বিবর্তন ডেস্ক: দীর্ঘ এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল প্রিয় রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানায় লাখো থাইবাসী। গতকাল গ্র্যান্ড প্যালেসে শেষকৃত্য শেষে রাজকীয় বাহনে করে প্রাসাদে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রিয় রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজকে চোখের পানিতে শেষ বিদায় জানিয়েছে থাইল্যান্ডের জনগণ। এক বছরের প্রস্তুতি শেষে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান। এ জন্য গ্র্যান্ড প্যালেসে জড়ো হন লাখো থাইবাসী। ব্যাংককে সমাহিত করা হবে প্রয়াত রাজা ভূমিবলকে। দিনটিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে থাই প্রশাসন।
গত বছর ১৩ অক্টোবর প্রয়াত হন রাজা ভূমিবল। পিতৃহারা হয় থাইল্যান্ড। নিয়মানুযায়ী, রাজার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বৌদ্ধ নিয়ম মেনে সম্পন্ন হয় রাজার শেষকৃত্য। এর পর আজ (শুক্রবার) ভূমিবলের দেহ নিয়ে আসা হবে ব্যাংককে রাজার প্রাসাদ গ্র্যান্ড প্যালেসে। এরপর আরও দু’দিন ধরে চলবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এ শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেবার কথা প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যোগ দেয়ার কথা ভুটানের রাজা, জাপানের যুবরাজেরও। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীরাও জানিয়ে দিয়েছেন, তারা এদিন দোকান বন্ধ রাখবেন । এ অনুষ্ঠানের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় নয় কোটি ডলার। এ পরিমাণ অর্থে কিনে ফেলা যায় ছোটখাটো একটা শহর।
পুরো থাইল্যান্ডজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা, পর্যটন কেন্দ্র বা রাস্তার ধারে এখনো শোভা পায়ে রাজা ভূমিবলের বিশাল বিশাল সব পোর্টেট। ব্যাংককের এ রাজ প্রাসাদের ধারেই গত এক বছর ধরে তৈরি করা হয় তার মরদেহ দাহ করার চিতা। যাতে খচিত রয়েছে নানা কারুকার্য, থাইল্যান্ডের পৌরাণিক কাহিনীর নানা চরিত্রের মূর্তি। নানা প্রাণীর প্রতিকৃতি। রূপকথার কাহিনীতে যেমন বর্ণনা থাকে ঠিক তেমন। বিশাল চিতাটি বানানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন অগণিত স্থপতি, প্রকৌশলী, কারুশিল্পী। এটি তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট পর্নথুম থুমভিবল। বহু সাধারণ নাগরিকও এতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে শ্রম দিয়েছেন। রাজকীয় এ চিতাটির আশপাশের জায়গাটুকু প্রতীকী অর্থে স্বর্গ। প্রাসপসুক রাতমাই কাজ করছেন প্রধান ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে। তার ভাষায় ‘ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে সবকিছু একদম নিখুঁত হতে হবে। আমাদের প্রত্যেক ধাপে ধাপে, সব খুঁটিনাটি বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হয়। এখানে সব প্রাণীর মূর্তিগুলো পবিত্র হিসেবে বিবেচিত। চিতার প্রথম ধাপে সেগুলো রয়েছে। পশ্চিম দিকে রয়েছে ঘোড়া, উত্তরদিকে হাতি, দক্ষিণে গরু, এরকম। প্রতিটি অংশের পেছনে ধর্মীয় গল্প বা বিশ্বাস জড়িত।’ এ অনুষ্ঠানের যেসব আচার, ধর্মীয় গান ও নাচ থাকবে সেগুলোও বেশ কিছুদিন ধরে অনুশীলন করা হয়।
৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন রাজা ভূমিবল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, ১৯৪৬ সালের ৯ জুন রাজা হয়েছিলেন তিনি। নানা গোষ্ঠী সংঘর্ষে দীর্ণ থাইল্যান্ডকে একক রাষ্ট্র হিসেবে তিনিই গড়ে তুলেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর এখন সিংহাসনে ভূমিবলের একমাত্র ছেলে, ৬৩ বছরের মহা বাজিরালংকর্ণ। ৭০ বছর ধরে রাজা ছিলেন ভূমিবল। আধুনিক ইতিহাসে তার শাসনকালই দীর্ঘতম। তার পরেই রয়েছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি রাজত্ব করছেন ৬৪ বছর।