সাহিত্য ডেস্ক:
কিংবদন্তী ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়ার জন্মদিন ৫ জানুয়ারি। বাংলা শিশুসাহিত্যে দুই সুকুমার। সু অর্থ ভালো বা সুন্দর। কুমার অর্থ পুত্র। তেমনই তারা দুজন। তারা আমাদের সাহিত্যের সুন্দরতম শাখা শিশুসাহিত্যের সুন্দর দুই রাজকুমার। একজন সুকুমার রায়, অন্যজন সুকুমার বড়ুয়া। তারা দুজনই শিশুদের আনন্দময় ও স্বপ্নের জগতে নিয়ে যান ছন্দকথার রেলগাড়িতে চড়িয়ে। তাদের নিয়ে যান কল্পনার পক্ষিরাজের ডানায় বসিয়ে অপরূপ মজার রাজ্যে।
সুকুমার বড়ুয়ার অসাধারণ ছন্দের জাদু। ছড়ার ছন্দে তিনি বিমোহিত করেন শিশু-কিশোর সহ সর্বস্তরের পাঠককে। আর শুধু ছড়া লিখেই আকাশ ছুঁয়েছেন জনপ্রিয়তায়।
কী এমন ছড়া লেখেন তিনি? তিনি লেখেন জাদুর ছড়া; যে ছড়া পড়ে পাঠক অবাক হয়ে যায়। ছোটরা হেসে গড়িয়ে পড়ে। আর আমরা যারা একটু-আধটু ছড়া লেখার চেষ্টা করি, তারা ভিরমি খাই এই ভেবে যে- এমন ছড়া কি মানুষ লিখতে পারে? কঠিন কঠিন সব সামাজিক প্রসঙ্গও তিনি এমন সহজ করে আনন্দময় ভঙ্গিতে সব বয়সীদের পাঠযোগ্য করে তোলেন, সে এক বিস্ময়!
তার ছড়ার বইয়ের নামগুলোও তাই অদ্ভুত, আর অদ্ভুত সুন্দর। যেমন- ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘ভিজে বেড়াল’, ‘ঠুসঠাস’ ইত্যাদি।
অনেক বই তার। সবই ছড়ার বই। তার কয়েকটি ছড়াসমগ্রও বেরিয়েছে— ‘১০০ ছড়া’, ‘১০১ ছড়া’ আর ‘ছড়াসমগ্র’ (দুই খণ্ড) নামে। বেরোবে আরও; কারণ তিনি যে এখনও অদ্ভুত সব ছড়া লিখেই যাচ্ছেন!
সুকুমার বড়ুয়া তাঁর লেখালেখির জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁকে ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার,, ১৯৯২ সালে ঢালী মনোয়ার স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে বৌদ্ধ একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ সম্মাননা, ১৯৯৭ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য সম্মাননা, ১৯৯৯ সালে আলাওল শিশু সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে চোখ সাহিত্য পুরস্কার, ভারত, ২০০৪ সালে স্বরকল্পন কবি সম্মাননা পদক, ২০০৬ সালে অবসর সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সুকুমার বড়ুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে। তার বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সঙ্গে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ব্যক্তিগত জীবনে সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক।
বর্ণজ্ঞান থেকে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি মামা বাড়ির স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ এরপর বড় দিদির বাড়িতে এসে তিনি ডাবুয়া খালের পাশে ‘ডাবুয়া স্কুল’ এ ভর্তি হন৷ কিন্তু সেই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটা সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম, বুট বাদাম ইত্যাদি ফেরী করে বিক্রি করেছেন৷ ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চৌষট্টি টাকা বেতনের চাকরি হয় তার৷ ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
আমাদের গবে’র ধন, দেশের প্রধান ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়ার ৮০তম জন্মদিবসে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।তিনি আরও অ-নে-ক দিন বাঁচুন। আমাদের শিশুসাহিত্যের আকাশে আমাদের প্রাণের কোনে নিবিড় প্রদীপ হয়ে জলুক। দূতি ছড়াক আমাদের সমাজ গগনে।