সফলদের স্বপ্নগাথা
অমিত চাকমার জন্ম রাঙামাটিতে, ১৯৫৯ সালে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে আলজেরীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি পাড়ি জমান ভিনদেশে। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে রসায়ন প্রকৌশল বিষয়ে এমএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর উপাচার্য ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনের বক্তা ছিলেন তিনি।

অমিত চাকমা, ছবি: ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
যদিও রাঙামাটির পাহাড়ে আমার জন্ম এবং চাকমা আমার মাতৃভাষা, ছোটবেলা থেকে বাংলা শিখেছি আর বাংলায় পড়াশোনা করেছি।
আজ ৪০ বছর ধরে বিদেশে থাকার কারণে আমার বাংলার দক্ষতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তবুও বাংলা ভাষা আর স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বাংলায় বক্তব্য দেওয়ার আবেগাপ্লুত ইচ্ছা।
তাই আমি যতটা সম্ভব আমার বক্তব্য বাংলায় দেওয়ার চেষ্টা করব। আজ আপনারা বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উঁচু মানের প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি অর্জন করতে আপনাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। যদিও আমাকে আপনাদের মতো কোনো কাজই করতে হয়নি, তবুও আমি সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জন করে আপনাদের সহপাঠী হতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি, তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার অন্তরে একটি বিশেষ স্থান জুড়ে রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পারিবারিক। আমার প্রয়াত ছোট বোন নমিতা চাকমা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাঁর স্বামী ড. প্রদানেন্দু চাকমা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাঁদের ছেলে অনিক চাকমা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার অ্যাকাডেমিক সম্পর্ক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। সর্বোপরি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আবেগমাখা সম্পর্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জন্মভূমির শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আমার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। আমার বড় ভগ্নিপতি আর আমার ছোট দিদি দুজনেই শিক্ষক। আমার ছোট বোনের স্বামী প্রফেসর প্রদানেন্দু চাকমা আর আমি আজ উপাচার্যের দায়িত্ব পালনে নিবেদিত।
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার বিশেষ এই আবেগের সম্পর্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নীতিবাক্য’—শিক্ষাই আলো। শিক্ষার জন্য আলোর চেয়ে কোনো ভালো রূপক আর হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনক এবং আমেরিকান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রধান রচয়িতা টমাস জেফারসন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। টমাস জেফারসন বলেছিলেন, ‘কেউ যদি আমার মোমবাতির দীপশিখা থেকে নিজের মোমবাতির দীপ জ্বালায়, তাতে যেমন আমার বাতির আলো কমে না, তেমনি যে আমার কাছ থেকে ধারণা বা জ্ঞান পায়, সে তা গ্রহণ করলে আমার নিজের জ্ঞান ম্লান হয় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের মোমবাতির সমতুল্য। এটির গুণী শিক্ষকমণ্ডলী যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে অতীতের এবং বর্তমানের সব শিক্ষকের প্রতি ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা জানাই।
আমার লেখাপড়ার পেছনে আমার মা-বাবার অবদান অতুলনীয়। তাঁদের নির্দেশনা, অনুপ্রেরণা ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া আমার আজ কানাডার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সৌভাগ্য হতো না।
আমার মা আলো চাকমা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় আমি খুবই আনন্দিত।
আমি কেবলই আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া কিছু শিক্ষার বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করব।
আমার কর্মজীবনের সফলতার কারণ জানতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন । আমি আপনাদের মতো মেধাবান না হলেও মনোযোগসহকারে পড়াশোনা করেছি, উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছি। আমার অনেক মেধাবী ও কর্মঠ সহপাঠীও তা-ই করেছে। কিন্তু সবার কর্মজীবনের সফলতা একই হয়নি। কী কারণে এই ব্যবধান তার কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবুও আমার নিজের অভিজ্ঞতা আর সফল ব্যক্তিদের নিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইভি স্কুল অব বিজনেসের গবেষণা থেকে পাওয়া কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
সর্বস্তরের সফল নেতাদের তিন ধরনের উপাদান থাকে: ১. যোগ্যতা, ২. কর্মনিষ্ঠা ও ৩. স্বকীয়তা। যাঁরা নেতৃত্বের পদ অর্জন করেন, যোগ্যতা আর কর্মনিষ্ঠা তাঁদের কমবেশি সবারই থাকে এবং লোকবিশেষে এ দুটোর ব্যবধান খুব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্বকীয়তা হলো এমন একটা গুণ, যা ব্যক্তিভেদে অনেক ব্যবধান হয়। তাই আমি আমার মূল উপদেশ স্বকীয়তার ওপর রাখব।
