সুলেখা বড়ুয়া
সম্যক সম্বুদ্ধের উদঘাটিত নীতিমালা তথা সদ্ধর্ম মূলত – শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা ।
শীল সমাধি ও প্রজ্ঞা ব্যতিত নির্বাণ লাভ সম্ভব নয়, তম্মধ্যে সম্যক বাক্য, সম্যক কম্ম ও সম্যক আজীব –
শীল বিশুদ্ধি, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি
সমাধি বিশুদ্ধি, সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প – প্রজ্ঞা বিশুদ্ধি
সেই হিসাবে শীল পরিপূরণে সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম ও সম্যক আজীব ব্যতিত শীল বিশুদ্ধি লাভ অসম্ভব ।
জগতে যে কেউ যে যেভাবেই শীল পালন করুক না কেন, এ তিনটি বিষয় আচরণ ব্যতিত শীল বিশুদ্ধি লাভ সম্ভব নয় ।
শীল – সমাধি – প্রজ্ঞা একটা অন্যটার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । ধরাধামে বিচরণ পথে শীল আচরণের মাধ্যমে যখন পরিপূর্ণ হয়, তখন চিত্ত ও বিশুদ্ধিতে পূর্ণতা লাভ করে । এহেন পরিপূর্ণতা লাভে কার্যকারিতায় সমাধি পূর্ণতা পায় । আর এ দুয়ের পূর্ণতায় প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়ে মানব মার্গলাভের পথে অগ্রসর হয় ।
তাই তথাগত মহাকারুণিক গৃহিদের জন্য পঞ্চনীতি স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, প্রথমে শীল আচরণের মাধ্যমে নিজেকে কিভাবে বিশুদ্ধ পথে পরিচালনা করা যায় তা অনুশীলন করতে হবে ।
প্রতিটি মানুষের জীবনে শীল পালনের গুরুত্ব অপরিসীম, কেননা, একজন মানুষের মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশে শীলের কোন বিকল্প নেই । দান করলে দানের পুণ্যফল অবশ্যই লাভ করবে । কোন না কোনজন্মে কিন্তু বিশুদ্ধভাবে শীল পালন এবং সমাধিচর্চা না করলে দুঃখ থেকে মানুষ কোনদিন মুক্ত হতে পারবেনা । জীবন হচ্ছে ক্ষণভঙ্গুর এবং ততোধিক ক্ষণভঙ্গুর এ ধারার এ দেহ । এজন্য মনুষ্য জন্মে যতদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়, প্রত্যেকটি দিন, ক্ষণ, মুহূর্ত খুবই গুরুত্ব বহন করে ।
চিন্তা করে দেখা যাক -পুর্ববর্তী দিনের সাথে আজ এবং আগামীকাল কিছুতেই মেলানো যায় না । সুতারাং মনুষ্য জন্মকে স্বার্থক রুপে মূল্যায়ন করতে হলে নিজেকে সর্বাগ্রবর্তী শীল বিশুদ্ধি আচরণে সর্বদা নিয়োজিত রাখতে হবে । শীল বিশুদ্ধি ব্যতিত যেমন, মার্গফল লাভ করা অসম্ভব, তেমনি মার্গফল লাভ না করলে দুঃখ মুক্তি সুদূর পরাহত । কারণ শীল বিশুদ্ধির মাধ্যমে সমাধিতে বিচরণ করে বিদর্শন ভাবনায় রত থাকতে পারলে নির্বাণ লাভ সম্ভব ।
চক্রবালবাসী সুখী হউক ।