1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

মহাসংঘনায়ক ভদন্ত বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোর’র ১০৮তম জন্ম বার্ষিকী আজ

প্রতিবেদক
  • সময় বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ১৮৮০ পঠিত

স্মরণের আবরণে ভদন্ত বিশুদ্ধানন্দ মহাথের

আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার ২৪তম মহাসংঘনায়ক শ্রীসদ্ধর্মভাণক ভদন্ত বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো’র ১০৮তম জন্ম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ঢাকা ধর্মরাজিক মহাবিহারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে।
এছাড়া মহাসংঘনায়ক পবিত্র জন্মজনপদ হোয়ারাপাড়া গ্রামে ভন্তের পবিত্র শ্মশান ভেদিতে পুষ্পমাল্য প্রদানসহ ধর্মীয় ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে মহা সমারোহে পালন করা হবে ।
গর্বিত জনপদ চট্টগ্রামের রাউজানের পূর্ব গুজরায় জন্ম নিয়েছে তেমনি এক মহান ব্যক্তিত্ব বিশুদ্ধানন্দ মহাথের। বিশুদ্ধানন্দ মহাথের ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের পূর্ব গুজরার রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কর্মধন বড়ুয়া, মাতা চিন্তাবতী বড়ুয়া। বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরের গৃহী নাম শশাঙ্ক বড়ুয়া। স্থানীয় নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে তাঁর স্কুল জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে মহামুনি এ্যাংলো পালি বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি যোগ দেন। ১৯২৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিতৃব্য অগ্রসারের উপধ্যায়ত্বে “প্রবজ্ঞা” ধর্মে দীক্ষিত হয়ে শশান্ত বড়ুয়ার স্থলে নাম রাখা হয় শ্রামনের “বিশুদ্ধানন্দ”।
সে সময়ে তিনি বাংলায় ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধি হয়ে সর্বভারতীয় বৌদ্ধ সম্মেলনে যোগ দেন এবং সেখানে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও নেতাজী সুভাষ বসুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন।
এ সময়ে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ চট্টগ্রামের বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে এদেশে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। তাঁদের অকৃত্রিম দেশপ্রেম বোধ ও স্বদেশ প্রীতি পরবর্তীকালে প্রয়াত মহাথেরের জীবনে বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত করে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩০ সালে স্বীয় গুরু সংঘনায়ক অগ্রসার মহাস্থবিরের নিকট উপসম্প্রদাব্রত গ্রহণ করেন এবং উচ্চ শিক্ষার্থে ভারতের বেনারস গমন করেন।
১৯৩১ সালে তিনি বুদ্ধগয়া, রাজগীর, নালন্দা, সারনাথ, কুশিপাড়া, লুতুম্বিনী প্রভৃতি তীর্থস্থান সমূহ পরিভ্রমণ করেন। ১৩৩৪ সালে বিশুদ্ধানন্দ বৌদ্ধ ধর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য শ্রীলংকার বিদ্যালস্কর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর অধ্যায়নের পর ১৯৩৭ সালে তিনি “শ্রী সদ্ধর্মভাবক” অভিধায় ভূষিত হন। শ্রীলংকা হতে শিক্ষা শেষ করে তিনি নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৩৮ এ তিনি ভাগীরথ নগর হোয়ারা পাড়ায় অগ্রসার জয়ন্তী ও বৌদ্ধ সমিতির সভায় যোগ দেন। ১৯৩৯ এ পালি ভাষায় উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের জন্য হোয়ার পাড়ায় সুদর্শন বিহারে পালি শিক্ষার জন্য “অগ্রসার পালি কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪০ এর দশকে তিনি কলিকাতাস্থ নালন্দা বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় বেনীমাধব বড়ুয়া, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সহায়তায় একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করে আর্তমানবতার সেবায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে দরিদ্র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কল্যাণার্থে নিজ গ্রামের “সুদর্শন বিহারে” অগ্রসার অনাথালয়” নামে একটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি অগ্রসার মহাবিদ্যালয় নামে সুপরিচিত।
১৯৪৪ সালে জনকল্যাণকর মানসে “অগ্রসার স্মৃতি সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালে শিলক বৌদ্ধ সম্মেলনে তিনি “পূর্ব পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ” প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে শিলকে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধদের জাতীয় সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এ বছরে তিনি ঘমরফঢ তণফফমষ্রদধয মত ঈলঢঢদর্ধ্র সম্মেলনে যোগদেয়ার জন্য শ্রীলংকা যান। ১৯৫১সালে ঢাকায় একটি বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং মূখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৫৪ তে রেঙ্গুনে বৌদ্ধ সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে কাঠমন্ডুতে ঘমরফঢ তণফফমষ্রদধয মত ঈলঢঢদর্ধ্র সম্মেলনে যোগ দেন। এ বছর তাঁর উদ্যোগে ‘মাসিক কৃষি’ নামে এক সাময়িকীর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৭ সালে নয়াদিল্লীতে এবং জাপানে বুদ্ধ জয়ন্তীতে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে