বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান রাঙামাটির রাজবন বিহারে আজ (২ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ৪৪তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা।
রাঙামাটি রাজবন বিহারে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে এবার ৪৪তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাঙামাটি রাজবন বিহারে সর্ববৃহৎ পরিসরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই চীবর দানানুষ্ঠান। কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও রাজবন বিহারের এই চীবর দানানুষ্ঠান এখন পরিনত হয়েছে সার্জনীন উৎসবে। ধর্মীয় সকল আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি রাজবন বিহারে চীবর দানানুষ্ঠান কেন্দ্র করে সকল সকল ধর্মালম্বী লোকজনের সমাগম ঘটে।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে তিনটায় বৌদ্ধ সাধকদের কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণের পর চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায় বেইন ঘর ও চড়কায় তুলা থেকে সুতা কেটে বেইন বুনন কাজের উদ্বোধন করেন চাকমা রাণী য়েন য়েন। এর পর শুরু হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর প্রস্তুতের আনুষ্ঠানিকতা। প্রায় দুইশত বেইনে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা অংশ নেয় চীবর প্রস্তুতের কাজে। সুতা সিদ্ধ ও রং করা, সুতা টিয়ানো, সুতা শুকানো, সুতা তুম ও নলীতে ভরা, বেইন টানা বেং বেইন বুননের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সারা রাত অতিক্রম করে দায়ক-দায়িকারা।
শুক্রবার সকাল ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত চলে চীবর প্রস্তুত। আর এভাবেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুত করা হয় এই পূর্ণময় চীবর যা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মীয় শাস্ত্র মতে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী মহা উপাসিক বিশাখা কতৃর্ক প্রবর্তিত রীতি অনুসারে এই চীবর প্রস্তত কষ্টদায়ক এবং কঠিন হলেও এই চীবর প্রস্তুত করে তা ভিক্ষু সংঘের হাতে তুলে দেয়া সকল দানের মধ্যে উত্তম দান এবং অধিক পূর্ণময় বিধায় এ দানকে দানের মধ্যে শ্র্ষ্ঠে দান হিসবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে মহা উপাসিকা বিশাখা কতৃর্ক প্রবর্তিত রীতি অনুসরনে চীবর দানানুষ্ঠান খুব একটা না হলেও ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে বিশাখা প্রবর্তিত রীতি অনুসারে এই চীবর দানানুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং এর পর থেকেই প্রতি বছর রাজবন বিহারে বৃহৎ পরিসরে এই চীবর দানানুষ্ঠান হয়ে আসছে। কালের আবর্তে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে অনুষ্ঠিত এই কঠিন চীবর দান শুধু মাত্র বাংলদেশ নয় দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় সর্ব বৃহৎ পরিসরে এই চীবর দানানুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসছে।
বুধবার সকাল উৎসবে যোগ দিতে রাজবন বিহারে থেকে অগণিত পুন্যার্থীর ঢল নামতে শুরু করেছে। রাজবন বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে গোটা রাঙামাটি শহর। উৎসব ঘিরে রাজবন বিহার এলাকায় বসছে মেলা।
এদিকে রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ৪৪ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের সুষ্ঠূ পরিবেশে আয়োজনের লক্ষ্যে ৪ স্তরের পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাঙামাটির পুলিশ বিভাগ। পুরো অনুষ্ঠানকে নিরপত্তা বলয়ে নিয়ে আসতে সাড়ে ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান চীবর দানানুষ্ঠানের সময় পোষাকী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বিশেষ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি রাজবন বিহারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে পুরো এলাকার সার্বিক পরিবেশ মনিটরিং করা হচ্ছে। চীবর দানানুষ্ঠানটিকে ঘিরে একটি ষ্পেশাল পুলিশ টীম সার্বক্ষনিক টহলে থাকবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।