1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারে তীর্থ দর্শন

প্রতিবেদক
  • সময় শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ১৫৬১ পঠিত

তরুণ কান্তি বড়ুয়া

চেঠিয়ো পায়া চুলামণি প্যাগোডায় দর্শনার্থীদের ভক্তি

ভিনদেশী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির মিল-অমিল খোঁজা, বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকের সঙ্গে মিশে মনের ভাব, ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির পারস্পরিক সৌহার্দ্য বিনিময়ে বিদেশ ভ্রমণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশ পরিস্থিতি ও বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারণে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগটুকু মাঝে মাঝে হাতছাড়া হয়ে যায়- কখনও চাকরি জীবনের কর্মব্যস্ততা, কখনওবা অন্য কোনো কারণে।

এবার সস্ত্রীক মিয়ানমার ভ্রমণের সুযোগটা আসে বন্ধুবর অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় সুকোমলকান্তি চৌধুরীর ফোনালাপের মাধ্যমে। প্রস্তাব পেয়ে কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ভেন, প্রজ্ঞানন্দ মহাথের মহোদয়ের কাছে অনুরোধ রাখলাম মিয়ানমার যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে। শ্রদ্ধেয় ভন্তে তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দিলেন, ‘যান ঘুরে আসুন।’

ভিসা প্রক্রিয়া ও অন্যান্য কাজ যথাসময়ে শেষ করে মিয়ানমার যাত্রার প্রস্তুতি সেরে ফেললাম। বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আমরা ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশে যাত্রা করি। তীর্থযাত্রী হিসেবে আমাদের পরিচিতি দেয়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের যথেষ্ট সম্মান ও সহযোগিতা করেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে ১৫৮, পেনসোডন রোডের চট্টল ধর্মদূত বিহারে পৌঁছে যাই। জন্মসূত্রে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে ইয়াঙ্গুনে বসবাসরত বিহার কমিটির সভাপতি বাবু রঞ্জিত বড়–য়া ও সাধারণ সম্পাদক বাবু রঞ্জন বড়ুয়ার আপ্যায়ন সবাইকে সন্তুষ্ট করেছে। শৈশব থেকে ইয়াঙ্গুনে বেড়ে ওঠা ষাটোর্ধ্ব বাদলদার রান্না করা নৈশ আহার আমাদের দলের সব সদস্যকে মুহূর্তেই এক নস্টালজিক পরিবেশে নিয়ে যায়। বিদেশের মাটিতে স্বদেশী রান্নার স্বাদ পেয়ে সবাই তৃপ্তি নিয়ে নৈশ আহার শেষ করি। বাদলদার মুখে শুনেছি তিনি কোনো পেশাদার পাচক নন। বাবার নির্দেশে মিয়ানমারে আসা তীর্থযাত্রীদের নিজের হাতের রান্না করা আহারে আপ্যায়ন করাই তার ব্রত।

বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার সজল বড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চট্টল ধর্মদূত বিহারের কাছে খ্যাতনামা মন্দির শোয়েডাগন প্যাগোডা (স্বর্ণ মন্দির) দেখতে যাই, যেখানে বুদ্ধের পবিত্র চুলধাতু সংরক্ষিত। মন্দিরে প্রবেশ করার পাস সঙ্গে থাকায় সেদিন সন্ধ্যার আগে আবারও সোয়েডাগন প্যাগোডা দেখতে যাই। শৈল্পিক নির্মাণসমৃদ্ধ মনোমুগ্ধকর পরিবেশে মন্দিরের ভিতর-বাইরের অপরূপ সৌন্দর্য ও বুদ্ধমূর্তির স্থাপনাগুলো মুহূর্তেই আমাদের সবার মনে অনাবিল সুখ ও ধর্মীয় আনন্দ অনুভূতি এনে দিয়েছিল। চট্টল ধর্মদূত বিহারে রাতের খাবার শেষে খানিকটা বিশ্রাম নেয়া গেল। কারণ রাত ১২টা ৩০ মিনিটে বাসে করে ইয়াঙ্গুন থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মঞ্জিরা প্রদেশে অবস্থিত চেঠিয়ো পায়ার উদ্দেশে ছুটতে হবে। ভোর সাড়ে ৪টায় একটি জায়গায় আমাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস থেকে নামতে হয়েছিল। কারণ চেঠিয়ো পায়া যাওয়ার পাহাড়ি পথে আমাদের বাস কিছুতেই উঠতে পারবে না। তাই প্রাতরাশ সেরে প্রতিযোগিতামূলক পাহাড় অভিযানে প্রাণান্ত চেষ্টায় লাফিয়ে লাফিয়ে বড় পিকআপ ভ্যান গাড়িতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় শীর্ষে অবস্থিত চেঠিয়ো পায়ার উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হল। ঘণ্টাখানেক পর গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছেও আমাদের যানবাহন স্টান্ডে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ আমাদের দলীয় সদস্যদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরম কাক্সিক্ষত চেঠিয়ো পায়া (চুলামণি প্যাগোডা) দর্শন করি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে। কারণ এখানেই ছিল বুদ্ধের চুলধাতু। আমাদের অনেকেই চেঠিয়ো পায়ায় সোনাপাতা লাগিয়ে দিয়েছিলাম। খাঁড়া পাহাড়ের উপরে চেঠিয়ো পায়ার (চুলামণি প্যাগোডা) আশ্চর্যজনক অবস্থান যে কোনো পর্যটকের মনে মহান ধর্মীয় বিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। চুলামণি প্যাগোডার গোলাকার চৈত্যটি যেন পাথর স্পর্শ করে শূন্যে ভাসছিল। এ মহান তীর্থযাত্রায় আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম ধর্মদূত বিহারের মহাঅধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র থের। সদা হাস্যোজ্জ্বল অমায়িক ভিক্ষু ব্যক্তিত্বটি শুরু থেকেই মন্দিরে আমাদের প্রতি আন্তরিক সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন। চেঠিয়ো পায়া দর্শন শেষে পিকআপ ভ্যানে আবারও পাহাড় শীর্ষচূড়া ছেড়ে একটু সমতলে এসে দুপুরের আহার শেষ করলাম। বাসে ইয়াঙ্গুনের পথে যাত্রা শুরু হল। পথে পাহাড়, সমতল, বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তর, শস্যক্ষেত আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল যে, অঢেল জায়গা-জমির তুলনায় দেশটিতে জনবসতি অনেক কম। ফেরার পথে শোয়েনাম প্যাগোডাসহ আরও কয়েকটি বড় বড় প্যাগোডা দর্শনের সুযোগ হয়েছিল। ইয়াঙ্গুনের খোলা আকাশের নিচে দৃষ্টিনন্দন নির্বাণ শয্যায় বিরাট দুটো বুদ্ধমূর্তি দেখে শান্ত সৌম্য বুদ্ধমূর্তির প্রতি অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানালাম।

পরদিন মিয়ানমারের নতুন রাজধানী নেপিডো’র দিকে যাত্রা করি। উপশান্ত প্যাগোডার পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৌঁছে প্রাতরাশ সেরে উপশান্ত প্যাগোডা (গৌতম মহাবোধি) পরিদর্শন করি। চিত্রকলা সংবলিত প্যাগোডার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য মিয়ানমারের নতুন রাজধানীর বুকে বৌদ্ধ স্থাপত্য ও কৃষ্টির অনন্য নিদর্শন। ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে উপশান্ত প্যাগোডা ছেড়ে আমরা সপ্ত মহাস্থান প্যাগোডায় পৌঁছি, যা বুদ্ধগয়ার মন্দিরের আদলে গড়া নেপিডো’র বুকে ‘নতুন বুদ্ধগয়া’ মন্দির। পথে মধ্যাহ্নভোজ শেষ করে আরও কয়েকটা মন্দির পরিদর্শন শেষে মন্দিরের শহর বেগান পৌঁছে একটি ধর্মশালায় রাত যাপন করি।

