চট্রগ্রাম।। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য নগরীর বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। নগরীর ২৭টি বৌদ্ধ মন্দিরে নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরেও অতিরিক্ত দুইশ’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ সাত দিন আগেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা কয়েকদিন আগে আমাদের কমিশনার মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কমিশনার মহোদয় তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
এদিকে পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করলেও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। তাদের মধ্যে এক ধরনের অজানা ভীতি কাজ করছে। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কটুক্তির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ওই সম্প্রদায়ের নেতারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, ‘আইন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে। তারপরও আমরা পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নই। আমাদের মধ্যে এক ধরনের অজানা শঙ্কা কাজ করছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে নানা ধরণের হেনস্তা ও কটুক্তির শিকার হচ্ছেন।’ তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি। উনারা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছেন। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজাউল মাসুদ বাংলা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইলে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। ভীতি ও শঙ্কার ঊর্ধ্বে থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায় যেন চলাফেরা করতে পারে সেজন্য আমরা নজরদারি জোরদার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে ঘিরে আমাদের সর্তক নজরদারি রয়েছে। এই ইস্যুতে সকল থানাকে সর্তক অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি থানার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ অগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশ অভিমুখে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এরইমধ্যে তিন লাখ ৭৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই চলমান অভিযানে অনেক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছেন। কয়েকশ’ রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।