সুলেখা বড়ুয়া
২৫৬০ বুদ্ধাদ্ধে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বুদ্ধের ভাষায় “ত্রিরত্ন” পরম সম্পদ, বুদ্ধ রত্ন, ধর্ম রত্ন এবং সংঘ রত্ন – এ ত্রিরত্ন জগতে দুর্লভ ।
আমরা সবসময় ত্রিরত্নকে সম্মান প্রদর্শন করি বন্দনার মাধ্যমে । আর এ বন্দনা সম্যক চেতনার দ্বারা সম্পন্ন করাটাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলকর ।
বৌদ্ধরা মাত্রই ত্রিশরণ গ্রহণ করে বটে, তার কেউ কেউ অনবগত ভাবে মন্ত্র (মুখস্থ) পাঠের ন্যায় সমাপন করে ।
বাস্তবিক পক্ষে বুদ্ধের মুখ নিশ্রিত সমস্ত সূত্র এবং স্বদ্ধর্ম দেশনা ত্রিপিটক এর অন্তর্ভুক্ত, মন্ত্রের মতো কখনো নহে । পরধর্মে পুজারীরা পুজা করার সময় যাহা মুখস্থ বিবৃত করে তাহাই মন্ত্র । পক্ষান্তরে তন্ত্র মন্ত্র যারা করে, ওরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে উচ্চারণ করে, তাদের ঐ কাজ ফলপ্রসূ হয় বিধায়, মন্ত্রপাঠ তাদেরই কাম্য ।
বৌদ্ধধর্মে যত সূত্র এবং বন্দনা আছে, যে বা যাহারা মন্ত্র পাঠের ন্যায় ব্যবহার করে, তাতে পরধর্ম ব্যক্তিদের মতো সেভাবে ফলপ্রদ হয় ।
তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ শিষ্যানু ও শিষ্যদয়কে উপদেশ দিয়েছেন,
যেমন – অন্ধের ন্যায় অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন ।
এমনকি অন্যের অনুভূতি কিংবা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেও নহে, নিজের চেতনা দিয়ে বাস্তব উপলব্ধির মাধ্যমে অনুশীলন করতে বলেছেন ।
সুতারাং বুদ্ধের নয়গুণ বন্দনা, ধর্মের ছয়গুণ বন্দনা, এবং সংঘের নয়গুণ বন্দনা সমূহ যথাযথ ধীশক্তির মাধ্যমে করার জন্য (বাংলায় অনুবাদ সহ) আমার এ লেখনীর মূখ্য উদ্দেশ্য ।
বুদ্ধ বন্দনা
=======
১/ ইতিপি সো ভগবা অরহং, সম্মাসম্বুদ্ধো, বিজ্জাচরণ সম্পন্নো, সুগতো, লোকবিদ, অনুত্তরো পুরিসদম্ম সারথি, সত্থা দেব মনু সা্নং, বুদ্ধো, ভগবাতি ।
বাংলা অর্থ – ইনি সেই ভগবান যিনি অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ, বিদ্যাচরণ সম্পন্ন, সুগত লোকবিদ অনুত্তর পুরুষ দমনকারী, সারথি, দেব মানবের শাস্তা বা শিক্ষক, বুদ্ধ ও ভগবান ।
২/ বুদ্ধং জীবিত পরিয়ন্তং শরণং গচ্ছামি
যে চ বুদ্ধ অতীতা চ যে চ বুদ্ধ অনাগতা
পচ্চুপন্না চ য়ে বুদ্ধ অহং বন্দামি সব্বদা
নত্থি মে শরণং অঞং বুদ্ধ মে শরণং বরং
এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু মে জয়মঙ্গলং
উত্তমঙ্গেন বন্দেহং পাদপংসু বরুত্তমং
বুদ্ধ য়ো খলিতো দোসো বুদ্ধ খমতু তং মমং
বাংলা অর্থ – আমি সারা জীবনের জন্য বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করছি, অতীতের বুদ্ধগণ, বর্তমানের বুদ্ধগণ ও ভবিষ্যতের বুদ্ধগণকে আমি সর্বদা বন্ধনা করছি ।
অজ্ঞানতা বশত, বুদ্ধের প্রতি কোন দোষ করে থাকলে বুদ্ধ আমায় ক্ষমা করুন ।
ধর্ম বন্দনা
=======
১/ স্বা্কখাতো ভগবতো ধম্ম সন্দিট্’ঠিকো, অকালিকো, এহিপস্’সিকো, ওপনাযিকো, পচ্চতং, বেদিতব্বো, বিঞুহিতী ।