পরদিন আনন্দলোক পায়া পরিদর্শনে যাই। বেগান নগরীর অসংখ্য নতুন-পুরনো মন্দির দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। অনেক মন্দির ঘুরে দেখেছি, যেগুলো শত বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মান্দালয় বিভাগের বেগান নগরীকে সত্যিই মন্দিরের নগর মনে হয়েছিল যেমনিভাবে ভ্যাটিকান নগরীকে গির্জার নগরী বলা হয়। মান্দালয় আসার পথে ইরাবতী নদীর তীরে লোকানন্দ বিহার। মান্দালয় শহরের প্রবেশপথে আমরা শৈল্পিক কারুকার্যশোভিত এক পাথর নির্মিত মন্দির দেখি। যেখানে বুদ্ধমূর্তিগুলোও পাথরে খোদই করা। সম্ভবত এ পাথর নির্মিত মন্দিরটি বিশ্বে পাথর নির্মিত প্রধান বৌদ্ধ মন্দির অথবা অন্যতম একটি পাথর নির্মিত মন্দির।

মান্দালয় শহরে অবস্থিত সতিপট্ঠান বিদর্শন বিহার ছেড়ে মেমিওর উদ্দেশ্যে রওনা করি। পাথুরে পাহাড়ের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে মেমিও পৌঁছতে আমাদের সময় লেগেছিল ৪ ঘণ্টা। মেমিও পৌঁছেই আলোকেতা (অলৌকিক) মন্দির দর্শন করি। এরপর আমাদের যাত্রা প্রায় ১ মাইলব্যাপী পাথরের সুড়ঙ্গপথে ইউশিও ইয়ং (জলপ্রপাত) ঘুরে দেখা। জলপ্রপাতের পাশাপাশি পাথুরে পাহাড়ের বুকের মাঝে হাজার হাজার বুদ্ধমূর্তির অস্তিত্ব যুগ যুগ ধরে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের শৈল্পিক সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে দেখি। ফেরার পথে ইরাবতী নদী পেরিয়ে কমিটো রাজমণি চূড়া (মন্দির) ও সেটিগো আন্তর্জাতিক বুদ্ধিষ্ট একাডেমি পরিদর্শন করি।

পনেরো দিনব্যাপী আমাদের মিয়ানমার সফর সফল হয়েছে। যেসব শহর ঘুরে এসেছি সেগুলো খুবই সুন্দর। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আমাদের পূর্ব প্রজন্মের অনেকে বিশেষ করে চট্টগ্রামের অধিবাসী অনেক লোক ইয়াঙ্গুন, মন্দালয়, আকিয়াবসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকরি-ব্যবসা কিংবা ঠিকাদারি কাজে নিয়োজিত। ধর্মপিপাসু বৌদ্ধ নর-নারীরা সুযোগ পেলেই বৌদ্ধ সভ্যতার স্থাপত্য ও শিল্পকলাসমৃদ্ধ দেশটি ঘুরে এলে তীর্থ ভ্রমণের অপার আনন্দ লাভ করবেন আশাকরি।

লেখক : অধ্যক্ষ (অব.) রেক্টর, বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ, সাবেক অধ্যক্ষ, রাঙ্গুনিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম

মিয়ানমার থেকে ফিরে

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

One thought on "মিয়ানমারে তীর্থ দর্শন"

  1. Mong Marma says:

    Hello Bibarton,
    It’s pleasure to see your opened a Buddhist Pilgrimage Tour site which would be very helpful for all Buddhist who would like to go visit Myanmar.
    I would like to greet you from Bangladesh Local Tour Guide (BLTG Travel), Khagrachari.
    I am Mong Marma, Founder Managing Director at Bangladesh Local Tour Guide (BLTG Travel) every year I oranize and in lead of me going visit to Myanmar that you can find from http://www.bltgbd.com or http://www.facebook.com/visitbltg
    Every year do your organize Pilgrimage Tour to Myannmar?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!