বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, বান্দরবান
২০১৭ সালের এশিয়া অঞ্চলের ‘কমনওয়েলথ ইয়াং পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ১৭ জনের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মেয়ে উখেংচিং মারমা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে অনুপ্রেরণামূলক কাজের জন্য কমনওয়েলথ সারা বিশ্বের যুব ব্যক্তিত্বদের মধ্য থেকে এই তালিকা তৈরি করে l
উখেংচিং মারমা ২০১৭ সালের জন্য এশিয়া অঞ্চলের ‘কমনওয়েলথ ইয়াং পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে চূড়ান্ত তালিকায় মনোনীত হয়েছেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে অনুপ্রেরণামূলক কাজের জন্য কমনওয়েলথ সারা বিশ্বের ১৭ জন যুব ব্যক্তিত্বের মধ্যে তাঁকেও এই তালিকায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তৌফিক আহমদ খান নামে আরেকজনের নামও তালিকায় রয়েছে।
চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী উখেংচিংদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার চংড়াছড়ি। তবে তাঁর বাবা-মা বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে পানখাইয়াপাড়ায় থাকেন। তাঁর বাবা অংক্য জেয় মারমা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা, মা হাসপাতালের নার্স তত্ত্বাবধায়ক। বান্দরবানের পাহাড়ি তুলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মং সানু মারমা তাঁর চাচা।
উখেংচিং মারমার এই অর্জনের খবর জানিয়ে মং সানু মারমা বলেন, কমনওয়েলথ ইয়াং পারসন অব দ্য ইয়ারের তালিকা প্রকাশিত হয় ১ মার্চ। সে তালিকায় উখেংচিংয়ের সঙ্গে তৌফিক আহমদ খান নামের বাংলাদেশি আরও একজনের নাম রয়েছে। কমনওয়েলথের বছরের সেরা তরুণ না হতে পারলেও এই অর্জনও কম কিছু নয়।
কমনওয়েলথের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন এমন তরুণদের কমনওয়েলথ ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ জন্য এশিয়া, এশিয়া-প্যাসিফিক, ক্যারিবীয় অঞ্চল, আফ্রিকা ও ইউরোপের কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর তরুণদের নির্বাচিত করা হয়। ২০১৭ সালে পাপুয়া নিউগিনি ও নাইজেরিয়ার দুই তরুণকে কমনওয়েলথ ইয়াং পারসন অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু কী জন্য এই এই মনোনয়ন? কী করেছেন উখেংচিং? মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি খাগড়াছড়িতে সাত শ কিশোরীকে নিয়ে ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময়কালে স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করেছেন। এর ফলে কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হয়েছ। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে উদ্যোগী হওয়ায় তিনি এই মনোনয়ন পান। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছেন।
এই মনোনয়ন পেয়ে ভীষণ খুশি উখেংচিং মারমা। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ যুব ব্যক্তিত্ব হিসেবে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশি। তবে কমনওয়েলথ পুরস্কার না পাওয়ায় বুঝতে পেরেছেন এখনো করার অনেক কিছু আছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার, শিক্ষা, কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।
উখেংচিং মারমার বাবা অংক্য জেয় মারমা বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। এর মধ্যে উখেংচিং বড়। তাঁর সাফল্যে আমি ভীষণ খুশি। আমি চাই আমার মেয়ে বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠুক। সেই লক্ষ্যে সে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।’
সুত্র: প্রথম আলো