1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

বুদ্ধের উদান গাথা

প্রতিবেদক
  • সময় মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ৬২৬ পঠিত

বুদ্ধের উদান গাথা

সুলেখা বড়ুয়া 

মানবপুত্র সিদ্ধার্থ কল্প কল্পান্তরের সাধনায় পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন তিনি বুদ্ধ হলেন, তখন তার অন্তর্নিহিত প্রবল আনন্দোচ্ছাস স্বতঃ উৎসারিত উদান গানে মন্ত্রিত হল সেই সুনির্জন বনভূমি –

অনেক জাতি সংসারং- সন্ধাবিসসং অনিব্বিসং, গহকারকং গবেসন্তো- দুক্ খা জাতি পুনপ্পুনং, গহকারক দিট্’ঠোসি পুসগেহংন কাহসি সব্বাতো ফাসুকা ভগ্’গা গহকুটচি সংখিতং বিসংখারং গতংসিত্তং, তনহানং খয়মজ্জগা, অথাৎ – জন্ম জন্মান্তর পথে ঘুরেছি পাইনি সন্ধান সে কোথা লুকিয়ে আছে, যে এ গৃহ করেছে নির্মাণ পুনঃ পুনঃ দুঃখ পেয়ে দেখা তব পেয়েছি এবার হে গৃহকারক গৃহ রচিতে পারিবে না আর, চুরমার করেছি স্তম্ভ গৃহ ভিত্তিচয়, সংস্কার বিগত চিত্ত, তৃঞ্চা আজি পেয়েছে ক্ষয় ।

জগতের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ মানব, তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ জ্ঞান লাভ করার পর আনন্দপূর্ণ চিত্তে যে প্রথম উদান গাথা মুখ দিয়ে বের করছিলেন, যার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নাই । তিনি যে ব্যবস্থায় গৃহ নামে শরীর বা পঞ্চস্কন্ধ তৈরির সমস্ত উপকরণ ধ্বংস করেছেন, এগৃহ, শরীর বা পঞ্চস্কন্ধ তৈরির সমস্ত উপাদান সামগ্রী উৎখাত করেছেন যার কারণে শরীর বা পঞ্চস্কন্ধ সৃষ্টি হবেনা, জন্ম হবেনা, জরা হবেনা, ব্যাধি হবেনা, মরণ হবেনা, অপ্রিয় সংযোগ হবেনা, প্রিয় বিয়োগ হবেনা, ইচ্ছিত বস্তুর অলাভ হবেনা । সংক্ষেপে পঞ্চপাদন স্কন্ধ সৃষ্টি হবেনা ।

অতঃপর খুশি হয়ে যে আসনে বোধিজ্ঞান লাভ করে জগৎপুজ্য বুদ্ধ হলেন, সে আসনে বসে আবার এক সপ্তাহ ভাবনা করলেন, তারপর বজ্রাসনের চারিপার্শ্বে বাছাই করে আরও ছয়টি জায়গায় ছয় সপ্তাহ ভাবনা করে গবেষণায় মানুষের চরিত্র সম্বন্ধে জ্ঞাত হলেন, আর ঠিক তখনই বুদ্ধের মুখে উচ্চারিত হলো দ্বিতীয় উদান গাথা –

কিচ্ছেন মে অধিগতং হলং দানি পকাসিতং রাগ দোস পরিতেহি নাযং ধম্মো সুসম্বুধো, সোত পটিকুল গামিং নিপুণং গম্ভীরং দুদ্দসং অনুং রাগ রত্তান দক্’খিন্তি তমোক্ খন্ধেন আবটা, অর্থাৎ – কষ্টে অধিগত যা প্রকাশে কি কাজ রাগ, দ্বেষ পরায়ণ মানব সমাজ, রাগ দ্বেষ অভিভূত অজ্ঞান অবোধ, এ ধর্ম তাদের নহে সুখ বোধ স্রোত প্রতিকূলগামী নিপুণ গম্ভীর দুরদর্শী অতি সুক্ষ্ম ধর্ম সুগভীর, কেমনে বুঝবে তা বাগাসত্তগণ তমোস্কন্ধে আচ্ছাদিত আবৃত নয়ন ।

ধর্মদেশনার কিংবা প্রচারের কথা চিন্তা করতেই নিরুৎসাহিত বোধ করেন তথাগত বুদ্ধ, কেননা তথাগতের ধর্মের নিগূঢ় তত্ব সাধারণ লোকে বুঝতে পারবেনা, তাদের বোঝবার বৃথা চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি নিজেই শুধু ক্লান্ত হবেন, কেন তিনি জানাতে যাবেন জগতকে সেই মহান সত্য যা তিনি বহু দুঃখে বহু সাধনায় অর্জন করেছেন, কাজ নেই এই বৃথা চেষ্টায় ।

