1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০২:০৯ অপরাহ্ন

মহামানব বুদ্ধ

প্রতিবেদক
  • সময় মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭
  • ২৪৩০ পঠিত

আবুল ফজল
এক কালে ধর্মই মানুষের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতো- এখন সে দায়িত্ব অনেকখানি রাষ্ট্র, সমাজ আর বিজ্ঞান গ্রহণ করেছে। সব ধর্মকেই আজ এ ত্রয়ীর মোকাবেলা করতে হচ্ছে- এ মোকাবেলায় যে ধর্ম টিকে থাকতে পারবে না তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবেই, তার আবেদন ব্যর্থ না হয়ে পারে না। বিজ্ঞানের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বাস্তব চেতনা আর ঐহিকবোধ অনেক বেড়ে গেছে- শুধু পারলৌকিক ভালমন্দের আবেদনে আজ মানুষের মন কিছুমাত্র সাড়া দেয় না। যে জীবনটা তার হাতের মুঠোয়, ওটার হিতাহিত নিয়েই তার এখন ভাবনা- কঠিন বাস্তব তাকে আর দিচ্ছে না আকাশচারী হতে। পরলোকের মুক্তির কথা ভেবে মানুষ আজ মোটেও বিচলিত নয়- এখন মানুষ মুক্তি চায় ইহলোকের দুঃখ দুর্গতি আর অভাব-অনটনের কবল থেকে। আজ মানুষ মানুষকে যতখানি ভয় করছে তার সিকির সিকিও ভয় করছে না ঈশ্বরকে বা ঈশ্বরের দণ্ডকে। তাই পরলোকের ভয়ভীতি ও প্রলোভন আজ মানুষের জীবনে অনেকখানি অবান্তর। এ কারণে ধর্মের প্রতিও আজ নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে হবে- ধর্মকেও আজ বিচার করতে হবে ঐহিক মাপকাঠি দিয়ে।
বুদ্ধের জীবন আর শিক্ষা পুরোপুরি ঐহিক ভিত্তিক বলে এ মাপকাঠি দিয়ে তার মূল্যায়ন অধিকতর সহজ- এর ফলাফল চাক্ষুষ আর প্রত্যক্ষ। বুদ্ধ নিজেও কাল্পনিক ফলশ্রুতির উপর নির্ভর করেন নি। তেমন উপদেশ তিনি দেননিও। প্রতিদিন বাস্তব জীবনে যে সব সমস্যায় মানুষের অস্তিত্ব জর্জরিত তার অপনোদনের পথ আর উপায়ই তিনি নির্দেশ করেছেন। আর তা কিছুমাত্র সাধ্যাতীত নয় মানুষের। কোন রকম অলৌকিক শক্তির দোহাই বুদ্ধ দেননি- জানাননি তেমন কিছুরই প্রতি স্বীকৃতিও। সর্বোতভাবে এ জীবনকেই তিনি গ্রহণ করেছেন। এর বৃত্ত ছড়িয়ে যাবার কোন প্রয়োজন তিনি বোধ করেন নি। এ প্রত্যক্ষ জীবনকে ডিঙিয়ে অন্য কোন অপ্রত্যক্ষ জীবনের স্বপ্ন তাঁর কল্পনায় পায়নি স্থান। তাঁর শিক্ষা, তাঁর ধর্ম ও তাঁর আবেদন এ জীবনের জন্যই। সমস্ত অবৈধ বাসনা-কামনার কবল থেকে মুক্ত করে এ জীবনকেই চেয়েছেন তিনি সুন্দর আর সুস্থ করে গড়ে তুলতে।
মানুষের অন্তরেই মানুষের সব দুঃখের বীজ নিহিত- এ মহাসত্যের তিনি আবিষ্কর্তা। আর তার মূল উৎপাটনই তাঁর সব শিক্ষার মূল লক্ষ্য। পরলোকে স্বর্গ-নরক থাকলেও এ জীবনে তার কোন মূল্য নেই- কাজেই তার কথা ভেবে শঙ্কিত বা উচ্ছ্বসিত হওয়া বা তার উপর জোর দেওয়ার কোন মানে হয় না। তাই সে সম্বন্ধে মহামানব বুদ্ধ মোটেও মাথা ঘামাননি। তিনি মানুষ, রক্তমাংসের মানুষ। তাঁর সব চিন্তা-ভাবনাও মানুষের জীবন-পরিধিতেই সীমিত। মানুষের এ জীবনের কল্যাণ আর এ জীবনের মুক্তিই তিনি চেয়েছেন- এ উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করেছেন তাঁর জীবন আর জীবনের সবকিছু। সিদ্ধি খুঁজেছেন এ জীবনের পরিমণ্ডলেই।
অন্য সব ধর্মেই ঈশ্বর, আল্লাহ্, গড, ভগবান, দেবতা ইত্যাদি এক বড় স্থান জুড়ো রয়েছে, আর রয়েছে পরলোকের সম্ভাব্য জীবন। একমাত্র বুদ্ধের শিক্ষালয় মানুষই বড় আর একমাত্র হয়েই দেখা দিয়েছে। সে মানুষ সমাজ, রাষ্ট্রীট আর বিজ্ঞানের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা। অলৌকিকতা এ জীবনে হালে পানি পায় না। তাই বোধ করি বুদ্ধের শিক্ষা ও আবেদনে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সম্ভবত : বৌদ্ধ ধর্মই একমাত্র ধর্ম যা মানুষের তৈয়ারী আর সর্বোতভাবে তা মানুষের জন্যই এবং মানুষকে নিয়েই। এদিক দিয়ে একে মানবধর্মই বলা যায় আর এ ধর্মের প্রবর্তককে সত্যার্থেই বলা যায় মহামানব। মহামানব বুদ্ধের জয় হোক। জয় হোক তাঁর অহিংসা মন্ত্রের আর জীবন-চেতনার।
__________________________________________
★ লেখক : প্রখ্যাত মানবতন্ত্রী সাহিত্যিক আবুল ফজল এর জন্ম কেউচিয়া, সাতকানিয়া ১ জুলাই ১৯০৩ সালে; মৃত্যু ৪ মে ১৯৮৩ চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!