নীতিশ বড়ুয়া, রামু:
“দূর হোক সাম্প্রদায়িকতা, সম্প্রীতির সমুজ্জ্বল সুবাতাসে উদ্ভাসিত হোক নাগরিক জীবন’ এই আহবানে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে স্মরণ করা হলো রামু সহিংসতার পাঁচ বছর। সংঘদান ও অষ্ট উপকরণ দান, ধর্মসভা, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন, বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনাসহ দিনব্যাপী নানান আয়োজনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করা হয় রামু সহিংসতার এ দিবসকে।দিবসের সকল আয়োজনেই ছিল অসাম্প্রদায়িক সুর,সম্প্রীতির জয়গান। গতকাল শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রামু লালচিং-মৈত্রী কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সেই অশুভ দিনে ধ্বংসপ্রাপ্ত বুদ্ধের পবিত্র ধাতু, বুদ্ধমূর্তি ,বৌদ্ধ বিহার, পবিত্র ত্রিপিটক হারিয়ে যাওয়া সকল স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুণ্যদান করতেই বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে জানান আয়োজকরা।অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে সমাজসেবায় একুশে পদক পাপ্ত বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, পাঁচ বছরের ব্যবধানে পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। মানুষ এখন ক্ষত ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করছে। ঘটনা পরবর্তী সরকার এবং দেশের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন এজন্য আমরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে এমন ঘটনা আর যাতে দেশে কারো উপর না ঘটে সেজন্য সকলের সজাগ থাকা উচিত। কারণ এসব ঘটনায় কারো লাভ হয়না। তিনি বলেন, তড়িৎ পদক্ষেপের জন্য রামুর বৌদ্ধরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। সেসাথে বৌদ্ধ পল্লীর নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট থাকার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ রামুর বৌদ্ধরা।
পার্শ্ববর্তী মায়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা মুসুলিম নির্যাতন প্রসঙ্গে পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, মায়ানমার সরকার কর্তৃক আরাকান রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি যে অমানবিক অন্যায় ও অত্যাচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে রামু কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের শান্তপ্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মায়ানমার সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হউক এ প্রত্যাশা করছি। অমানবিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে এ সমস্যা নিরসন করার জন্য অনুরোধ জানান এ বৌদ্ধ ভিক্ষু।
তিনি বলেন, এদেশে শতশত বছর ধরে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই এক সাথে অবস্থান করে আসছি। আমরা একে অপরের প্রতি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। সবাইকে শান্তি রক্ষার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের সুখ শান্তি ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
ধর্মসভায় অন্যান্যদের মধ্যে, হাইটুপী বড় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত পাঞাদ্বীপা মহাথের, শ্রীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শুকাচারা মহাথের, পূর্ব রাজারকুল স্বধম্মোদ্বয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবিনয় থের, কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের শীলপ্রিয় থের প্রমুখ ধর্ম দেশনা করেন।
রামু রামু মৈত্রী বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাতিলোক মহাথের’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের আহবায়ক রজত বড়ুয়া রিকু।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্মরণ সভা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব পূর্ণধন বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে জেলার অর্ধশতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু ও শ্রামণ এবং হাজারো বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকা অংশ নেন।