বাংলা অর্থ – ভগবানের ধর্ম সুব্যাখ্যাত, স্বয়ং প্রত্যক্ষ করণীয় কালাকালহীন, “এস এবং দেখ” বলার যোগ্য, উপনয়ন সদৃশ বা ঔপনায়িক (অপায়দ্বার রুদ্ধ করণে এবং আর্যমার্গ আনয়নে সক্ষম), বিজ্ঞগণ কতৃক প্রতক্ষ্য জ্ঞাতব্য ।
২/ ধম্মং জীবিতং পরিয়ন্তং শরণং গচ্ছামি,
যে চ ধম্মা অতীতা চ, যে চ ধম্মা অনাগতা,
পচ্চুপ্পনা চ য়ে ধম্মা অহং বন্দামি সব্বদা
নত্থি মে শরণং অঞং ধম্মো মে শরণং বরং।
এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু মে জয়মঙ্গলং,
উত্তমঙ্গেন বন্দেহং ধম্মঞ্চ তিবিধং বরং
ধম্মো যো খলিতো দোসো, ধম্মো খমতু তং মমং ।
বাংলা অর্থ – আমি আজীবন ধর্মের শরণাগত হচ্ছি । যে ধর্মসমূহ অতীত হয়েছে, যে ধর্মসমূহ ভবিষ্যতে উৎপন্ন হবে, এবং যে ধর্মসমূহ বর্তমানে আছে, আমি সে ধর্মসমূহকে সর্বদা বন্দনা করছি । আমার অন্য কোন শরণ নেই, ধর্মই আমার শ্রেষ্ঠ শরণ এ সত্য বাক্য দ্বারা আমার জয়মঙ্গল হোক । আমি ত্রিবিধ শ্রেষ্ঠ ধর্মকে ( পরিয়ত্তি, পটিপত্তি ও পটিবেধ ধর্ম ) অবনত মস্তকে বন্দনা করছি । অজ্ঞানতা বশতঃ কোন দোষ করে থাকলে ধর্ম আমায় ক্ষমা করুন ।
সংঘ বন্দনা
========
১/ সুপটিপন্নো ভগবতো সাবক সঙ্ঘো, উজুপটিপন্নো ভগবতো সাবক সঙ্ঘো, ঞায়পটিপন্নো ভগবতো সাবক সঙ্ঘো, সামীচিপটিপন্নো ভগবতো সাবকসঙ্ঘো, যদিদং চত্তারি পুরিসযুগানি অট্’ঠপুরিস-পুজ্ঞলা এস ভগবতো সাবকসঙ্ঘো, আহুণেয্যো, পাহুণেয্যো, দক্’খিণেয্যো, অঞ্জলি করণীয়ো, অনুত্তরং, পুঞক্’খেত্তং লোকস্’সাতি ।
বাংলা অর্থ – ভগবানের শ্রাবক সংঘ সুপ্রতিপন্ন অর্থাৎ স্রোতাপত্তি মার্গ ও ফললাভী, ভগবানের শ্রাবক সংঘ সোজাপথ প্রাপ্ত অর্থাৎ সকৃদাগামী মার্গ ও ফললাভী । ভগবানের শ্রাবক সংঘ ন্যায় প্রতিপন্ন অর্থাৎ অনাগামী মার্গ ও ফললাভী । ভগবানের শ্রাবক সংঘ সম্যক পথ প্রতিপন্ন অর্থাৎ অর্হৎ মার্গ ও ফললাভী । ভগবানের শ্রাবক সংঘ চার জোড়ায় আট প্রকার – পুদ্’গল, তারা আহবানের যোগ্য, সৎকারের যোগ্য, দক্ষিণা লাভের যোগ্য, অঞ্জলিবদ্ধ হয়ে প্রণামযোগ্য, জগতের শ্রেষ্ঠ পুণ্যক্ষেত্র ।
২/ সঙ্ঘং জীবিত- মহাপরিয়ন্তং শরণং গচ্ছামি,
যে চ সঙ্ঘা অতীতা চ, যে চ সঙ্ঘা অনাগতা,
পচ্চুপন্না চ য়ে সঙ্ঘা অহং বন্দামি সব্বদা,
নত্থি মে শরণং অঞং, সঙ্ঘো মে শরণং বরং
এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু মে জয়মঙ্গলং
উত্তমঙ্গেন বন্দেহং সঙ্ঘঞ্চ দুবিধুত্তমং
সঙ্ঘো য়ো খলিতো দোসো, সঙ্ঘো খমতু তং-মমং ।
বাংলা অর্থ – আমি আজীবন সংঘের শরণাগত হচ্ছি, যে সংঘ অতীত হয়েছে, যে সংঘ অনাগতে উৎপন্ন হবেন এবং যে সংঘ বর্তমান আছে, সে সংঘকে আমি সর্বদা বন্দনা করছি । আমার অন্য কোন শরণ নেই, সংঘই আমার শ্রেষ্ঠ শরণ, এ সত্যবাক্য দ্বারা আমার জয়মঙ্গল হোক । আমি দ্বিবিধ সংঘকে (আর্যসংঘ ও আচার আর্যসংঘ) অবনত মস্তকে বন্দনা করছি । অজ্ঞানতা বশতঃ কোন দোষ করে থাকলে সংঘ আমায় ক্ষমা করুন ।
অতএব বন্দনাদির মর্মার্থ যথাযথ অনুধাবনের মাধ্যমে প্রার্থনা করা হয়, তাহলে সকল ধর্মোপাসনা ফলপ্রসূ নিশ্চিত ।