দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি কোনটি? অনেকের হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে মাথায় আসবে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরের কথা।কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না যে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধের মূর্তি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টোছড়া এলাকায় অবস্থিত।জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের এ বৌদ্ধ মন্দির ‘শান্তিপুর অরণ্য কুঠির’ নামে পরিচিত।মন্দিরের বর্তমান বড় ভান্তে ভদন্ত শাসন রক্ষিত মহাস্থবির শান্তিপুর এলাকায় এ অরণ্য কুঠির গড়ে তোলেন। তিনি সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ৮ম শিষ্য।
স্থানীয়রা জানান, শান্তিপুরের গহীন বনে শাসন রক্ষিত ধ্যান করছিলেন। দিনের পর দিন এভাবে খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটা ছোট ঘর তৈরি করেন স্থানীয়রা। এরপর ভদন্ত শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরে মহোদয়ের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুঠির হয়েছে।শান্তিপুর কেনো নাম রাখা হলো তার সঠিক ইতিহাস না জানা গেলেও পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা ‘পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির’ গিয়ে মনটা জুড়িয়ে গেল।
যেকোনো পর্যটকই এখানে প্রথমবার এলে অবাক না হয়ে পারবেন না। কারণ, এখানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধের মূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি তীর্থস্থান। ১৯৯৯ সালে নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তি তৈরিতে সময় লেগেছে ৩-৪ বছর।
পর্যটকদের মূল আকর্ষণও এই গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। সেটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আরও বিভিন্ন ছোট ছোট কুঠির।
কুঠিরে আছে চিকিৎসালয়, পাঠাগার, ভিআইপি বিশ্রামাগার, অফিসকক্ষ, পূণ্যার্থীদের বিশ্রামাগার এবং কনফেকশনারি দোকান।
ইট বিছানো পথের ডান পাশে সুবিশাল মাঠ। মাঠের পূর্বপাশে তৈরি হচ্ছে অনুষ্ঠান মঞ্চ এবং উত্তর পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি বেড়ার ঘর। কথিত আছে, রাধামন ধনপতি নামে এক ভক্ত তুলা সংগ্রহের পর এ রকম একটি ঘরে বিশ্রাম নিতেন। এরপর ভেন ঘরে গিয়ে বুনন করতেন। সেই থেকে প্রতীকীভাবে এটা করা হয়। ওই ছোট ঘরটাও ওই ভাবনা থেকে করা।
এখানকার বাতিঘরে ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের মন বাসনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকেন। গৌতম বুদ্ধের সর্ববৃহৎ মূর্তির সামনে রয়েছে প্রার্থনার সুসজ্জিত স্থান। এর দু’পাশে আছে সিবলী মন্দির ও উপগুপ্ত কাঠের মন্দির। কুঠিরের দক্ষিণ পাশে বড় ভান্তে শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরের বাসভবন ও সাধনারত ভান্তেদের থাকার ঘর।
সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, ভেতরে ১৩টি সাধনা কুঠির রয়েছে। সেখানে ভান্তেরা নির্জনে বসে সাধনা করেন দিনের পর দিন। তাদের সাধনায় বিঘ্ন না ঘটাতেই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
এছাড়াও এ অরণ্য কুঠিরে রয়েছে ভান্তদের জন্য । এখানে এসে পর্যটকরা প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি আগর গাছ, মেহগুনি গাছ, রাবার গাছ, তেজপাতাসহ ৩৫ হাজার বনজ এবং ফলজ গাছ দেখতে পাবেন।