(১) ইয়াঙ্গুন:
পূর্বে এ জায়গাটি রেঙ্গুন নামেও পরিচিত ছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইয়াঙ্গুন মিয়ানমারের রাজধানী ছিল। দেশটির সবচেয়ে বড় শহরও এটি৷ ইয়াঙ্গুনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্ব বিখ্যাত শোয়েডেগন প্যাগোডা যা মিয়ানমারের মানুষের ধর্মীয় আচার পালনের কেন্দ্রবিন্দু । সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো এই বৌদ্ধ মন্দিরটির উচ্চতা ৯৯ মিটার৷মিয়ানমারের সাবেক সচিবালয় এখানেই অবস্থিত।একসময় ব্রিটিশ বার্মার প্রশাসনিক ভবন ছিল এটি৷ ১৮৮৯ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে লাল ইটের এই ভবনটি তৈরি হয়৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মিয়ানমারের অনেক ইতিহাস৷ইয়াঙ্গুনের আরেক আকর্ষণ শিয়া মসজিদ।বিশ শতকের শুরুর দিকে ইরান থেকে যাওয়া অভিবাসীরা ইয়াঙ্গনে এই মসজিদটি গড়ে তোলেন৷পর্যটকরা আরো যেসব দেখে মুগ্ধ হন: কলোনিয়াল সময়ের বহু পুরানো বিল্ডিং, মহা প্রসন্না গুহা, ৭০ মিটার দীর্ঘ শায়িত গৌতম বুদ্ধের মুর্তি , মহাজায় প্যাগোডা, ইত্যাদি।
(২) বেগো (পেগু):
চৌদ্দ থেকে ষোল শতাব্দীতে মন্ রাজাদের রাজধানী ছিল এই শহর। এ শহরে ছড়িয়ে রয়েছে আকর্ষণীয় বৌদ্ধ বিহার, সেসময়কার রাজাদের দর্শনীয় বাড়ি, উন্মুক্ত মার্কেট, কায়াকপুন প্যাগোডায় ৪টি সুদৃশ্য বিশালাকার বুদ্ধের মুর্তি সব কিছু বলতে গেলে এককথায় অনবদ্য। এর এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের বিমোহিত না করে পারে না।
(৩) ম্রাউক উ
মিয়নমারের একটি এতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক শহর। একসময় শহরটিকে ঘেরা দেয়ালের দুর্গ বলে ভাবা হতো। মূলত এখানে থাকা প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য এই দেয়ালগুলো নির্মান করা হয়।
(৪) থানলিয়ন (সিরাইম)
ইয়াঙ্গুন থেকে বেগো নদী পার হয়ে মাত্র ৩০ মিনিটেই পেরোলেই এ শহরে খুব সহজেই পৌঁছা যায়। চৌদ্দদশ শতাব্দীতে এটি মিয়ানমারের অন্যতম বন্দর ছিল। সপ্তদশ শতকে এই অঞ্চলটি পুর্তগীজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল । এখানে সপ্তদশ শতকে নির্মিত কাইকাহুক প্যাগোডা, থানলিন ও ইয়েল প্যাগোডা, বেগো নদীর স্বচ্ছ জলরাশি এবং নদীতে নৌ ভ্রমণ আপনার ভ্রমনে দেবে অনাবিল আনন্দ।
(৫) বেগান :
বেগান সোনালী শহর হিসেবে বিশ্বে প্রসিদ্ধ। নবম থেকে ১৩ শতাব্দীতে এ অঞ্চলের রাজারা তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি মিয়ানমারের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। ঐতিহাসিক বৌদ্ধমন্দির, প্যাগোডা আর প্রাকৃতিক সবুজে ঘেরা বেগান পর্যটন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি বৌদ্ধমন্দির রয়েছে।
(৬) মান্দালয়:
বৃটিশরা সম্পূর্ণ মায়ানমার দখলের পূর্বে এ অঞ্চলটি ছিল মিয়ানমার রাজবংশের শেষ রাজ্য। একারনে এখনও এ রাজ্যটি মিয়ানমারের সাবেক রয়েল রাজধানী হিসেবে সমান গুরুত্ব বহন করছে। বর্তমানে মিয়ানমারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি। অনেক ঐতিহাসিক ভবন এবং মন্দির ও প্যাগোডা. সিল্ক শিল্প, মার্বেল খোদাই, ব্রোঞ্জ ও রূপা কারুশিল্পের পিঠস্থান এই মান্দালয়। মান্দালয় বাইরে সেইগিং পাহাড়কে ঘিরে স্থাপিত মঠ ও প্যাগোডা অনবদ্য।
(৭) গোল্ডেন প্যলেসঃ
মান্দালয় শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার গোল্ডেন প্যলেস। এটি একসময় প্যালেসের মূল অংশের সাথে যুক্ত ছিলো । কিন্তু তৎকালীন রাজার মৃত্যুর পর তার ছেলে এই অংশটি রাজবাড়ি হতে আলাদা করে দেন। কথিত আছে যে, এখানে মৃত রাজার আত্মা ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে এটিকে বৌদ্ধ বিহারে পরিণত করা হয়। একসময় এটি স্বর্ণ দিয়ে ঘেরা ছিল কিন্তু বর্তমানে তা কেবল বিহারের ভিতরে সাজানো।