আপনারা সবাই মেধাবী বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পেরেছেন। এই ডিগ্রি আর মেধাকে কীভাবে কাজে লাগাবেন, তার ওপর নির্ভর করবে আপনাদের সফলতা। আপনাদের মেধাকে ভালো কাজে লাগাতে হবে। আপনাদের মতো মেধাবান যুবক-যুবতীর প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের।
যুগ যুগ ধরে মানবজাতি একদিকে যেমন অনেক উন্নতি সাধন করেছে, অন্যদিকে একই সময়ে অনেক বড় আকারের সমস্যারও উৎপত্তি হয়েছে। আপনাদের বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের সমস্যার সমাধান খুঁজতে নিবেদিত হতে হবে। এর জন্য জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। মনে রাখবেন, এই ডিগ্রি প্রাপ্তি আপনাদের শিক্ষাযাত্রার সমাপ্তি নয়, এটা একটা বিশেষ মাইলফলক মাত্র। শিক্ষা একটি আজীবন প্রক্রিয়া।
আপনারা বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং এসব বিষয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন। শিক্ষার মানে শুধু শাস্ত্রজ্ঞান অর্জন নয়। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মনের জানালা খুলে দেওয়া, মনকে বিকশিত আর উন্মুক্ত করা।
ইংরেজিতে একটা বচন আছে, ‘মন একটা প্যারাস্যুটের মতো, এটা খোলা থাকলেই সবচেয়ে ভালো কাজ করে।’ গ্রিক দার্শনিক এবং মহান শিক্ষক সক্রেটিসের শিক্ষকতার মূল বিষয় ছিল ভালো আর মন্দের বিশ্লেষণ। তিনি বলেছিলেন, ভালো জিনিস একটাই, তা হলো জ্ঞান। আর মন্দ একটাই, অজ্ঞানতা। সক্রেটিসের সমসাময়িক এই অঞ্চলেরই আরেক দার্শনিক গৌতম বুদ্ধ এক দেশনায় একই বিষয়ে বলেছিলেন, ‘মূর্খকে সেবা কোরো না, পণ্ডিত ব্যক্তিকে সেবা করো।’
সক্রেটিসের শিক্ষা আর বুদ্ধের দেশনার আড়াই হাজার বছর পরে আমাদের শিক্ষার পরিধি অনেক বেড়েছে। এরই কারণে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবে কি তা প্রতিফলিত হয়েছে?
ভালো আর মন্দের বিবেচনা শুরু করতে হবে সর্বপ্রথম নিজেকে নিয়ে। সক্রেটিস আরও বলেছিলেন, অপরীক্ষিত জীবন অর্থহীন। যতই বেশি জ্ঞান অর্জন করবেন, ভালো আর মন্দ বিবেচনা করার ক্ষমতা ততই বেশি বাড়বে। সেই অর্জিত জ্ঞানকে যদি সৎ কাজে লাগান, তাহলে আপনাদের স্বকীয়তা আরও বিকশিত হবে। আপনারা তত বেশি নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার দৃঢ়বিশ্বাস বিকশিত স্বকীয়তা এবং নীতির ভিত্তিতে ব্যক্তিগত বা কর্মজীবন যত বেশি পরিচালিত করবেন, তত বেশি সফলতা অর্জন করবেন।
স্বকীয়তার বিষয়ে আমার সীমিত সময়ে দেওয়া বক্তব্য আপনাদের কাছে বিমূর্ত মনে হতে পারে। তাই ছোটবেলার শেখা কিছু সুন্দর উদাহরণ দিচ্ছি।
সর্বদা সত্য কথা বলিবে, চুরি করা মহা পাপ—এই দুটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের অর্থ কিন্তু অনেক গভীর। এই দুটি নীতি মেনে চলা নিয়ে যদি শুরু করেন, সেটা হবে স্বকীয়তা গড়ে তোলার এক ভালো সূচনা।
জীবনযাত্রায় আপনারা অনেক অন্যায়ের সম্মুখীন হবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা তাঁদের উত্তরসূরি। তাঁদেরকে আদর্শ বিবেচনা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাদের সাধ্যমতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবেন।
আবার ফিরে যাই সেই ছোটবেলার শেখা নীতিবাক্যে: অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে।
নিজেও কোনো অন্যায় করবেন না, আর অন্যায়কে সহ্যও করবেন না।দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না।সাধারণ মানুষের আর সমাজের দুর্বল ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দেবেন না।একদিন আপনারা নেতৃত্বের অবস্থানে যাবেন।মনে রাখবেন, কবিগুরুর অমর বাণী: যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।
মনে রাখবেন, আপনারা সবাই সম্মিলিতভাবে জগৎটাকে বদলে দিতে পারেন। আপনারা মেধাবী। আপনাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। মেধা, স্বকীয়তা আর নীতির বলে আপনারা মানব জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেন। নিজেদের পূর্ণ সম্ভাবনাগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন। নিজেকে আবিষ্কার করুন। নিজেকে ছাড়িয়ে যান। উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে দৃঢ়তা আর পরিশ্রম হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। বড় বড় স্বপ্ন দেখুন। ছোট থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যান।
‘সব্বে সত্তা সুখিতা হন্তু’
আপনাদের সবার মঙ্গল কামনা করি।
সুত্র: প্রথম আলো
Prof. Dr Amit Chakma’s speach is quite meaningful and imperative for the Scholars who are conferred on different degrees,
diplomas . Some points he emphasized the
scholars that they must be self-relient,whole
-hearted ,sincere & honest in that which they
aspire for.The objective of aquiring degrees
is not not for self benefit & enlightenment
but to benefit & enlighten the downtrodden
people beside you . I’ll stic to one point that
we should be morally high to render service
to society & our country . Prof Amit Chakma’s 50 th convocation speach was grave, meaningful & a guideline for the scholars who
gloriously passed out. I respectfully congratulate Prof Amit’s timely awaring speach. I salute him for what he said to the
scholars of Bangladesh. I also take the privilege of growing up at the place where he
hails from. With all reverence to the VC Prof
Amit .