প্রাচীন জনপদ বগুড়ার মহাস্থানে খননে এবার মৌর্য বংশের মাটির দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাটির নিচ থেকে বের করা হয়েছে নানা কারুকার্যমণ্ডিত ইটের তৈরি দেয়াল, প্রকোষ্ঠ ও সুবির্ন্যস্ত রাস্তা। এছাড়াও চতুর্থ তাম্র দুয়ার নামে পরিচিত মহাস্থানগড়ের পশ্চিমপাড়ার উঁচু ঢিবি খনন করে পোড়ামাটি ও পাথরের তৈরি ফলক, নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, খেলনাসামগ্রী, ইট স্টালসসহ শতাধিক প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সাবেক ও বর্তমান পাঁচজন অভিজ্ঞ প্রত্নতত্ত্ববিদকে নিয়ে গঠিত টিম চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে চতুর্থ তাম্র দুয়ার খনন কাজ শুরু করে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা দু’মাস খনন কাজ চালিয়ে উল্লিখিত সংখ্যক ঐতিহাসিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও সমৃদ্ধ যে সম্পদ খুঁজে পাওয়া গেছে তা হলো মৌর্য বংশের তৈরি মাটির দেয়াল, যার সন্ধান মেলে পোড়ামাটির তৈরি ইটের দেয়ালের নিচের অংশে সামান্য বালু দিয়ে ঢাকা অবস্থায়।
খনন কাজে গঠিত টিমের সদস্য ও প্রত্নতত্ত্ব্ব অধিদফতরের সাবেক প্রধান পরিচালক (ডিজি) শফিকুল আলম জানান, মহাস্থানগড়ের পশ্চিমাংশে তাম্র দুয়ার খনন করে পোড়ামাটির দেয়ালের নিচ থেকে যে মাটির দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে তা নিঃসন্দেহে মৌর্য বংশের, এমনকি তার কিছু আগেরও হতে পারে। এছাড়া তাম্র দুয়ারের উভয় ধারে পাহারা কক্ষ এবং এ কক্ষ থেকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য পোড়ামাটির তৈরি ইট দ্বারা সুবির্ন্যস্ত রাস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে।
তিনি আরও জানান, ১৯২২ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখান থেকে পাওয়া গিয়েছিল মৌর্য সভ্যতার আগের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। এবার সন্ধান পাওয়া গেল মৌর্য সভ্যতার শতাধিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র। প্রত্নতত্ত্ববিদদের একজন জানান, এবার খননে মৌর্য ও মৌর্য বংশের আগের কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। এ খননে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদগুলো গুপ্ত আমল (৩২০-৫২৫০ এডি) ও পাল আমল (৭৫০-১১৭৪ এডি) সম্পর্কে অতি সহজে একজন মানুষ বোঝতে সক্ষম হবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক ও খনন কমিটির সদস্য আবদুল খালেক মৌর্য সভ্যতার এ নিদর্শন উদ্ধারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাম্র দুয়ার খনন করে যেসব প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান পাওয়া গেছে মৌর্য সভ্যতার ইতিহাস উদঘাটনে এগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলম জানান, এবারের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মহাস্থানগড় থেকে মৌর্য ও গুপ্ত সভ্যতা ছাড়াও পাল আমলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিভাগের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খাতুন মিতা জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন এসব সামগ্রী নতুন নতুন প্রত্নতত্ত্ববিদদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান সাদেকুজ্জামান জানান, তাম্র দুয়ারের খনন কাজ এখনও শেষ হয়নি। মৌর্য ও তার আগের সভ্যতার তথ্য উদঘাটনে প্রত্নতত্ত্ববিদরা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও জানান, এর আগে খননে মহাস্থানগড়ের মাজার সংলগ্ন বানারসি সরোবর এলাকা খনন করে সেখানেও একই সভ্যতার বহু নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
by BDNEWS