(৮) পিনদায়া:
পিনদায়া গুহা ঘর হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। এখানে গৌতম বুদ্ধের প্রায় আটহাজার চিত্র রয়েছে। কিভাবে এই গুহায় এসব চিত্র পাওয়া গেছে তা এখনও রহস্য। এদের মধ্যে কিছু চিত্র রয়েছে যা একশো বছর পুরনো, আর কিছু সাম্প্রতিক সময়ে সংযোজিত হয়েছে। গুহাগুলোতে পরিভ্রমণ করতে করতে উপভোগ করে নিতে পারেন এর চারপাশের শান্ত নিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
(৯) তুয়াং কালাত
এটি মিয়ানমার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এই বিহারটি আগ্নেয়গিরির ঠিক মুখে অবস্থিত। একজন দর্শনার্থী ৭৭ টি সিঁড়ি পার হয়ে এই বিহারটি দর্শন করতে যান । আর তার সাথে উপভোগ করেন পাহাড়ের পারপাশের সবুজ পরিবেশ। পাহাড় চূড়া থেকে চারপাশের প্রকৃতিকে দেখার অনুভুতি এককথায় অতুলনীয়।
(১০)কালাউ:
কালাউ মিয়ানমারের সবচেয়ে শীতলতম স্থান। প্রচন্ড গরমের সময়েও এ অঞ্চলটির আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা থাকে। জাতিগত অনেক সংখ্যালঘুর বাস এই এলাকাটি। শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় মার্কেট। এই মার্কেটে নানারকম হস্তশিল্প, খোদাই করা কারুশিল্প খুব কম টাকায় পেতে পারেন।
(১১) শ্বেন্দাগন প্যাগোডা
এই প্যাগোডাকে বৃহত্তম ড্রাগন প্যাগোডাও বলা হয়ে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন রয়েছে এখানে। যেমন: গৌতম বুদ্ধের চুল ও বৌদ্ধ ধর্মের বহু অমূল্য পাণ্ডুলিপি যা যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত রয়েছে এই স্থানটিতে।
(১২) ইরাবতী নদী
মিয়ানমারের প্রধান নদী হচ্ছে ইরাবতী। সারা মিয়ানমার জুড়েই রয়েছে ইরাবতীর স্পর্শ। মিয়ানমারের পাথেইন, লাইং ও ইয়াঙ্গুগুন এই ইরাবতীরই শাখা। মায়ানমারের পনেরটি প্রধান শহর ইরাবতীকেই ঘিরে তৈরি হয়োছিল। মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনও একইকারনে রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। নদীটিতে নৌ ভ্রমণ করতে পারেন। নদীর চারপাশের অপার সৌন্দর্য আপনার ভ্রমণ হয়ে উঠবে আনন্দময়। তার সাথে বাড়তি পাওয়া যাবে রাস্তার দু’পাশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন, পাহাড়ের চুড়ায় মন্দির। সেই সাথেঙ্গ জেলেদের ধরে আনা প্রচুর মাছ।
(১৩) ওয়ার মেমোরিয়াল সমাধিক্ষেত্র
ইয়াঙ্গুন থেকে বেগোর রাস্তা ধরে ৩২ কি.মি. দূরে তাউকিন শহরে এই সমাধিক্ষেত্রটি অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর ২৭,০০০ সৈন্য এই মিয়ানমারে শহীদ হন। তাদের এখানে সমাধি দেয়া হয়। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ওয়ার মেমোরিয়াল সমাধিক্ষেত্রটি নির্মাণ করা হয়।
(১৪) নগেপালি :
সাদা বালি আর বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই নগেপালি ভ্রমণ করতে হবে। বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, সমুদ্রের স্বচ্ছ জলরাশি নগেপালিকে সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে। অধিকাংশ পর্যটক এখানে মাছ ধরার সাথে সমুদ্র স্নান এবং সার্ফিংয়ের জন্য আসেন।
রূপ-বৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক তীর্থভূমি এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিলনক্ষেত্র এই মিয়ানমার । হোটেল ও রিসোর্ট বেশ সস্তা। আর দেশী-বিদেশী খাবারের সুব্যবস্থা তো রয়েছেই। শীত আসন্ন। এখনিতো সময় মিয়ানমার ভ্রমণের। আর দেরী না করে চলুন বেরিয়ে পড়ি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে।