1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

আলোকচিত্রে অং মাখাইয়ের স্বপ্ন দেখা

প্রতিবেদক
  • সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭
  • ৪৯৬ পঠিত

‘মানুষের নেতিবাচক আচরণ থেকেই আমি এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাই। নতুন করে স্বপ্ন দেখি।’ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ২৪ বছর বয়সী অং মাখাই চাক। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারী আলোকচিত্রী তিনি। ছবি তোলার কাজ করতে গিয়ে কম বাধা পেরোতে হয়নি তাঁকে। ‘মেয়ে হওয়াতে রোজকার সংগ্রামের মাত্রা আরও বেড়ে যায় আমার। আশপাশের মানুষও আমার ফটোগ্রাফিকে ভালোভাবে নেয়নি।’ তারপরও এগিয়ে চলছেন অং মাখাই। এখন তিনি কাজ করছেন ফটো গ্যালারি দৃকে, আলোকচিত্রী হিসেবে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির অনেক মেয়ের কাছে চাকরি করাটাই যখন স্বপ্ন, অং মাখাই তখন ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়ান, ছবি তোলেন। দেশে-বিদেশে সেই ছবির প্রদর্শনী হয়। অংয়ের জন্মস্থান নাইক্ষ্যংছড়িতে।
শুরুতে ছবি তোলাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি অং মাখাই। তিনি বলেন, ‘হুট করেই ফটোগ্রাফিতে আসা। স্কুলে পড়ার সময় “ফটোগ্রাফি” শব্দটিই শুনিনি।’ ২০০৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পরের সময়টা কাজে লাগাতে চান তিনি। বড় বোন উচাছা এ চাকের পরামর্শে ঢাকার পাঠশালায় ফটোগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হন। অবশ্য কলেজে পড়ার সময় বড় বোনের বন্ধুদের ক্যামেরা ধার করে মাঝেমধ্যে ছবি তুলতেন অং মাখাই। বেসিক শেষ করে অ্যাডভান্সড কোর্সে ভর্তি হন। পরে তিন বছরের ডিপ্লোমা করেন পাঠশালা থেকেই। অং মাখাই বলেন, ‘ফটোগ্রাফিতে আরও কী কী করা যায়, সেটা জানতেই তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আর নিজেকে আবিষ্কারের নেশাতেই মূলত ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেওয়া।’
চার বোনের মধ্যে সবার ছোট অং মাখাই। ১৮ বছর বয়স থেকে ছবি তোলেন। অথচ বাবা-মায়ের কত নির্ঘুম রাত কেটেছে তাঁকে স্বনির্ভর করতে। ‘যা করতে চেয়েছি, তা-ই পেরেছি। পরিবার কিছুই চাপিয়ে দেয়নি।’ পরিবারকে পাশে পেলেও ঢাকা ও নাইক্ষ্যংছড়ি; দুই জায়গাতেই তাঁকে বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। অং মাখাই বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই রাস্তায় বের হলে টিজড হতে হয় না।’ একটু চুপ থেকে আবার বলেন, ‘অবাক লাগে এই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে থেকে বাদ যায় না রাস্তার পাশের টোকাইও।’
হাতে সময় থাকলে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন চুপচাপ স্বভাবের অং মাখাই। উত্ত্যক্তকারীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন এর খারাপ দিক। তবে কাজ নষ্ট করে প্রতিবাদ করার পক্ষপাতী নন তিনি। কোনো প্রতিবন্ধকতাই অং মাখাইকে তাঁর লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে পরের দিন কাজে নামেন; যদিও মনের কোণে খারাপ লাগা লেগে থাকে।
অং মাখাই মূলত নানা আয়োজন, খাবার ও পণ্যের ছবি তোলেন। পাশাপাশি, ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। দেশে-বিদেশে যৌথভাবে তাঁর তোলা ছবির বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়েছে। এ পেশায় আসার কারণে নিজের অন্তর্মুখিতা কেটে যাচ্ছে—এটাকে ইতিবাচক দিক মনে করেন অং মাখাই। কর্মশালা করার সময় অন্য দেশের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেও ভালো লাগে তাঁর। ছবি তোলার পাশাপাশি বই পড়তে, গান শুনতে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি। রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আছে বিশেষ দুর্বলতা। খেতে পছন্দ করেন ভাতের সঙ্গে কাইংরুবুং ও বাঁশ কোরল।
নিজেকে একজন আলোকচিত্রী হিসেবেই দেখতে চান অং মাখাই চাক। তিনি বলেন, পেশা হিসেবে আলোকচিত্র চমৎকার এবং চ্যালেঞ্জিং। সফলতা পেতে মানসিক প্রস্তুতি ও দক্ষতার বিকল্প নেই। পেশার প্রতি ভালো লাগা, আবেগ থাকতে হবে। নারীদের মনে রাখতে হবে, ফটোগ্রাফির জগতে পরিশ্রম আর সৃজনশীলতাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।

সুত্র: প্রথম আলো

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!