1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

নাগার্জুনাকোন্ডা

প্রতিবেদক
  • সময় শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭
  • ৯৬৮ পঠিত

তেলেগু সিনেমার নায়ক নাগার্জুনাকে অনেক দিন ধরেই দেখছেন মো. রেয়াজুল হক। নামটি নিয়ে কৌতূহলও বাড়ছিল দিন দিন। উৎস খুঁজতে চাইছিলেন। ফিরে গেছেন প্রায় দুই হাজার বছর আগেনাগার্জুনা ছিলেন খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের এক মহাযানী বৌদ্ধ গুরু। দক্ষিণ ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারের প্রাণপুরুষ তিনি। নাগার্জুনার নাম থেকেই হয় নাগার্জুনাকোন্ডা। ইক্ষাকু রাজবংশের (২২৫-৩২৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজধানী ছিল নাগার্জুনাকোন্ডা। ১৮০০ বছর আগের এক সমৃদ্ধ জনপদ। বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টর জেলায় এ জায়গা। শেষ ইক্ষাকু রাজা রুদ্রপুরুষ মারা যাওয়ার পর জায়গাটির পতন শুরু হয়।

এস ভেঙ্কটরামায়া নামের একজন শিক্ষক এর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন ১৯২৬ সালে। প্রধান অংশ চলে গেছে একটি হ্রদের মাঝখানে। কৃষ্ণা নদীতে বাঁধ দেওয়ার ফলে এ হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। নাম নাগার্জুনাসাগর। পুরনো আমলের একটি বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব এখনো আছে, যেখানে বৌদ্ধভিক্ষুসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষ স্নান করত।

নাগার্জুনাকোন্ডায় তখন গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, মঠ, মন্দির ও আশ্রম। চীন, আফগানিস্তান, বাংলা ও শ্রীলঙ্কা থেকে বিদ্যা লাভের জন্য এখানে যেত শিক্ষার্থীরা। ইক্ষাকু রাজারা সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন; কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।

নাগার্জুনাকোন্ডায় ব্যাপক খননকাজ পরিচালিত হয়। গবেষকরা বলছেন, খ্রিস্ট অব্দ শুরুর গোড়ার দিকে ওই এলাকায় ৩০টিরও বেশি বিহার ছিল। গবেষকরা আরো বলছেন, শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তৃত হয়েছে এখান থেকেই। খননের ফলে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায়, সাতবাহন রাজবংশের (খ্রিস্টপূর্ব সময়কালে সাতবাহন রাজবংশের সূচনা) দ্বিতীয় রাজা শ্রীবীরপুরুষাদাতা এবং তাঁর ছেলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তাঁরা মন্দির প্রতিষ্ঠায় অর্থ জোগান দিতেন। শিলালিপি থেকে জানা যাচ্ছে, নাগার্জুনাকোন্ডার প্রধান স্তুপাটি তৈরি করতে ১০ বছর লেগেছিল, এর উদ্যোক্তা ছিলেন রাজকুমার কামতিসিরি। শিলালিপিগুলো মূলত ব্রাহ্মী। কিছু আছে প্রাকৃত ভাষার আর কিছু সংস্কৃতলিপি।

পণ্ডিত নাগার্জুনা

নাগার্জুনাকে বৌদ্ধ দর্শনের অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তি ধরা হয়। তিনি বৌদ্ধ মহাযানী শাখার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। অনেক ভক্ত তাঁকে বলেন দ্বিতীয় বুদ্ধ। জন্ম হয়েছিল এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। যৌবনেই তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। তিনি শূন্যতা (এম্পটিনেস) দর্শনের প্রধান প্রবক্তা। তাঁর মূলামাধ্যমিকাকরিকা বা মধ্য পন্থার মৌলিক শ্লোকগুলোর একটি খুব বিখ্যাত :

শূন্যতা ধরা গেলে সব ধরা গেল কিছুই ধরা গেল না যদি শূন্যতা না ধরা যায়। তাঁকে প্রজ্ঞাসূত্রেরও আবিষ্কারক বলা হয়। সূত্রগুলোর মধ্যে হৃদয় সূত্র বা মহাপ্রজ্ঞাপারমিতা এবং হীরক সূত্র বা বজ্রচেদিকা সূত্র উল্লেখযোগ্য।

সূত্রগুলো পেয়েছিলেন নাগদের কাছ থেকে

প্রজ্ঞাপারমিতার সূত্রগুলো নাগার্জুনার নিজের লেখা নয়। গবেষকরা বলছেন তিনি এগুলো গ্রন্থনা করেন এবং অনেকগুলোকে নতুন ভাব দেন। লোকশ্রুতি তিনি এগুলো পেয়েছিলেন নাগদের কাছ থেকে। পুরাণে আছে বুদ্ধের শিক্ষা সূত্রগুলো নাগরা (সাপ) পাহারা দেয়। নাগরাই সূত্রগুলো নাগার্জুনাকে দিয়েছে এবং তিনি সেগুলো মানব জগতে ফিরিয়ে এনেছেন।

নাগার্জুনাসাগর বাঁধ

অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুর জেলা এবং তেলেঙ্গানার নলডোঙ্গা জেলার মাঝখানে এ বাঁধ। হায়দরাবাদ শহর থেকে এটি ১৫৩ কিলোমিটার দূরে। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বাঁধগুলোর একটি। বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সালে, শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। এর দৈর্ঘ্য ১৫৫০ মিটার। নদীতল থেকে উচ্চতা ১২৪ মিটার। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন জওয়াহেরলাল নেহরু। ৮১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পন্ন হয় এখান থেকে।

নাগার্জুনাকোন্ডা জাদুঘর

নাগার্জুনাসাগর বাঁধ এলাকার একটি দ্বীপে এ জাদুঘর। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এটি পরিচালনা করে। খোলা থাকে শুক্রবার ছাড়া সব দিন। ১৯২৭ সালে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় নাগার্জুনাকোন্ডায়। প্রথম প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যায় ১৯২৮ সালে। ১৯৩১ সাল পর্যন্ত চলেছিল প্রথম দফার খননকাজ। স্তুপা, চৈত্য ও বিহার উন্মোচিত হয় তখন। ১৯৫৪ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার খননকাজে এক শরও বেশি পুরাকীর্তি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর মধ্যে প্রস্তর যুগের প্রত্নদ্রব্যও রয়েছে। প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী জাদুঘরের পাঁচটি গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়। প্রধান গ্যালারিতে আছে ইক্ষাকু আমলের প্রত্নসামগ্রী। ইক্ষাকু আমল পরবর্তী প্রত্নসামগ্রী আছে দ্বিতীয় গ্যালারিতে। তৃতীয় গ্যালারিতে নিমজ্জিত উপত্যকার মডেল রাখা হয়েছে। হলঘরের মেঝেতে খনন এলাকার পুরো মডেল প্রদর্শিত হচ্ছে। এ জাদুঘরের অন্যতম দ্রষ্টব্য বেশ কিছু বড় পাথর। এগুলো মৃতদেহ সৎকারের জায়গায় রাখা হতো। দেখতে ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের মতো। গবেষকরা আশ্চর্য হয়েছেন জানতে পেরে, নাগার্জুনাকোন্ডার প্রধান স্তুপাটি ছিল ৮০ ফুট উঁচু।

 সুত্র
কালের কন্ঠ

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!