কারণ লোভ দ্বেষ পরায়ণ মানব সমাজ, তারা অজ্ঞানী ও অবোধ, বুদ্ধের ধর্মের প্রতিকূলে তাদের বাস, এজন্য বুদ্ধের ধর্মাচারণ তাদের জন্য প্রতিকূলের ন্যায় । বুদ্ধের ভাষায় রাগাসত্ত মানে মোহগ্রস্ত ব্যক্তি । এই রাগাসত্ত গণের নয়ন অন্ধকারে আচ্ছাদিত, তাই এহেন দুরদর্শী অতিসুক্ষ্ম সুগভীর ধর্ম কিভাবে বুঝবে এ মানব সমাজ ।

এরুপ চিন্তা করে তথাগত বুদ্ধ অনৌৎসুক্যের প্রতি তাহার চিত্ত নমিত করলেন, ধর্ম দেশনার প্রতি নহে, ঠিক সে সময় সহম্পতি ব্রহ্মার আসন মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হলো, তখন ব্রহ্মার আসন কেন কম্পিত হলো তা অবলোকন করে বোধগম্য হলো, সহম্পতি ব্রহ্মা স্বচিত্তে ভগবানের চিত্তপরিবর্তক জেনে চিন্তা করলেন – অহো, বিশ্ব যে নাশ হয়ে যাবে, অহো, জগৎ যে বিনষ্ট হয়ে যাবে, তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের চিত্ত যে ধর্মপ্রচারের পরিবর্তে অনৌৎসুক্যের প্রতি নমিত হলো ।

ইহা ভেবে সহম্পতি ব্রহ্মা চোখের পলকেই ব্রহ্মলোক হতে অন্তর্হিত হয়ে তথাগত বুদ্ধের সম্মুখে আবির্ভূত হলেন এবং উত্তরীয় একাংশে স্থাপন করে দক্ষিণ জানুমণ্ডলে ভূমি স্পর্শ করে এবং কৃতাঞ্জলি হয়ে তথাগত বুদ্ধকে বললেন “প্রভু তথাগত আপনি ধম্ম উপদেশ করুন”।

দুতিয়ম্পি – তথাগত বুদ্ধ, আপনি ধম্ম উপদেশ করুন, পৃথিবীতে স্বল্পরজ জাতীয় জীব আছে, যারা ধর্ম শ্রবণ করতে না পারলে অধঃপতিত হবে, ধর্মের রসগ্রাহী শ্রোতা অবশ্যই মিলবে ।

ততিয়ম্পি – তথাগত বুদ্ধ আপনি ধম্ম উপদেশ করুন “ব্রহ্মা সহম্পতি এভাবে তিনবার প্রার্থনা করলেন” তথাগত বুদ্ধ তিনবারই প্রত্যাখান করলেন । সহম্পতি ব্রহ্মা পুনঃ প্রার্থনা করলেন । অনন্তর তথাগত বুদ্ধ ব্রহ্মার মনোভাবে বিদিত হয়ে সর্ব্ব সত্তের প্রতি করুণা বশতঃ বুদ্ধ ক্ষেত্রে বিশ্ব অবলোকন করতে গিয়ে দেখতে পারলেন জীবের মধ্যে কেহ কেহ স্বল্পরজ, কেউ কেউ মহারজ, কেউ কেউ তীক্ষ্ণ ইন্দ্রিয়, কেহ বা মৃদু-ইন্দ্রিয়, কেহ সুবোধ, কেহ অবোধ, কেহ কেহ পরলোক ও পাপভরদর্শী হয়ে অবস্থান করে । তাহা অবলোকন করে তথাগত বুদ্ধ সহম্পতি ব্রহ্মাকে বললেন “যে অমৃতের বা নির্বাণের দ্বার উদঘাটিত হয়েছে, তা যারা শুনতে চায় বা আচরণ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তথাগত বুদ্ধ ধর্ম প্রচার করবেন । তথাগত বুদ্ধ ধর্ম প্রচার করবেন বলে সম্মতি দিতেছেন জেনে ব্রহ্মা সহম্পতি তথাগত বুদ্ধকে অভিবাদন পুর্ব্বক তথা হতে অন্তুর্হিত হলেন ।

সহম্পতি ব্রহ্মা থেকে প্রথম শিক্ষা পেয়েছি যখন প্রার্থনা করি তিনবার যেমন – দুতিয়ম্পি এবং ততিয়ম্পি ।

জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক ।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!