অনলাইন ডেস্ক
চীনের জিয়াংজি প্রদেশে একটি জলাধারের সংস্কার কাজ চলার সময় পানির নিচে থাকা ৬০০ বছর পুরনো বুদ্ধের একটি মূর্তির খোঁজ পাওয়া যায়। মূর্তিটি ১২.৫ ফুট লম্বা। গতমাসে সংস্কার কাজের একপর্যায়ে জলবিদ্যুৎ প্রবেশদ্বার এর কাজ করার সময় পানির স্তর নিচে নেমে গেলে স্থানীয় এক গ্রামবাসী সর্বপ্রথম মূর্তিটির মাথার অংশ লক্ষ করেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
মূর্তিটিকে একটি খাড়া বাঁধ এর সঙ্গে হেলান দিয়ে নির্মল দৃষ্টিতে জলাধারটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করছেন, মূর্তিটি মিং রাজবংশের (১৩৬৮- ১৬৪৪) শাসনামলকার হতে পারে। জিয়াংজি প্রদেশের পুরাতত্ত্ব গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক জু চ্যাংকিং সিএনএন-কে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, প্রাথমিক পরীক্ষা থেকে বলা যায় যে মূর্তিটির নির্মাণকাল খুব সম্ভবত মিং রাজবংশের শাসনামলে। এমনকি তারও আগে, ইউয়ান রাজবংশের আমলেও হতে পারে। ধারণা করে হচ্ছে মূর্তিটি কোন প্রত্নতাত্ত্বিক গুপ্তধনের ইঙ্গিত। পানির নিচে একটি মন্দিরের হলঘরের ভিত্তিও পাওয়া গেছে। স্থানীয় নথিপত্র মতে জলাধারটি জিয়ায়োসি নামে কোন প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ এর উপর নির্মিত। প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি ডুবোদল পুরনো শহর ও মূর্তি উভয়ের সম্বন্ধে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এগুলোর সংরক্ষণ পরিকল্পনা নিয়েও কাজ চলছে বলে জানান জু চ্যাংকিং। জু বলেন, পানিতে ডুবে থাকার কারণেই বোধ হয় অবাক করার মতো বিশদ খোদাইসম্পন্ন মূর্তিটি এতদিনেও অক্ষত আছে। পানিতে ডুবে না থাকলে আবহাওয়া পরিবর্তন, মরিচা ধরা ও অন্যান্য কারণে মূর্তিটির ক্ষতি সাধন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে আমরা বিবেচনা করছি। আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মূর্তি ও গোহা খুদাই এর জন্যে চীন একটি আদর্শ স্থান। মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ। যেটা কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বৌদ্ধ মূর্তি। তবে ১৯৬০ সালে চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় এমন বহু নিদর্শন ধ্বংস হয়ে যায়।
হুয়ান ঝিয়ং নামে এক স্থানীয় কর্মকর্তা সিনহুয়াকে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, প্রাচীন মানুষেরা দুই নদীর মোহনায় পানির প্রবাহের বেগ কমাতে আধ্যাত্মিক রক্ষাকারী হিসেবে এই মূর্তি নির্মাণ করে। তবে ১৯৬০ সালে হংম্যান জলাধার নির্মাণের সময় এটি পানিতে ডুবে যায়। তখনকার মানুষেরা ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে অতটা সচেতন ছিল না।
৬০০ বছর পুরনো এই বুদ্ধমূর্তির পুনরুত্থানকে অনেকে সৌভাগ্যের নিদর্শন হিসেবে ভাবছেন। স্থানীয় দর্শনার্থীসহ প্রাচীন এই বুদ্ধমূর্তি নজর কেড়েছে অনেক বিদেশি পর্যটকেরও। অনেক স্থানীয় গ্রামবাসীর চোখে আবার ভেসে উঠছে পুরনো স্মৃতি। হুয়ান কেপিং(৮২) নামে এমনই এক কামার বলেন, ‘আমি মূর্তিটিকে প্রথম দেখেছিলাম ১৯৫২ সালে। আমার মনে আছে, এটিতে তখন সোনার প্রলেপ দেওয়া হচ্ছিল।’