এ দেশ আমার গর্ব, এ মাটি আমার চোখে সোনা
আমি করি তার জন্ম বৃত্তান্ত ঘোষণা…।
একটা সম্প্রদায়ের আত্ম পরিচয়ের প্রধান বাহন এক দিকে তার ধর্ম ও দর্শন, অন্যদিকে তার ঐতিহ্য ও চলমান বর্তমান। আমাদের এই বঙ্গীয় বদ্বীপে-গাঙ্গেয় সমতট জুড়ে মহামানব বুদ্ধ ও তাঁর দেশিত বৌদ্ধ ধর্মের বলিষ্ঠ পদচারণা এই বাঙ্গালী জাতিসত্বাকে সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে।
এদেশের বৌদ্ধদেরও রয়েছে তাঁর সুমহান ধর্ম, যুক্তিবাদি দর্শন, ঐতিহ্যময় স্বর্ণালী অতীত। বাংলার প্রাচীন রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনের সোমপুরী মহাবিহার থেকে শুরু করে কুমিল্লার ময়নামতি শালবন বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রামের পন্ডিত বিহার, উয়ারী বটেশ্বর, জগদ্দল বৌদ্ধবিহারসহ নব আবিষ্কারের ধারায় যোগ হচ্ছে একের পর এক নব নব সভ্যতার। কী পরম ভালবাসায় এমন সভ্যতার নিদর্শন আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্থাপন করেছিলেন, সেই মহাকালের কীর্তিগুলো আমাদের আজ জানান দিচ্ছে। এই বাংলায় গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল বৌদ্ধদের হাতে, সম্রাট গোপাল, মহীপাল, ধর্মপালের হাত ধরে চারশত বছর পরিচালিত হয়েছিল এই দেশ। আমাদের বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের হাতেই রচিত হয়েছিল বাংলাভাষার আদিনিদর্শন চর্যাপদ, বৌদ্ধ গানও দোঁহা। এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান, শীলভদ্র, প্রজ্ঞাভদ্রসহ প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ মহামণীষী, যাঁদের আলোয় শুধু এই দেশ নয় সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছি্লেন।
যুগ নান্দনিকতার ধারায় উপনিবেশিক শাসন পরবর্তিতে এদেশে সদ্ধর্মের আলোকবর্তিকা হাতে দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন কর্মযোগী কৃপাশরণ, বিশ্ববরেণ্য মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের, সাহিত্যানুরাগী সংঘরাজ শীলালংকার মহাথের, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথের। অখিল ভারতের সংঘনায়ক আনন্দমিত্র মহাস্থবির, সংঘরাজ রাষ্ট্রপাল মহাথেরসহ বহুখ্যাতকৃতি সংঘমণীষা ও আরো অনেকে যাঁদের অনবদ্য অবদানে ঋদ্ধ হয়েছে আমাদের চলমান বর্তমান।
সেই গৌরবগাঁথার মাঝে ‘ত্রৈমাসিক বিবর্তন’ –এর সুন্দর পথচলা এই বৌদ্ধ জাতি ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে চলেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই গৌরবোজ্জ্বল দিকগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে ‘ত্রৈমাসিক বিবর্তন’ বারেবারে তুলে ধরবে। যাতে সংখ্যালঘুর সমীকরণে আত্মবিশ্বাসের যেন ভাটা না পড়ে, সংকীর্ণতায় যেন ডুবে না যাই। ‘বিবর্তন’ হোক বৌদ্ধিক সমাজ ও জাতি গঠনে নির্ভিক, তাদের কলম হোক বলিষ্ঠ হাতিয়ার।
সবুজ বড়ুয়া শুভ
সহ-সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ যুব (WFBY), থাইল্যান্ড।
সভাপতি, নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশন, বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ যুব (WFBY)-এর বাংলাদেশ আঞ্চলিক কেন্দ্র।