পুরাকীর্তি
খননকাজে ময়নামতি প্রাসাদে অষ্টম শতকের বৌদ্ধ মন্দির এবং একটি গুপ্ত পথের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানালেন আবুল কাশেম হৃদয়
ময়নামতি প্রাসাদটি লালমাই-ময়নামতি পাহাড়শ্রেণির একেবারে উত্তরে বিচ্ছিন্ন একটি পাহাড়ের চূড়ায়। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে। সমতল থেকে ১৫.২৪ মিটার উঁচু। নওগাঁর পাহাড়পুর মন্দির, জগদ্দল বিহার, বগুড়ার ভাসু বিহার, পাহারপুর বিহার এবং শালবন বিহারের সমসাময়িক সময়েই এটি নির্মিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, এটি অষ্টম থেকে ১২ শতকের পুরাকীর্তি। সেখানেই এখন খননকাজ চলছে। কাজের শুরুতে চতুর্দিকে সীমানা দেয়াল দেওয়া একটি মাটির ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে লাগোয়া পূর্ব থেকে পশ্চিমে একটি গুপ্ত পথও পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার বা টেম্পল যেমন রূপবান মুড়া, শালবন বিহারের মূল সড়ক পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে থাকার কারণে এই বৌদ্ধ বিহারের মূল সড়কটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকেই আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খননকাজের সঙ্গে জড়িত গবেষণা সহকারী সঞ্জয় কুমার রায় জানান, ‘খননের পর একটি সুন্দর কানাগলি বা গুপ্ত পথ পেয়েছি, যেটা দিয়ে গোপনে মানুষ পালিয়ে যেতে পারে। যদিও এটাকে ক্যানেলের মতো মনে হয়, কিন্তু এর উচ্চতা অনেক বেশি। সাধারণত ক্যানেলের উচ্চতা এতটা হয় না। সে জন্য আমরা মনে করছি, বিহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। পালানোর গুপ্ত পথ। ’
তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য প্রাথমিকভাবে একটি ধারণার আশ্রয় নেওয়া হয়। আমরাও ধারণা করছি, সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যে বৌদ্ধদের প্রায় ১৫০ বছরের বিস্তারের পর সেখানে সেন কিংবা মুসলমানদের আগমন ঘটেছিল। যেহেতু সে সময় নদীকেন্দ্রিক যাতায়াতব্যবস্থা ছিল। এই গুপ্ত পথটি মূলত ছিল একটি নদী। বিপদের সময় সেই নদী দিয়ে এখানে নৌকা আসা-যাওয়া করত। সেটি মেঘনার শাখা-উপশাখা হতে পারে। ’
বাংলাদেশে যত খনন হয়েছে, কোনো বৌদ্ধ বিহার কিংবা মন্দিরে এ রকম সীমানা দেওয়ালের সঙ্গে গুপ্ত পথ বা রাস্তা পাওয়া যায়নি। তবে লালবাগ দুর্গে বুড়িগঙ্গায় যাওয়ার জন্য একটি সুড়ঙ্গপথ পাওয়া গেছে। কিন্তু এখানে যে সুড়ঙ্গপথ পাওয়া গেছে, তা আরো বহু আগের। তাই এটাকে বড় প্রাপ্তি মনে করা হচ্ছে।
পূর্ব-পশ্চিমের এই গুপ্ত পথের উত্তর-পূর্বে আরেকটি সড়ক রয়েছে। সেখানে একটি সীমানা দেয়াল রয়েছে। বৌদ্ধ বিহার বা মন্দিরগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যা যা থাকা প্রয়োজন, তার তেমন কিছুই এখনো পাওয়া যায়নি। এই খননকাজ শেষ করার জন্য আরো বড় প্রকল্প দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু খননকাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে বোঝা যাবে না এখানে কারা থাকত, কারা পূজা করত বা তাদের জীবনপ্রণালী কেমন ছিল।
গবেষণা সহকারী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘খনন অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি কাজ। সে ক্ষেত্রে বরাদ্দের প্রয়োজন। বর্তমান বরাদ্দ দিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত খননকাজ চালিয়ে যেতে পারব। পরে আবার বরাদ্দ পেলে আমরা কাজ করব। আশা করছি, খনন করে আরো নতুন কিছুর সন্ধান পাব। ’
লাভলী ইয়াসমিনের তত্ত্বাবধানে খনন কাজ করছেন ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান আহমেদ আবদুল্লাহ, দুই গবেষণা সহকারী সঞ্জয় কুমার রায় ও আবু বকর সিদ্দিক। এ ছাড়া রয়েছে আঞ্চলিক অফিসের সার্ভেয়ারসহ ১০ জনের একটি দল এবং ২০-২৫ জনের একটি শ্রমিক দল।