প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু:
রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারে দীর্ঘ দিনের জাতিগত অমিমাংসিত সমস্যা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার কথা সারাবিশ্ব জানে। আমরাও এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রতিবাদ জানাই।কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের আচরণ বুদ্ধের নীতি-আদর্শ বিবর্জিত।কেবল মুসলিম হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে এর প্রতিবাদ জানানো উচিত। কেননা আমাদের সম্পর্ক ধর্মের নয়, আমাদের সম্পর্ক মানবতার। সমস্যাটি রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিগত হলেও পর বিষয়টি ক্রমে ধর্মীয় সাম্রদায়ীকতা বলে প্রচারিত হচ্ছে। অনেকে এই বিষয়টিকে মুসলিম বনাম বৌদ্ধ হিসেবে বুঝানোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দুঃখের বিষয় হল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে যেভাবে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তার পরিণতিতে যেকোন সময় যেকোন ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে যেতে পারে। আমরা এও দেখতে পাচ্ছি যে একটি মহল বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে অতিরঞ্জিত ছবি এবং সংবাদ ব্যাপক হারে প্রচার করে সাম্প্রদায়িকতাকে সরাসরি উসকে দেওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যা কিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোন উপকারে আসবে না।
ফেইসবুক ভিত্তিক এসব প্রচারণায় বাংলাদেশের বৌদ্ধ বিহার এবং বৌদ্ধদের উপর আক্রমণ করার জন্য সরাসরি আহবানও জানানো হচ্ছে। ঘর পোড়া গরু সিদুঁরে মেঘ দেখে ভয় পায়। আমরা ২০১২ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছি। আমরা দ্বিতীয় কোন রামু ট্র্যাজেডি দেখতে চাই না। ইতিমধ্যে অনেকের মাঝে ভীতি এবং আতংক কাজ করছে সন্দেহ নেই। একথা সত্য যে, আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তা পাচ্ছি। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তবুও শান্তি, শৃংখলা বজায় রাখা এবং জনস্বার্থে ফেইসবুক ভিত্তিক এবং অনলাইন ভিত্তিক উসকানি মূলক প্রচারণা এবং আঞ্চলিক কতিপয় দৈনিক পত্রিকার প্রচারণার উপর পর্যাপ্ত নজরদারী রাখা উচিত বলে মনে করি।
ঘটনা কেবল রামু, উখিয়া কিংবা কক্সবাজার অঞ্চলে ঘটবে এমন কোন কথা নেই।দেশের যেকোন বৌদ্ধপল্লী এবং বৌদ্ধ বিহারে সহিংসতা ঘটতে পারে।যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বৌদ্ধ পল্লীগুলো এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।এক্ষেত্রে পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং দেশবাসীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী কাম্য।
এই সংকট সময়ে মিডিয়ার সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন।সত্য-মিথ্যা তুলে আনতে মিডিয়া যতটা পারে তা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।ঘটনা ঘটার পরে ভূমিকা রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্যে ভূমিকা রাখা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।বাইরের সমস্যা সমাধানে আমরা সম্মিলিতভাবে ভূমিকা রাখতে পারি কিন্তু বাইরের সমস্যা ঘরে টেনে এনে নিজেদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে কারো কোন উপকার হবে না। এটা আমাদের বুঝতে হবে।