ভদন্ত ঞানিসারা ভিক্ষু
আজ হতে ১০০’শত বৎসর আগে এমনি এক শুভ বৈশাখি পূর্ণিমায় বিশ্ব পতাকা উত্তোলন করা হয় শ্রীলংকায়। সেদিন ছিল ১৮৮৫ সনের ২৮শে এপ্রিল। ধর্ম অর্থে যদি নীতি হয় তাহলে নীতি কোন ব্যক্তি বিশেষ কিংবা ধর্মকে বুঝায়। সেই অর্থের ধর্মীয় পতাকা নির্ধারণ বৌদ্ধ নীতির পরিপন্থী। কিন্তু শ্রীলংকার বিশেষ পরিস্থিতিতে ধর্মীয় চেতনাকে সমুন্নত রাখার মানসে বিশ্ব বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকান উদ্ভব ও উত্তোলন করা হয়। এ পতাকা সাম্য মৈত্রী ও ঐক্যের পূর্ণ প্রতিক। আজ এউ বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে্য বিশ্ব বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা মানোন্নয়নে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন সর্বাপেক্ষা অধিক।
একদার ভগবান বুদ্ধ অনাথপিন্ডিক নির্মিত জেতবন আরামে বাস করে ছিলেন। তখন একবার “চারিপাদ ঋদ্ধি” (অলৌকিক শক্তি ) প্রদর্শন করেছিলেন। ঋদ্ধি প্রদর্শণ কালে ভগবানের শরীর হতে ছয়রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল্। ছয়রশ্মি যথা:- নীল, পিত, লোহিত , ওদাত, মুঞ্জিষ্ঠা, প্রভাসর।
১। নীল:- ভগবান বুদ্ধের কেশ রাশি ও চক্ষুদ্ধয়ের নীলবর্ণ স্থান হতে প্রথম জ্যোতি নীল রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। অনন্ত আকাশের নীল বর্ণ সদৃশ সর্বপ্রাণির প্রতি সীমাহীন মৈত্রী পরায়নতা। ইহা তথাগত বুদ্ধের বিমুক্তির চিহ্ন। এই নীল রশ্মি মৈত্রী পারমী।
২। পীত বা হলদে:- সম্যক সম্বুদ্ধের গেরূয়া চীবর হতে দ্বিতীয় পীত দ্বিতীয়, পীত রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। ইহা ত্যাগ সাধুতা ও বৈরাগ্যের চিহ্ন। এই রশ্মির অর্থ নৈস্তম্য পারমী।
৩। লৌহিত বা লাল রশ্মি:- তৃতীয় জ্যোতি বুদ্ধের ত্বকের মধ্য হতে বের হয়েছিল। বুদ্ধত্ব লাভের জন্য সংসারে জন্ম জন্মান্তর তেজবলে আপন জীবন উৎর্সগ করেছিলেন। কোন সময় তেজচ্যুত হয়নি। এর অর্থ তেজষ্কান, ধৈর্য্য ও বীরত্ব গুন। এই লৌহিত বর্ণ বীর্য্য পারমী।
৪। ওদাত বা শ্বেত বর্ণ:- চতুর্থ জ্যোতি বা শ্বেতবর্ণ সম্বুদ্ধের ৪০টি শ্বেতবর্ণ দন্তরাজি চক্ষুদ্বয়ের শ্বেতস্থান হতে এই রশ্মি প্রকাশিত হয়েছিল। এর অর্থ সরলতা ও উদারতা। ইহা দান পালমীর চিহ্ন।
৫।মুঞ্জিষ্ঠা বা কমলা:- পঞ্চম জ্যোতি মুঞ্জিষ্ঠা ( ঈষৎ লাল বা পাতলা লাল মিশ্রিত হলদে রং) ভগবান বুদ্ধের শরীর ও চীবরের সমন্বিত প্রতীক এর অর্থ সাম্য, অহিংসা ও মুক্তি মার্গে উপনীত হবার চিহ্ন্। ইহা ক্ষান্তি পারমী।
৬। প্রভম্বর বর্ণ:- ইহা উপরোক্ত সমস্ত রশ্মির মিশ্রিত জ্যোতি। উপরোক্ত পাচ বর্ণের উজ্জ্বল আলো পর পর পাঁচ বর্ণ যুক্ত রং উপর থেকে নীচের দিকে যথাক্রমের নীল, পীত, লোহিত, ওদাত, মুঞ্জিষ্ঠা সজ্জ্বিত। িইহা মহামনব বুদ্ধের ৩২ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণের চিহ্ন। এই ষড়রশ্মি, দশ পারমী, দশ উপ পারমী ও দশ পরমার্থ পারমী পূর্ণ সম্যক সম্বুদ্বের প্রজ্ঞা পারমী।
এ ষড়রশ্মি যুক্ত বিশ্ব বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা ভগাবান বুদ্ধের প্রদর্শিত দু:খ হতে মুক্তি লাভের পথ নির্দেশক্ যারা মুক্ত পুরুষ তারা চারি আর্য সত্য ও জ্ঞানের পতাকা সদৃশ সমুন্নত। যারা জ্ঞানের উন্নত তাঁরাই সুখী। যেই জ্ঞান দু:খ বুদ্ধি কারক সেই জ্ঞান কখনো উন্নত নয়। কাজেই ষড়রশ্মি যুক্ত বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা জ্ঞানী মানবের সকল দু:খ নিবাসের প্রতিক স্বরূপ। যাঁরা বিমুক্তিকামী তারা এই পতাকাতলে আশ্রয় লাভের অধিকারী। দু:খকে যাঁরা বৃদ্ধি করবে তাঁরা কখনো উন্নত নহে এবং তাদের হতে মুক্তিলাভ করা সুদুর পরাহত। যারা দু:খ নাশকারী ও সুথী তাঁরা দেবমানব সবার উর্দ্ধে।