অংশেপ্রু মারমা অংশে
গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম “ফেইজবুকে ” আমাদের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম মহান পবিত্র ‘প্রবারণা পূর্ণিমায়’ সন্ধ্যায় প্রদীপ পূঁজা – ‘ফানুস’ উত্তোলন নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে বিব্রত অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।ফানুস উত্তোলনে করার না করার নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন জনে মন্তব্য,পোষ্ট করা হচ্ছে।
গত ১৮/০৯/১৭ ইং ঢাকা অবস্থানরত পূজনীয় মহান ভিক্ষু সংঘ ও বৌদ্ধ সমাজের নেতৃত্বদানকারী সমাজসেবী বৃন্দ ” বাংলাদেশ সম্মািলিত বৌদ্ধ সমাজ ” ব্যানারের সম্প্রতিক মায়ানমারেরর অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্যাতনে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ এবংনির্যাতিতদের সমবেদনা জানাতে সমগ্র বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পবিত্র মহান প্রবারণা পূর্ণিমাতে ফানুস পূজা না করার জন্য সিদ্বান্ত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।সে সংবাদ সম্মেলনে সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে পূজনীয় ভিক্ষু ও সমাজসেবী উপস্থিতি নিয়েও মতবিরুদ্ব দেখা দিয়েছে।
প্রবারণা পূর্ণিমা এবং ফানুস উত্তোলন একে অপরের পরিপূরক।আমার মতে প্রবারণা পূর্ণিমাতে যদি ফানুস পূজা না হয় তাহলে ধর্মীয় কার্যাদি অপূর্ণ থেকে যাবে।
যাক সে প্রসঙ্গে আমি বলবো না।ফানুস কেন উড়াই সে সম্পর্কে পূজনীয় ভদন্ত জ্যোতিসারা ভিক্ষু বিস্তারিত লিখেছেন।আমি শুধু এখানে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে কিছু কথা জানার আগ্রহ থেকে আমার এ পোষ্ট লিখা।
আমরা বৌদ্ধ জনগৌষ্ঠী বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে বসবাস করি।যেমন সমতল অঞ্চল বৌদ্ধ সমাজ ও পার্বত্য অঞ্চল বৌদ্ধ সমাজ।সমতল অঞ্চলে বেশিভাগ বাস করে – বড়ুয়া,মুসুদ্দি,সিংহ,তালুকদা প্রভৃতি উপাধিদারী বৌদ্ধ জনগৌষ্ঠী।আর পার্বত্য অঞ্চলে বাস করে মারমা,চাকমা,দেওয়ান,তালুকদা প্রভৃতি উপাধিদারী বৌদ্ধ জনগণ।এখানে আমার প্রশ্ন হল- বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ বলতে কি বুঝায়???
সাধারণত বাংলাদেশের বসবাসরত সকল অঞ্চলে বৌদ্ধ জনগৌষ্ঠীকে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ বুঝায নাকি শুধুমাত্র সমতল অঞ্চলে বসবাসরত বৌদ্ধ জনগৌষ্ঠীকে বুঝিয়েছেন??? আর যদি বাংলাদেশে সকল বৌদ্ধ ধর্মালম্বীকে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশে প্রত্যেক অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ এবং বৌদ্ধ সমাজের নেতৃত্বদানকারীবৃন্দ উপস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া জরুরী বলে মনে করি।
কেন না মায়ানমারের সমস্যাটি বাংলাদেশ সকল বৌদ্ধ জনগণে উপর ক্ষোভে সঞ্চার হয়েছে।মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর ববরর্তা হামলা,নির্যাতন,হত্যা বাংলাদেশে বৌদ্ধ জনগণ সমর্থন করেনা এবং রোহিঙ্গাদের এ অসহায়ত্বে আমরা সকলে যে যেভাবে পারে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।আমরাও এ অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। ফানুস বাতি উত্তোলনে পক্ষে – বিপক্ষে বলছি না- হাজার হাজার বছরের আমাদের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে বর্জনে / বিসর্জনে মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে বাংলাদেশ বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের পুজনীয় মহান ভিক্ষু সংঘ এবং গৃহীসংঘের উপস্থিতি করে জ্ঞাত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা??? গুটিকয়েক পুজনীয় ভিক্ষু সংঘ এবং তথাকথিত কয়েকজন ব্যত্তি ঢাকা বসে ” প্রবারণা পূর্ণিমায়”ফানুস “উড়াবো না বলে বিবৃতি প্রদান করে দায়িত্ব শেষ???। এখানে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবান অঞ্চলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে কোন ভিক্ষু সংঘ বা দায়ক বৃন্দ ঐ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল কিনা? আর যদি উপস্থিত থাকে বা বিবৃতি প্রদানকারী তাদেরকে জ্ঞাত করে থাকেন তাহলে পার্বত্য অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ে নিকট স্ব- স্ব অবস্থান থেকে বিবৃতি প্রদান করে জ্ঞাত করার হোক।
আমার জানা মতে সমতল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে সাংঘিকদের সংগঠন রয়েছে- সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা ও বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভা( মহাস্থবির নিকায়)এবং পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরও সে ধরণে সাংঘিক সংগঠন রয়েছে – পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ, ভিক্ষু এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ প্রভৃতি সাংঘিক সংগঠন আছে।
আমার মূল কথা হল – ঢাকা থেকে সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্বান্ত দিয়েছেন যে,ফানুস না উড়িয়ে ফানুসে তৈরীতে যে অর্থ ব্যয় হয় তা মানবতা সাহায্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রদান করবেন।আমরাও অর্থ দিতে প্রস্তুত দিয়েছেও কিন্তু ফানুস তৈরী টাকা কেন ??? আমরা অন্যভাবে সহযোগিতা করতে পারি না? আমরা তো ফানুস উত্তোলনকে উৎসব হিসেবে জানি না! জানি পূঁজো হিসেবে।ফানুস তৈরী করে সকলে বুদ্ধের সামনে নতজানু হয়ে ভান্তে কর্তৃক সূত্রপাঠ ও উস্বর্গ করে চুলামুণি জাদী উদ্দেশ্যে পূঁজো করার মাধ্যমে ধর্মীয় নীতি অনুসারের ফানুস উত্তোলন করি।সংবাদ সম্মেলনকারী নেতৃবৃন্দ নিকট সদয় দুষ্টি অাকর্ষণ করি —
কোন অঞ্চলে বৌদ্ধরা ফানুস উড়ালো আর কোন অঞ্চলে বৌদ্ধরা উড়ালো না। তখন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যাবে? দেশে সকল মানুষের শান্তি জন্য সময় থাকতে যে কোন সিদ্বান্তে গ্রহণে সকল সম্প্রদায় ভূক্ত বৌদ্ধ সমাজের পুজনীয় ভিক্ষু সংঘ ও দায়ক সংঘের উপস্থিতি কাম্য।।