শ্রীলংকান এবং বাংলাদেশী বৌদ্ধদের যৌথ আয়োজনে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন
ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী:
“হে ভিক্খুগণ, সম্মুখে এগিয়ে যাও, বহুজনের হিত-কল্যাণের জন্য, সুখের জন্য পৃথিবীর প্রতি অনুকম্পা পূর্বক; নিজের, দেব-মানবের হিত, মঙ্গল, সুখের জন্য, ধর্ম দেশনা করো; যে ধর্ম আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ, অন্তিমে কল্যাণ”। মহাকারুণিক সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী বুদ্ধের এমন প্রেরণাপ্রদায়ী আহ্বানে আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের প্রবারণা পূর্ণিমা সমাপনের সাথে মাসব্যাপী “কঠিন চীবর দান” পূণ্যোৎসবে পূজনীয় ভিক্খুসংঘ দিকে দিকে গমণ করে ছড়িয়ে দেন বুদ্ধের অমিয় মৈত্রী বাণী, প্রার্থনা করেন বিশ্বশান্তি, শিক্ষা দেন মানবিক মূল্যবোধ ও সর্বজীবে ভালবাসা।ভারতবর্ষে যে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা, আজ তা সমগ্র মহাদেশ-উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। এমনকি আধুনিকতা যাদের ফ্যাশন, ধর্মকর্মে যাদের নিরুৎসাহ আজ সে পশ্চিমা বিশ্বেও বুদ্ধবাণীর জয়জয়কার। এসব দেশে জন্ম হওয়া, বেড়ে উঠা এবং অবস্থানরত উপ-মহাদেশের বৌদ্ধরাও ভুলেনি তাদের অস্তিত্ব। তারই সুন্দর প্রতিফলন দেখা যায় বিগত রবিবার, ৮ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং। যুক্তরাজ্য দ্বীপের দক্ষিণাংশের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত ইংল্যান্ডের রাজধানী সভ্যতা-সংস্কৃতি ও পৃথিবীর অন্যতম প্রধান অর্থ-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল লন্ডন শহরের অদূরে প্রতিষ্ঠিত “ইস্ট লন্ডন বুড্ডিস্ট কালচার্যাল্ সেন্টার (লুম্বিনী বিহার)” -এ শ্রীলংকান এবং বাংলাদেশী বৌদ্ধরা একত্রিত হয়ে আয়োজন করেন দানোত্তম-দানশ্রেষ্ঠ, দানরাজ শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব ২৫৬১ বুদ্ধবর্ষ। উক্ত পূণ্যোৎসবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিভিন্ন দেশের পূজনীয় ভিক্খুসংঘ এবং পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।ভোর হতে শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ পূণ্যোৎসব শীল গ্রহণ, বুদ্ধপূজা, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, প্রাতিষ্ঠানিক দান, কল্পতরু দান, চীবর সেলাই, ধর্ম পদযাত্রা (র্যালী), পূজনীয় ভিক্খুসংঘ কর্তৃক ধর্মদান-আশীর্বাদ, পূণ্যোৎসর্গ ইত্যাদি নানা আয়োজনে সমৃদ্ধ ছিল। সেসাথে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ পূণ্যার্থীদের স্বহস্তে প্রস্তুতকৃত চীবর “কঠিন চীবর” হিসেবে দান এবং বিনয় বিধান অনুসারে ভিক্খুসংঘ কর্তৃক সে চীবর “কঠিন চীবর” হিসেবে গ্রহণ অনুষ্ঠানের নানাকরণের সার্থকতা প্রকাশ পায়
প্রবাসে অবস্থান ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দানশ্রেষ্ঠ এ কঠিন চীবর দান পূণ্যোৎসবের আয়ােজন এবং অংশগ্রহণ করে পেরে পূণ্যার্থী উপাসক-উপাসিকাদের আনন্দের স্ফুরণ ছিল দেখার মত। পূজনীয় ভিক্খুসংঘরাও কঠিন চীবর দানের পূণ্যবার্তায় সকলের প্রতি মৈত্রী-করুণা চিত্তে আশীর্বাদ-পূণ্যদান করেন। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন নানা অবক্ষয় ও অস্থির পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হোক এ শুভ কামনা বিশ্বশান্তি প্রার্থনা করেন।