ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের (বাসাবো) অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেছেন, রাখাইনে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী কাজ। কোনো দেশ বা কোনো ধর্মের জন্য নয়, মানবিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাহত ঘটনা। নির্যাতিত ও লাঞ্ছনার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। গতকাল বাসাবো বৌদ্ধ বিহারে সংবাদকর্মী দের দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি বাঙালি, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা কোনো দেশের বাসিন্দা হিসেবে নয় একজন মানুষ হয়ে নিষ্ঠুর এই অবিচারের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এখানে দলমত বা কোনো একক দেশ নয় বিবেকবান মানুষ হয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আমেরিকাসহ অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলো যদি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায় তবে অং সান সুচি রোহিঙ্গাদের অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। যারা সন্তান-স্বামী বা স্বজনহারা তাদেরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেন, হিংসা নয় অহিংসা এবং মিত্রের দ্বারা দুষ্টের দমন করতে হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজ এবং অহিংসাপরায়ণ ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডকে কখনোই সমর্থন করে না। বৌদ্ধ ধর্মে আছে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা যেন থাকে। কোনো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা নীতি-নৈতিকতা বহির্ভূত। রোহিঙ্গাদের ওপর একতরফা আক্রমণ হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, টাকা পয়সার জন্য এই আক্রমণ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ঠিক কি কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর এই আক্রমণ হচ্ছে বিশ্বনেতাদের বিবেক জাগ্রত হলে বের হয়ে আসবে। এ জন্য জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, প্রতিটি সমস্যার সমাধান আন্তরিকতা নিয়ে করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন এবং রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে তিনি যে আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখের জল ফেলেছেন- সেটা যেনো বৃথা না যায়। সংঘর্ষ নয়, বন্ধুত্বপ্রীতি ও মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে মিয়ানমারে অং সান সুচিকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনারা পাখির মতো রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা ও তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রাণ রক্ষার্থে তারা বাংলাদেশের সীমানায় এসে হাজির হচ্ছে। শত শত মাইল জায়গা পাড়ি দিয়ে তারা এসে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। থাকার মতো জায়গা, খাবার-পানি কিছুই পাচ্ছে না বরং অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় অনেকেই এখানে মারা যাচ্ছে। বিশ্ব নেতারা যদি সুচিকে চাপ না দেন তাহলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা আরো বেড়েই চলবে। মিয়ানমার সেনাদের মানবতাবিরোধী অত্যাচারে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকেই স্বজনহারা। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, আবার কেউ সন্তানসহ ভাইবোন। শারীরিক-মানসিক উভয়ভাবে তারা বিপর্যস্ত। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য এবং পুনরায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সরকার প্রধান ও সেনা প্রধানকে নিয়ে বসে আলোচনা করতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে তাদেরকে বোঝাতে হবে কোনো জাতি-ধর্ম বা দেশ নয় মানুষ হিসেবে নির্যাতন বন্ধ করে তাদেরকে থাকার জায়গা করে দিতে হবে।