✍ ভিক্খু প্রজ্ঞাশ্রী;
ফানুস উড়ানো একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব ও পূজা। এটাকে সামাজিক ও সাধারণ উৎসবের সাথে তুলনা করা বিধেয় নয়। ফানুস তথা আকাশ প্রদীপের মাধ্যমে আমরা বোধিসত্ত্ব গৌতমের সেই কেশধাতুকে পূজা করে থাকি, যে কেশ ধাতু তিনি সংসার ত্যাগের পর নৈরঞ্জনা নদীর তীরে এসে কর্তন করেছেন এবং তিনি তখন অধিষ্ঠান করেছিলেন, আমি বুদ্ধাংকুর হয়ে এই জন্মে যদি বুদ্ধ হতে পারি তবে আমার চুলের অধঃগতি (ভূমিতে পতিত হবে না) হবে না, উর্দ্ধগতি হবে।
আর তখনই দেবরাজ ইন্দ্র ভাবী বুদ্ধের এ অধিষ্ঠান জ্ঞাত হয়ে তিনি আকাশ মার্গে স্বয়ং এসে স্বর্ণপাত্রে সেই চুল গ্রহণ করেন। এবং তিনি চুলামনি চৈত্য নির্মাণ পূর্বক অধ্যাবধি পূজা করছেন।
আমরাও ফানুস উড়ানোর মধ্যদিয়ে সেই চুলামনি চৈত্যকে পূজা করি, অর্থাৎ ফানুস তথা আকাশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে সেই চুলামনি চৈত্যকে পূজা করি। তাই এটি ধর্মীয় উৎসব ও পূজা। সে নিরেখে সাধারণ উৎসবের সাথে ফানুসকে এক করা যাবে না।
ফানুস উড়ানো আগে অবশ্যই উৎসর্গ করে নিতে হবে। এবং ফানুস উড়ানোর সময় অন্তরে পূজা চেতনা বিরাজমান থাকতে হবে। বুদ্ধ সংকীর্ত্তণ, গাঁথা আবৃত্তি ও সাধু সাধু সাধু ধ্বনি সহকারে ফানুস উড়াতে হয়। অযথা হইহুল্লোর, চিৎকার-চেঁচামেচি, অভক্তিমূলক গানবাজনা এবং অসম্মান পূর্বক ফানুস উড়ানো বিধেয় নয়।
● ফানুস তথা আকাশ প্রদীপ উৎসর্গ বন্দনা গাঁথা :
নমো তস্স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধস্স। (তিন বার)
ইতিপি নিরোধ সমাপত্তিতো উট্ঠহিত্বা নিসিন্নস্স বিষ ভগবতো অরহতো সম্মা সম্বুদ্ধস্স ইমিনা আকাশ পদীপেন চুলামনি চেতিযং উদ্দিসে বুদ্ধং পুজেমি। (তিন বার)
● চুলামনি চৈত্য বন্দনা গাঁঁথা :
তাবতিংসে মুনিন্দস্স তিদসিন্দেন পূজিতা,
চুলাতিযোজনুব্বেধে মণিত্থুপে পতিট্ঠিতা।
তহিং দক্খিণ দাঠঞ্চ, দক্খিণক্খক মেব চ,
পরিনিব্বুতন্তি সম্বুদ্ধে, বন্দে নিহিত ধাতুযো।
বাংলা : তাবতিংস স্বর্গে ত্রিযোজন উচ্চ মণিময় চৈত্যে বুদ্ধের কেশধাতু নিধান করে দেবগণ সহ ইন্দ্ররাজ তা পূজা করছেন। সেই চৈত্যৈর নাম “চুলামনি চৈত্য”। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর তাঁর দক্ষিণ দন্ত ও দক্ষিণ ধাতু সেই চৈত্যে নিধান করা হয়। আমি সেই নিহিত ধাতুকে বন্দনা করছি।
পরিশেষে বলব, অনেক শ্রম ও সময় ব্যয়ে আপনি যে আকাশ প্রদীপ তৈরী করেছেন সে প্রদীপটি যেন যথাযথ শ্রদ্ধা, ভক্তিতে পূজা করা হয় সেদিকে সকলে দৃষ্টি দিন। আপনার একটুখানি অসচেতনতার দরুণ আপনি পূণ্যের চেয়ে পাপের অংশীদারী হয়ে যেতে পারেন! তাই সকলে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ফানুস তথা আকাশ প্রদীপ পূজার মধ্যদিয়ে বুদ্ধাংকুর গৌতমের কেশ ধাতু পূজায় মহাপূণ্যের ভাগী হোন। সকলের প্রতি আবারো শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা এবং প্রার্থনা ফানুসের পূণ্যপ্রভায় প্রজ্ঞালোকময় হোক সকলের জীবন।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
সকলের জয়মঙ্গল হোক।