উপসংঘরাজ, শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির, বিহারাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার
মহামানব গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘যো দণ্ডেন অদণ্ডেসু অপ্পদুটেঠসু দুস্সতি/দসন্নমঞ্ঞতরং ঠানং খিপ্পমেব নিগচ্ছতি। /বেদনং ফরুসং জানিং সরীরস্স চ ভেদনং/গরুকং বা’পি আবাধং চিত্তকেখপং’ব পাপুনে। /রাজতো বা উপসগ্গং অবতক্খানং’র দারুনং/ পরিকখয়ং’ব ঞাতীনং, ভোগানং’ব পভঙ্গুনং। / অথব’স্স অগারানি অগিগ ডহতি পাবকো,/কায়স্স ভেদা দুপ্পঞেঞা নিরয়ং সো’পপজ্জতি। ’
অর্থাৎ ‘অদণ্ডনীয় ও নিরপরাধকে দোষী সাব্যস্ত করে যে ব্যক্তি দণ্ডবিধান করে সেই ব্যক্তি ইহজন্মে সহসা দশবিধ অবস্থার অন্যতর লাভ করে। তীব্র যন্ত্রণা, ধনক্ষয়, অঙ্গচ্ছেদ, পক্ষাঘাতাদি কঠিন ব্যাধি ও চিত্তবিক্ষেপগ্রস্ত হয়। রাজা হতে উপসর্গ বা যশঃলোপ, নিদারুণ অপবাদ, জ্ঞাতি ও সম্পত্তিবিনাশ অথবা তার গৃহদাহ ঘটে; দেহাবসানে সেই মন্দবুদ্ধি নরকে উত্পন্ন হয়। ’
বৌদ্ধধর্ম কোনো গোষ্ঠী বা বর্ণের নয় সমগ্র মানবজাতির। বৌদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি অহিংসা, হানাহানি বা মারামারি নয়। সকলের প্রতি মৈত্রী করুণা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রদর্শন করা। কোনো বৌদ্ধ শুধু মানুষ নয় কোনো প্রাণীকে হত্যা করাতো দূরের কথা আঘাতও করতে পারে না।
তাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি যারা নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের প্রতি অনুরোধ জানাব তা এখনই বন্ধ করতে। বিশেষ করে মিয়ানমার সরকার ও নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির প্রতি আমার অনুরোধ, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে শান্তি বিরাজ করতে রোহিঙ্গাদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করুন। অন্যথায় অন্যায়-ব্যভিচারের ফল অতি দ্রুত আপনাদের ভোগ করতে হবে। আমরা এ দেশের বৌদ্ধ জনসমাজ রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি মিয়ানমার সরকারের এই নিষ্ঠুর অত্যাচার, নির্যাতন, তাদের জন্মভূমি হতে নানা নিপীড়নের মাধ্যমে বিতাড়িত করার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে রোহিঙ্গাদেরকে সসম্মানে তাঁদের আবাসভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাই।
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি আমার জীবনের পুণ্যরাশি দান করছি। আশাকরি, তাঁরা দ্রুত তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার ফিরে পাবেন এবং মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন। আমি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও আশীর্বাদ জানাচ্ছি, রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য করার পাশাপাশি এদেশে আশ্রয় প্রদান করার জন্য।
(ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির বাংলাদেশি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু। তিনি বহু গ্রন্থ প্রণেতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জনক, অনাথপিতা, শাসনশোভন মহামান্য উপসংঘরাজ। মিয়ানমারের নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর মৈত্রীবাণী-সমবেদনা অনুলিখন করেছেন : বিপুল বড়ুয়া)