ভিয়েতনামে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে সে দেশের বৌদ্ধ সমাজের সাতে সংহতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে অনশন ব্রত পালন করেন। ১৯৬২ সালে পূর্বপাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঢাকায় প্রদত্ত জমিতে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা হয়। থাইল্যান্ডের তৎকালিন রাজা ও রাণী এ বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনে আসেন। ১৯৬১ সালে ঢাকায় রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সংবর্ধনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শ্রীলংকা, বার্মা, নেপাল, ভারত, জাপান, আমেরিকাসহ প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে মূল্যবান বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৬৫ সালে তাঁকে মহাস্থবির পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৬৬ সালে তিনি শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধধর্ম ও শান্তি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ঢাকা ধর্মরাজিক বিহারে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ অনাথালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর একক প্রচেষ্ঠায় চট্টগ্রাম শহরে “নব পণ্ডিত বিহার” প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে ‘ঘউৗ’ে সম্মেলনে মানবাধিকার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
১৯৮১ সালে তাঁরই উদ্যোগে বিশুদ্ধানন্দ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টি গঠিত হয়। সেখানে মেধাবী এবং দরিদ্র বৌদ্ধ ছাত্রদের সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনি “নব সমতট” নামক একটি সংবাদ সাময়িকী ও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৪ সালে বিশুদ্ধানন্দের ৭৬ বৎসর আয়ুষ্কাল পূর্তি উপলক্ষে হীরক জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।
১৯৮৫ সালে বালিকাদের জন্য “অগ্রসার শিক্ষায়াতন” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাহাড়পুরে আন্তর্জাতিক সেমিনারের বক্তব্য দেন। ১৯৮৮ সালে তিনি রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়া ভ্রমণ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৯০ সালে তিনি “মহা সংঘনায়ক” পদে অধিষ্ঠিত হন।
বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত (১) “রক্ত ঝড়া দিন” একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে লিখিত যা ১৯৭২ এ প্রকাশিত হয়। (২) “স্মৃতি কথা” একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ যা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। (৩) ভক্তিশতক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। (৪) বৌদ্ধ দর্শনে সত্যদর্শন গ্রন্থটি দ্বিতীয় পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ কলিকাতাস্থ ধর্মাধার বৌদ্ধগ্রন্থ প্রকাশনী কর্তৃক ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়।
বিশুদ্ধানন্দ মহাথের আজীবন বৌদ্ধ সমাজের উ্‌ন্নয়নে ব্রতি থেকে কাজ করেছেন। তিনি যে সকল সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন তা উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং যে সব প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাঁর একটি বিবরণ এখানে প্রদান করছি। (১) বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংস্থা, (২) কমলাপুর ধর্মরাজিক কমপ্লেক্স, (৪) অনাথালয়, (৫) আবাসিক, (৬) হাই স্কুল, (৭) কিন্ডার গার্টেন স্কুল, (৮) বহুমূখী কারিগরি বিদ্যালয়, (৯) পালি কলেজ, (১০) ছাপাখানা তিনটি, (১১) পাঠাগার, (১২) অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতি সংগ্রহশালা, (১৩) মিনি হাসপাতাল, (১৪) আন্তর্জাতিক উপাসনালয় ব্রজ যোগিনী প্রকল্প প্রভৃতি। তিনি বিশ্বধর্ম সম্মেলনে এবং হংকং এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ সেমিনারে যোগদেন এবং মূল্যবান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিশুদ্ধানন্দ মহাথের তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানীত হয়েছেন। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক “তখমা এ পাকিস্তান” সম্মানে সম্মানীত হন। ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক শান্তিপদকে তাঁকে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোস্থ গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মহাত্ম গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে তাঁকে সম্মানীত করা হয়।
সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৫ সালে তাঁকে মরণোত্তর “২১ শে পদকে” ভূষিত করা হয়। আর্ন্তজাতিকভাবে সমাদৃত, চট্টগ্রামের গৌরব বিশিষ্ট বৌদ্ধ ধর্মীয় সাধক, ও সমাজ নির্মাণের অগ্রদূত, সমাজের আলোকিত মহাপুরুষ বিশুদ্ধানন্দ মহাথের
১৯৯৪ সালের ২ মার্চ বিশ্ব বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শোক সাগরে ভাসিয়ে চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। এক বছর পর ১৯৯৫ সালের ১১-১৩ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।।
এ শুভ ক্ষণে আমরা উনার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীরতম শ্রদ্ধা।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!