আমাদের গর্বের ধন, দেশের প্রধানতম ছড়াকার, ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া অবশেষে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক ২০১৭-এ ভূষিত হয়েছেন।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেবেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সংগে তাকেও ২০১৭ সালের একুশে পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পদকের জন্য মনোনীত অন্যান্য বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন- ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শরিফা খাতুন, শিল্পকলায় (সংগীত) সুষমা দাস, জুলহাস উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) তানভীর মোকাম্মেল, শিল্পকলায় (ভাস্কর্য) সৈয়দ আব্দুল্লাহ
খালিদ, শিল্পকলায় (নাটক) সারা যাকের,সাংবাদিকতায় আবুল মোমেন ও স্বদেশ রায়, গবেষণায় সৈয়দ আকরম হোসেন। এছাড়া শিক্ষায় প্রফেসর ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সমাজ সেবায় অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, ভাষা ও সাহিত্যে (মরণোত্তর) কবি ওমর আলী ,শিল্পকলায় (নৃত্য) শামীম আরা নীপা এবং শিল্পকলায় (সংগীত) রহমতউল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম।
সুকুমার বড়ুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণবালা বড়ুয়া।
প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি মামাবাড়ির স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর বড় দিদির বাড়িতে এসে তিনি ডাবুয়া স্কুলে ভর্তি হন৷ কিন্তু সেই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অভাবের তাড়নায় তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে অল্প বয়স থেকেই তাঁকে বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করতে হয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটা সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম, বুট বাদাম ইত্যাদি ফেরী করে বিক্রি করেছেন৷
১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে ৬৪ টাকা বেতনের চাকুরী হয় তাঁর। ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সাথে ১৯৬৪ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক।
সুকুমার বড়ুয়ার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই পাগলা ঘোড়া (১৯৭০, বাংলা একাডেমী), ভিজে বেড়াল (১৯৭৬, মুক্তধারা), চন্দনা রঞ্জনার ছড়া (১৯৭৯, মুক্তধারা), এলোপাতাড়ি (১৯৮০, বাংলা একাডেমী), নানা রঙের দিন (১৯৮১, শিশু একাডেমি) প্রভৃতি।
সুকুমার বড়ুয়া পেয়েছেন বাংলা একাডেমী, আলাওল শিশু সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
সুকুমার বড়ুয়াকে এ পদক প্রাপ্তি তে বিবর্তন পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।