এবারের প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস না ওড়িয়ে খরচের সব টাকা মানুষের সেবায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
বিবর্তন ডেস্ক:এবারের প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস ওড়ানোর খরচের সব টাকা মানুষের সেবায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
এছাড়া, উৎসবের অন্যান্য খাত থেকেও ব্যয় কমানো হচ্ছে। এভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন বৌদ্ধরা।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদ মাধ্যম কে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক নেতা জানান, আগামী ৫ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস ওড়াবে না এদেশের বৌদ্ধ সমাজ। ফানুস ওড়ানোর জন্য বরাদ্দ করা সব টাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আজ (রবিবার) রাতে এ বিষয়ে করণীয় চূড়ান্ত করব।’
বৌদ্ধ নেতারা জানান, তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে মানুষের মঙ্গল কামনার জন্যই মূলত ফানুস ওড়ানো হয়ে থাকে। সামনেই প্রবারণা পূর্ণিমার উৎসব। এটি মূলতঃ ভিক্ষুদের অনুষ্ঠান। তা সত্ত্বেও এটি বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে এবার রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে এই উৎসবের বাজেট কাটছাঁট করা হবে। ফানুস ওড়ানোর খরচ থেকে শুরু করে আরও কিছু খাতের ব্যয় কমিয়ে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। এই অর্থ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হবে।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ডিআইজি পি আর বড়ুয়াও সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, বাড়িঘর পোড়ানো ও হত্যাযজ্ঞ চলছে। আমরা বাংলাদেশের বৌদ্ধরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই বিষয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। একইসঙ্গে অবিলম্বে এই নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য এবং বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠুভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। পরে ১০ সেপ্টেম্বর এ দাবি জানিয়ে মিয়ানমারের দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অব বুদ্ধিস্ট’ এর সদর দফতর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ওই স্মারকলিপির কপি পাঠিয়ে অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধে চাপ সৃষ্টির আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশের বৌদ্ধরা।
পি আর বড়ুয়া আরও বলেন, ‘গত ২ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগতভাবে আমি মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলাম। সেখানে মিয়ানমারের পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছি। রেঙ্গুনে অবস্থিত বাংলাদেশের জনগণের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকেও এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি। এও বলেছি, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের জনগণ মিয়ানমার সরকারকে ধিক্কার দিচ্ছে। পরে আমি রেঙ্গুনে বৌদ্ধ বিহারে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতির প্রায় ১০০ বৌদ্ধ সদস্যের সঙ্গেও বৈঠক করি। সেখানেও রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি তুলে ধরি। তারাও বিষয়টি মিয়ানমার সরকার ও জনগণের কাছে তুলে ধরার অনুরোধ জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সরকার তাদের আশ্রয় ও মানবিক সব সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এটা আমাদের দেশের জন্য বিশাল এক বোঝা। তাই আমি আবারও মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাদের শিগগিরই ফিরিয়ে নেওয়ার এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বৌদ্ধ ধর্মমতে, প্রবারণা শব্দের অর্থ হলো আত্মনিবেদন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসব্যাপী সময়ে বর্ষাব্রত পালন করেন। তখন তারা বিহারে অবস্থান এবং জ্ঞানচর্চা করেন। সে সময়ে তাদের মধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই বর্ষাব্রত পালন শেষে তারা আশ্বিনী পূর্ণিমায় প্রবারণা করে। সেদিনে তারা যদি গোচরে এবং অগোচরে কোনও ভুল করে থাকেন তার জন্য জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুর কাছে তা জানান এবং তা সংশোধনের আহ্বান জানান। তেমনিভাবে জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাও নবীনদের কাছে তাদের ভুলের কথা জানাবেন। এজন্য এটি হলো ভিক্ষুদের আত্মসমর্পণ ও আত্ননিবেদনের অনুষ্ঠান। একে কেন্দ্র করেই এ পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা উৎসব করেন।