাড়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে শীতের মৌসুমে মারাত্নক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
শীত বিত্তবানদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক ঋতু হতে পারে কিন্তু আমরা একবার কি ভেবে দেখেছি? এই শীতে পাহাড়ে গরীব বস্ত্রহীন কর্মঅক্ষম মানুষ কিভাবে রাত কাটাচ্ছে? তাদের আমাদের মত দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামন্য কাপড় টুকু নেই বললে চলে। শীতের তীব্রতার কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোর আঁটসাঁট হয়ে বসে কিংবা জড়োসড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে থাকা দেখলে মনে হয় যেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোন দুর্ভিক্ষের চেনা জানা ছবি। তা না হলে তীব্র অসহনীয় তীব্র শীতে খালি গায়ে কিংবা নাম মাত্র বস্ত্রে তাদের এই বীভৎস চিত্র কেন জীবন্ত হয়ে উঠবে কোন স্বাধীন নগরী পাহাড়ে গ্রামে-গঞ্জের আনাচে কানাচে। এই কি আমার মানবতার চিত্র? যেখানে আমার শরীরে দামী কাপড়ের উষ্ণতা আর ওদের শরীরে নির্মম বাস্তবতা।যেই মানুষগুলো ঠিক মত দুই বেলা খাবার যোগার করতে পারে না, শীতবস্ত্র কেনার মত যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের পাশে নিশ্চয় মোহাম্মদ শামসুদ্দাহ তাপস দাদা’র “ফাস্ট এইড ফাউন্ডেশন” পাশে এসে দাঁড়ায় ও দাঁড়াবে। যার প্রমাণ গত বছর বান্দরবানে লামায় গজালিয়া ইউনিয়নে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় লুলাই এ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষগুলো পেয়েছিলো।তাই আমরা “ফাস্ট এইড ফাউন্ডেশন” উদ্যোগ নিয়েছি, এবার শীতে পাহাড়ে গরীব-অসহায় মানুষগুলো পাশে দাঁড়াবো। আপনারা জেনে খুব আনন্দিত হবেন আমাদের ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা, বান্দরবানের লামায় ত্রিশডেবা পাড়া ও ইয়াংছা জীনামেজু অনাথ আশ্রমে শীত বস্ত্র বিতরণ করেছি। আরো ৬শত শীতবস্ত্র বিতরণ করবো লামায় গজালিয়া ইউনিয়নে। আমরা একটি ছোট প্রতিষ্ঠান হয়েও, আমরা অনেক মানুষের ভালোবাসা সাথে নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছি দূর্গম শীতার্ত মানুষগুলোর কাছে। আমাদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি তাদের প্রতি।
সামর্থ্যবান যে সকল ধনী মানুষ শীতের মৌসুমে বাসায় কিংবা অফিসে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাটান তাদের শীতের কষ্ট ততোটা অনুভব করার কথা নয়। তবুও বিধাতা সৃষ্ট বিবেক প্রত্যেকেরই আছে, যে যন্ত্র সব কিছুর বিচার করার ক্ষমতা সকলে রাখে। কেউ যদি শীতের কষ্ট অনুধাবন করতে একান্তই ব্যর্থ হন তবে তাকে তীব্র শীতের রাতে মাত্র কয়েকট মিনিটের জন্য শীতবস্ত্রহীন হয়ে খোলা জায়গায় দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই। আশা নয় বিশ্বাস, উপলব্ধি আসবে। সেটাই মানবতা, যা অন্য মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। আবার যারা জীবনে কোন দুঃখী মানুষকে দান করার পরবর্তী অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হননি তারা একটি পোশাক দান কওে দেখুন। শীত কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষটির মুখ থেকে যে হাসি এবং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে দোয়া বের হবে তার তুলনা ধরার কোন বস্তুও সাথে চলে না।