ইলা মুৎসুদ্দী
কুশলকর্ম কায়, বাক্য, ও মন-এই ত্রিদ্বারিক হয়ে থাকে। ‘প্রাণী হত্যা, চুরি ও ব্যভিচার হতে বিরত হব’ ইত্যাদি যখন মুখে বলতে অক্ষম হয়ে হস্তমুদ্রায় গ্রহণ করে, তখন কায়কর্ম কায় দ্বারিক হয়। যখন মুখে বলে গ্রহণ করে তখন কায়কর্ম বাক্য দ্বারিক হয়। যখন কায় এবং বাক্য বাদ দিয়ে মনে মনে গ্রহণ করে তখন মনো দ্বারিক। এভাবে অপরাপর কর্ম ও বিচার্য।
অনভিধ্যাদি দ্বারা পূজা, রাস্তা, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ ও মেরামত করে দেয়ার সময় কর্ম হয় মনোকর্ম, আর দ্বার হয় কায়দ্বার। অনভিধ্যাদি চিত্তে যখন এসব কাজে বাক্যালাপ করা হয় তখন কর্ম হয় মনোকর্ম এবং দ্বার হয় বাক্য দ্বার।
আনন্দ সুত্তে বুদ্ধ বলেন- আনন্দ ! আমি কায়-বাক-মন দুশ্চরিত কে একান্তই অকরণীয় বলছি। তা করলে ১। নিজেই অনুতপ্ত হতে হয়, ২। বিজ্ঞজন নিন্দা করেন, ৩। নিন্দনীয় কাজে দুর্নাম প্রচারিত হয়, ৪। মৃত্যুর সময়ে মোহ প্রাপ্ত হয়, এবং ৫। মৃত্যুর পর অপায় দুর্গতি প্রাপ্ত হতে হয়।
আনন্দ ! আমি কায়-বাক-মন সুচরিতকে একান্তই করণীয় বলছি। তা করলে ১। নিজেকে অনুতপ্ত হতে হয় না, ২। বিজ্ঞ কর্তৃক প্রসংশিত হয়, ৩। সুযশ-সুকীর্ত্তি-ঘোষিত হয়, ৪। সজ্ঞানে মৃত্যু হয়, এবং ৫। মৃত্যুর পর সুগতি লাভ করে।
সর্বনিম্ন সূত্তে- বুদ্ধ বলেন- ভিক্ষুগণ; মিথ্যাবাক্য পুনঃ পুনঃ উক্ত, বর্ধিত এবং তাতে অভ্যস্ত হলে উহা নরক, প্রেত ও তির্যক যোনিতে উৎপন্ন করায়। মনুষ্য লোকে তার নিম্নতম বিপাকে অকথা ব্যক্তকারী বলে দুর্ণাম প্রচারিত হয়।
কঠোর বাক্য বার বার উক্ত, বর্ধিত ও তাতে অভ্যস্ত হলে, তা নরক, প্রেত ও তির্যক লোকে উৎপত্তি ঘটায়। মনুষ্য লোকে তার নিম্নতম বিপাকে তাকে অন্যের মর্মপীড়া দায়ক বাক্য শুনতে হয়।
বৃথাবাক্য বার বার উক্ত, বর্ধিত ও অভ্যস্ত হলে তা নরক, প্রেত, তির্যক লোকে উৎপত্তি ঘটায়। মনুষ্য লোকে তার বিপাকে তৎবাক্য সকলের অগ্রহনীয় হয়।
সূত্র ঃ গল্পে গল্পে মহামঙ্গল, অনুবাদক ঃ প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো